E-Paper

হাসপাতালে আসছেন রোগী, সঙ্গী তাঁর পাখা

সোমবার সকালে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বিভাগের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত দু’টি কেবিনে ১২টি করে ২৪টি শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৪৩
বাড়ি থেকে পাখা আনতে হচ্ছে রামপুরহাট মেডিক্যালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের।

বাড়ি থেকে পাখা আনতে হচ্ছে রামপুরহাট মেডিক্যালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের। —নিজস্ব চিত্র।

মেঝেতে শুয়ে রোগী। পাশে মাথার কাছে চলছে তাঁরই বাড়ি থেকে আনা বিদ্যুতের পাখা। একই অবস্থা শয্যায় শুয়ে থাকা রোগীদেরও। তাঁদেরও অনেকে বাড়ি থেকে পাখা অনেছেন। কেউ আবার নগদ টাকা গিয়ে পাখা ভাড়া করেছেন।

রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি শাখার মেডিসিন বিভাগে ঘুরলে এমন ছবি চোখে পড়বে। দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ডের দু’টি কেবিনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র খারাপ। অথচ এখনও পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থা করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যাঁদের বাড়ি থেকে পাখা আনার বা ভাড়া করার সামর্থ্য নেই, তাঁরা হাতপাখাকে সম্বল করেছেন।

রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দীর্ঘদিনের এই অব্যবস্থার কথা হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার কাম ভাইস প্রিন্সিপাল (এমএসভিপি) পলাশ দাস অবশ্য জানেনই না। তিনি বলেন, ‘‘সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের এমন অব্যবস্থার কথা তো ওই ভবনের সহকারী সুপার জানাননি। এমনকি, ভবনের মেডিসিন বিভাগের কর্মরত সিস্টাররাও কোনও রিপোর্ট দেননি।’’ এমএসভিপি খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

অন্য দিকে, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সহকারী সুপার সুস্মিতা পণ্ডিতকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর জবাব, ‘‘আমি হাসপাতালের মুখপাত্র নই। এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’’ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের বাড়ি থেকে বিদ্যুতের পাখা আনতে হচ্ছে? সহকারী সুপারের থেকে উত্তর মেলেনি এই প্রশ্নের।

সোমবার সকালে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বিভাগের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত দু’টি কেবিনে ১২টি করে ২৪টি শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছেন। এ ছাড়া, দু’টি কেবিনের মেঝেতে এবং কেবিনের বাইরে মেঝেতে আরও দশ জন রোগী চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই বয়স্ক এবং শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত। রোগীদের আত্মীয় পরিজনদের অনেকের দাবি, ‘‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বিকল। বিদ্যুতের পাখার ব্যবস্থা নেই কেবিনে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আমাদেরই বাড়ি থেকে পাখা এনে চালাতে হচ্ছে। যাঁদের সে সামর্থ্য নেই, তাঁরা হাত পাখায় কাজ চালাচ্ছেন।’’

শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের উপসর্গ নিয়ে শনিবার ওই ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন মাড়গ্রামের বাসিন্দা সুকুমার মণ্ডল। তাঁকেও বাড়ি থেকে পাখা আনতে হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন মুর্শিদাবাদ জেলার সুতির গোকুলপুরের বাসিন্দা বাণী ইসরাইলের জন্য পাখা ভাড়া করেছেন তাঁর পরিবার। তার জন্য রোজ গুণতে হচ্ছে ১০০ টাকা। কেবিনের বাইরে শয্যায় শুয়ে থাকা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত রামপুরহাটের জয়কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা মিঠুন শেখের জন্য বাড়ি থেকে পাথা এনেছেন তাঁর পরিবার।

এ দিনই সকালে বীরভূম জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ নাগরচন্দ্র কোনাই রামপুরহাট মেডিক্যাল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের পরিবেশ অত্যন্ত জঘন্য। যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে রয়েছে। রোগীদের জন্য পরিবার
বাড়ি থেকে পাখা আনছে। এতে বোঝা যায় পরিষেবার হাল কোন পর্যায়ে।’’ সঙ্গে যোগ করেন:‘‘হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিষেবার অব্যবস্থার অভিযোগ নিয়ে যতদূর যেতে হয়
যাব। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে যেতেও রাজি।’’

আগে তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়, বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখও রামপুরহাট মেডিক্যালের পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rampurhat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy