Advertisement
E-Paper

বিকাশের গলায় কোপ দেখেই ধাঁ গৌরাঙ্গ

এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না বড়জুড়ি গ্রামের। বিশ্বাস হচ্ছে না, মা কী ভাবে ছেলেকে প্রেমিকের হাতে খুন হতে দেখেও চুপ থাকলেন! কী ভাবেই ছেলের দেহ ফেলে প্রেমিকের সঙ্গে গা ঢাকা দিলেন।অথচ বছর তেত্রিশের বসমাতা বাউরির ব্যবহার যে খুব খারাপ ছিল তা নয়।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫১
শোক: নিজের বাড়িতে নিহত কিশোরের ঠাকুমা। নিজস্ব চিত্র

শোক: নিজের বাড়িতে নিহত কিশোরের ঠাকুমা। নিজস্ব চিত্র

এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না বড়জুড়ি গ্রামের। বিশ্বাস হচ্ছে না, মা কী ভাবে ছেলেকে প্রেমিকের হাতে খুন হতে দেখেও চুপ থাকলেন! কী ভাবেই ছেলের দেহ ফেলে প্রেমিকের সঙ্গে গা ঢাকা দিলেন।

অথচ বছর তেত্রিশের বসমাতা বাউরির ব্যবহার যে খুব খারাপ ছিল তা নয়। গ্রামের লোক জানাচ্ছেন, ওই বধূ নিজের ছেলেকে যেমন ভালবাসতেন, পড়শি বাচ্চাদেরও বাড়িতে ডেকে এনে জলখাবার খাওয়াতেন। পড়শিদের সঙ্গে গল্পগুজবও করতেন ফাঁকা সময়ে। ইউক্যালিপটাসের জঙ্গলের মাঝে ছোট্ট গ্রাম বড়জুড়ির চালিবাড়িডি এলাকায় বৃহস্পতিবার দিনভর তাই বসমাতাকে নিয়েই আলোচনা চলেছে। গ্রামে সাকুল্যে পনেরোটি পরিবারের বাস। একটিও পাকা বাড়ি নেই। গ্রামবাসীদের বেশির ভাগই দিনমজুরি করে সংসার চালান। এই গ্রামেই মা বসমাতাকে তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে পালানো থেকে আটকাতে গিয়ে খুন হতে হয়েছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র বিকাশ বাউরিকে (১২)। ঘটনার পরে অভিযুক্ত প্রেমিক উত্তম বাউরির সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছেন বসমাতা।

ঘটনার তদন্তে দিনভর গঙ্গাজলঘাটি থানার পুলিশ আধিকারিকেরা ভিড় করেছিলেন গ্রামে। কথা বলেছেন পড়শিদের সঙ্গে। ওই গ্রামের বধূ বন্দনা বাউরি বললেন, “বুধবার রাতে এমন ভয়ঙ্কর কাণ্ড হয়ে গিয়েছে, অথচ আমরা কিচ্ছুটি টের পাইনি। বসমাতা যে এমন কাজ করতে পারে, তা আমরা ভাবতেই পারছি না। নিজের ছেলেকে যেমন ভালবাসত, তেমনই আমাদের ছেলেরাও ওর বাড়ি গেলে না খাইয়ে ছাড়ত না।’’ বড়জুড়ি গ্রামের যুবক সুবোধ বাউরির কথায়, “ছোট্ট গ্রাম। এই ক’টা লোকের বাস। সবার মধ্যে ভাল সম্পর্ক। এখানে যে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, কখনও ভাবিনি।’’

গ্রামের প্রবীণ ভৈরব বাউরি জানালেন, এ দিন সকালেই পুকুর পাড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, রাস্তার পাশে ঝোপের মধ্যে বিকাশের দেহ পড়েছিল বলে তাঁর নজরে আসেনি। পরে লোক মুখে শুনে ছুটে দেখতে যান। তাঁর কথায়, “ছেলেটা খুবই হাসিখুশি ছিল। গোটা গ্রাম দৌড়ে বেড়াতো বন্ধুদের সঙ্গে। সেই ছেলেকে কিনা এ ভাবে খুন হতে হল!’’

ঘটনার জোর চর্চা শুরু হয়েছে চালিবাড়িডি থেকে আধ কিলোমিটারের দূরের বড়জুড়ির বনপাড়াতেও। বিকাশের বাবা অজিত বাউরির আসল বাড়ি এই গ্রামেই। গ্রামে এখনও তাঁর দাদা পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। গোটা ঘটনাটি নিজের চোখে দেখেছে অজিতবাবুর দাদার ছেলে গৌরাঙ্গ। বনপাড়ায় নিজের বাড়ি সংলগ্ন একটি ক্লাবঘরে বসেছিল সে। চোখে মুখে তখনও আতঙ্কের ছাপ। বলল, “ওই লোকটা (উত্তম) কাকিমাকে নিয়ে পালাতে চেয়েছিল। কিন্তু, বিকাশ কোনও মতেই মাকে যেতে দেবে না বলে জেদ ধরে বসে। দু’জনের মধ্যে কথাকাটাকাটি চলার মাঝেই বিকাশের গলায় কাটারির কোপ মারে লোকটা। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই।’’

সে জানায় সারা রাত গ্রামের জঙ্গলে ও ক্রাশারের (পাথর ভাঙা কল) ডিপোয় লুকিয়ে বেড়িয়েছে সে। ভোর রাতে ওই গ্রামেরই এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ওঠে। ওই পরিবারকে সব কথা খুলে বলে সে। সব জেনে গ্রামবাসীরা বেরিয়ে পড়েন বিকাশের খোঁজে। বাঁধের পাড়ে তার দেহ মেলে। বড় নাতিকে এ ভাবে হারিয়ে ঠাকুমা যামিনী বাউরি শোকস্তব্ধ। এ দিন মাটিতে বসে কাঁদছিলেন। বারবার বলছিলেন, “রাতে গভীর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কখন যে এত বড় কাণ্ড হয়ে গেল, কিছু বুঝতেই পারলাম না!”

Muder Son Mother
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy