Advertisement
২৬ অক্টোবর ২০২৪

রাতের লাইন লম্বা হয়ে এক কিমি

বছরের প্রথম দিনেও ছবিটা বদলাল না। সেই লম্বা লাইন। সেই উদ্বেগ ঘেরা মুখচোখ।

মুরারই ১ ব্লকের ডাকঘর থেকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা পেরিয়ে বেগুনমোড়ের কাছে পৌঁছেছে লাইন। মঙ্গলবার সকালে। নিজস্ব চিত্র

মুরারই ১ ব্লকের ডাকঘর থেকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা পেরিয়ে বেগুনমোড়ের কাছে পৌঁছেছে লাইন। মঙ্গলবার সকালে। নিজস্ব চিত্র

তন্ময় দত্ত 
মুরারই শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:২১
Share: Save:

বছরের প্রথম দিনেও ছবিটা বদলাল না। সেই লম্বা লাইন। সেই উদ্বেগ ঘেরা মুখচোখ। নিজেদের নাগরিক প্রমাণের মরিয়া চেষ্টায় গভীর রাত থেকে লাইনে দাঁড়ানো। এবং দুর্ভোগের শিকার হওয়া।

বুধবার মুরারইয়ে তেমনই লাইন পড়ল প্রায় এক কিলোমিটার। মুরারই ১ ব্লকের ডাকঘর থেকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা পেরিয়েয়ে বেগুনমোড়ের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌছে গেল সেই লাইন। ডাকঘর আগে থেকেই ঘোষণা করেছিল, ১ জানুয়ারি আধার কার্ডের সংশোধন ও নতুন তৈরি করা হবে। বছরের প্রথম দিন সকলে মিলে আনন্দ করা ভুলে, পিকনিকের মজা নেওয়া ছেড়ে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে মঙ্গলবার রাত আটটা থেকেই মুরারই ডাকঘরের সামনে লাইন দিতে শুরু করেন কাতারে কাতারে সাধারণ মানুষ। ছেলে-বুড়ো-বাচ্চা-মহিলা কে নেই সেই লাইনে!

কেউ খড়, কম্বল রাস্তায় পেতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন, আবার অনেকে স্রেফ দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের অধিকাংশই দাবি করলেন, তাঁরা মরিয়া হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির ( এনআরসি) ভয়ে। ঘড়ির কাঁটা যত ঘুরছে লাইনও বাড়ছে, রাত ২টো নাগাদই সেই লাইন পোঁছে যায় মুরারই ১ ব্লক অফিসের সামনে। ভোর হতে হতে লাইন হাইস্কুলের গেটে ঠেকে যায়। লাইনের মধ্যে তখন কোলের শিশু, মহিলা ও বয়স্কেরাও। রাত থেকে ঠান্ডাও পড়েছিল জব্বর। আনুমানিক ৭ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল তাপমাত্রা। খোলা আকাশের নীচে শিশির পড়া রাতে সোয়েদার, কম্বল, চাদর মুড়ি দিয়ে রাত কাটালেন অন্তত হাজার পাঁচেক মানুষ।

কিন্তু, এতো মানুষের তো এক দিনে আধার কার্ডের কাজ করা যাবে না! সেটা যে জানতেন না, লাইনে দাঁড়ানো লোকজন, তা নয়। তবু, যদি কাজ হয়, সেই আশায় ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন প্রত্যেকে। বুধবার দুপুর ২টোয় সিদ্ধান্ত হয়, এ দিন পাঁচশো জনের বেশি নাম লেখানো যাবে না। বাকিরা নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন।

লাইনে দাঁড়ানো অনেকের বক্তব্য, ‘‘এনআরসি, সিএএ হোক বা না হোক, আমি আমার নথি ঠিক রাখব।’’ আবার অনেকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে পাঁচটি আধার কেন্দ্র দেওয়া হোক মুরারই বিধানসভা এলাকায়। ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন শেখ এ দিন বলছিলেন, ‘‘আমি গ্রাম থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটায় বেরিয়েছি। আমাদের পরিবারে ৮ জন সদস্য। আমার ও ভাইয়ের ছোট চারটি বাচ্চা আছে। আমার ও বউয়ের ভুল কার্ড এসেছে। যখন সংশোধন করতে হবে, বাচ্চাদের নামও তুলে দেবে— এই ভেবে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি।’’ তাঁর আরও ক্ষোভ, ‘‘প্রায় আট মাস ধরে আমি ঘুরছি। তাই বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে রাত থেকে বসে আছি। কেন্দ্রীয় সরকারের এই আইনের ফলে সাধারণ মানুষ ভুগছেন।’’

মুরারইয়ের বাসিন্দা আশরফ আলি বলেন, ‘‘আমি সেই নোটবন্দির সময়ও এত বড় লাইন দেখিনি! সিএএ এবং এনআরসির আতঙ্কে আজ সকলেই দিশেহারা।’’ স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, ‘‘এক দিকে

আধার কার্ড, অন্য দিকে ভোটার কার্ডের সংশোধন। সঙ্গে রেশন কার্ড, জমির পরচা ও দলিল নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। কাজকর্ম লাটে উঠেছে। মানুষ নিজের সংসার চালাবে না নথি ঠিক করবে!’’ ডাকঘর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন নাম নথিভুক্ত করা হল। পর পর ফোনে ডেকে আধার কার্ড সংশোধনীর কাজ চলবে। এক দিনে ৩০ জনের আধার কার্ডের কাজ হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Queue Murarai AADHAR Card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE