Advertisement
E-Paper

বাড়ন্ত তেষ্টার জল, সঙ্কট বোলপুরে

পানীয় জলের দাবিতে পুরুলিয়ায় গত দু’দিন, সোম ও মঙ্গলবার দু’বার জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তেষ্টার জল নিয়ে হাহাকার চলছে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়। এ বার পর্যাপ্ত পানীয় জল সরবরাহের দাবি উঠল বোলপুরেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০০:১৯
জলের লাইনে। বোলপুরের ভুবনডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

জলের লাইনে। বোলপুরের ভুবনডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

পানীয় জলের দাবিতে পুরুলিয়ায় গত দু’দিন, সোম ও মঙ্গলবার দু’বার জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তেষ্টার জল নিয়ে হাহাকার চলছে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়। এ বার পর্যাপ্ত পানীয় জল সরবরাহের দাবি উঠল বোলপুরেও।

এমনিতে পানীয় জল নিয়ে বছরভর ক্ষোভ থাকে পুরবাসীর। গরম পড়লেই সেই সমস্যা তীব্র হয়। চেনা সমস্যা ফিরে এসেছে এ বারও। বোলপুর পুরসভার মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ২০। পুরবাসীর অভিযোগ, কম-বেশি প্রায় সব ওয়ার্ডেই রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। বাড়ির ব্যক্তিগত সংযোগে যেমন জল কম, তেমনই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ব্যবহারের জন্য টাইম কলেও এই সমস্যা। জলের সমস্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের ওপারের ওয়ার্ডগুলিতে।

অনেকের আবার অভিযোগ, ভোটের আগে পাড়ায় পাড়ায় পুরসভার গাড়ি ঘুরে নিয়মিত জল দিলেও ভোট মিটতেই জলের গাড়ি দেখা মিলছে না! পুরসভা অবশ্য অভিযোগ মানতে চায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১ নম্বর ওয়ার্ডের মকরমপুর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিশন কম্পাউন্ড, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভুবনডাঙা, ১৩ নম্বরের ওয়ার্ডের ডাঙালি কালিতলা, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের খাসপাড়া এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পঞ্চমীতলায় জলসঙ্কট শুরু হয়েছে।

মকরমপুর এলাকার বাসিন্দা মউ দাস, সন্তোষ সাহানি, বিনালক্ষ্মী প্রেমরা জানাচ্ছেন, টাইম কলে দিনে তিন বার সময় মেনে জল আসে। কিন্তু ওই কলের উপরে বহু মানুষ নির্ভরশীল। ফলে দীর্ঘ লাইন পড়ে। কখনও কখনও জলের গতি খুব কম থাকে। মউয়ের কথায়, ‘‘সরু সুতোর মতো জল পড়ে। বালতি ভরতেই প্রচুর সময় লেগে যায়।’’ এলাকায় গভীর নলকূপ তৈরির দাবি রেখেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে উঠছে সমস্যার স্থায়ী সামাধানের দাবিও।

পুর এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে ২০০০ সালে বোলপুরে শুরু হয় ইন্দো-জার্মান জল প্রকল্প। সে সময় প্রায় ৬৬ হাজার বাসিন্দার জন্য প্রায় ৫ হাজার সংযোগ দেওয়া হয়। গত পনেরো বছরে জনসংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। বেড়েছে অফিস, বাজার, দোকান। ২০১১ জনগণনা অনুযায়ী পুর এলাকায় ৮১ হাজারের কিছু বেশি বাসিন্দা রয়েছেন। ইতিমধ্যেই সেই সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়েছে। চাহিদা আর জোগান নিয়ে দ্বন্দ্ব বেধেছে সেখানেই।

জল সমস্যার মোকাবিলায় এক সময় বোলপুর লাগোয়া অজয় নদে এবং শান্তিনিকেতন সংলগ্ন কোপাই নদীতে পানীয় জলের বিকল্প উৎস খোঁজার ভাবনা চিন্তা করেছিল পুরসভা ও পঞ্চায়েত প্রশাসন। এলাকার জনপ্রতিনিধি, পঞ্চায়েত সমিতি, পুরসভা ও স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠকও হয়। কিন্তু, কাজ বিশেষ এগোয়নি বলে অভিযোগ।

বোলপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস নেতা তপন সাহার অভিযোগ, ‘‘জল সমস্যার মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি কোনও ব্যবস্থা নেননি পুর কর্তৃপক্ষ।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মান্ধাতা আমলের পরিকাঠামো নিয়েই কোনও মতে পানীয় জলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দিচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ এক কথায় উড়িয়ে না দিয়ে এক পুরকর্তা বলছেন, ‘‘পরিকাঠামোর সমস্যা আঠে ঠিকই। তারপরেও সীমিত ক্ষমতার মধ্যে চেষ্টা করছি।’’

কিন্তু, জল সমস্যার স্থায়ী সমাধান কবে হবে? প্রশ্নের মুখে শুধুই আশ্বাসের কথা শুনিয়েছেন বোলপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, “ভোটের জন্য পাড়ায় পাড়ায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করার অভিযোগ সঠিক নয়। যে সমস্ত এলাকায় জলের সমস্যা থাকে, সেখানে জল দেয় পুরসভা।’’ আর আশ্বস্থ করছেন এই বলে, ‘‘জার্মান জল প্রকল্প ছাড়াও, আমরা পানীয় জলের দুটি বিকল্প ব্যবস্থা করছি। আশা করছি জল দ্রুত সমাধান হবে।”

summe bolpur water hot weather
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy