Advertisement
E-Paper

অচল নোটে বেসামাল হাট

সচল নোট ব্যাঙ্ক বা এটিএম থেকে পেলেন না অনেকেই। লোকজনের হাত খালি হওয়ায় ব্যবসা-বািণজ্য প্রায় লাটে ওঠার জোগাড়। এই দুর্ভোগেও কিছু সহৃদয় মানুষের ছবি পাওয়া গেল রবিবার। দিনভর যা দেখা গেল, তুলে ধরল আনন্দবাজার।নোট বাতিলের ছায়া পড়ল স্থানীয় গ্রাম-গঞ্জের হাটগুলিতেও। শুক্রবার মানবাজার থানার পাথরকাটায় এবং শনিবার বান্দোয়ান থানার পোড়াডিতে পশুপাখির হাট ছিল।

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০০:১৬
ইটচাপা-নাম। ঝালদার একটি ব্যাঙ্কের সামনে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ইটচাপা-নাম। ঝালদার একটি ব্যাঙ্কের সামনে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ছায়া হাটে

নোট বাতিলের ছায়া পড়ল স্থানীয় গ্রাম-গঞ্জের হাটগুলিতেও। শুক্রবার মানবাজার থানার পাথরকাটায় এবং শনিবার বান্দোয়ান থানার পোড়াডিতে পশুপাখির হাট ছিল। পোড়াডি হাট কমিটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘ফি সপ্তাহে কেনাবেচা বাবদ কমিটির হাতে শুল্ক বাবদ যে টাকা আসত, শনিবার তিন ভাগের এক ভাগও ওঠেনি।’’ তিনি জানান, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার জেরে কেনাবেচা থমকে গিয়েছে। কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘এক জোড়া ভাল বলদের দাম ৬০-৭০ হাজার টাকা। কারও কাছে নগদ এত পরিমাণ ১০০ টাকার নোট থাকে না। হাটে চেক বা ড্রাফটের কারবারও চলে না।’’ মানবাজার হাট ব্যবসায়ীর অন্যতম কর্মকর্তা রাধেশ্যাম বাউরি বলেন, ‘‘পাথরকাটা হাটে এই সপ্তাহে কিছু মুরগি, ছাগল ও ভেড়া বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ১০০ টাকার নোট না থাকায় হালের বলদ, গরু কেনাবেচা একেবারেই হয়নি। এই দুর্ভোগ কতদিন ধরে চলবে কে জানে!’’

লিঙ্ক ফেল

আগের তিন দিন কোনও শাখা থেকেই বাতিল টাকা বদলানোর সুযোগ মেলেনি। তোলা যায়নি টাকাও। এরই মধ্যে রবিবার ঝালদায় রটে গিয়েছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা এসেছে। সেই আশায় এ দিন বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে সকাল থেকেই লম্বা লাইন পড়ে যায়। এ দিকে, ব্যাঙ্ক খোলার পরেও লাইন আর এগোয় না। কী ব্যাপার? ভিচর থেকে লাইন ধরে খবর এল— লিঙ্ক নেই! সকাল থেকে লিঙ্ক ফেরার আশায় হাপিত্যেশ করে বসে থেকে দুপুরে আশা ছাড়লেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে ঝালদার বাসিন্দা মধু কৈবর্ত, গোপালপুরের বাসিন্দা রুইদাস মাহাতোদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কতক্ষণ আর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকব?’’ ঝালদার বাসিন্দা স্বপন চক্রবর্তী বললেন, ‘‘জমা দেব বলে টাকা নিয়ে এক ব্যাঙ্ক থেকে আর এক ব্যাঙ্কে ঘুরে বেরাচ্ছি। কোথাও লিঙ্ক নেই।’’

আর কতদিন

ভোগান্তি আর ক’দিন? প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। কেন্দ্রের নির্দেশ মতো রবিবার বাঁকুড়া জেলার প্রায় সব ব্যাঙ্ক খোলা থাকলেও এটিএমের চিত্র ছিল একই। বাঁকুড়ার পাঠকপাড়ার বাসিন্দা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরের বেশিরভাগ এটিএম খোলাই হয়নি। যে গুলি খোলা ছিল সেগুলি এ দিন ‘আউট অফ অর্ডার’ থাকায় টাকা তোলা যায়নি। দিনভর ঘুরেও টাকা পেলাম না।’’ বিষ্ণুপুর শহরের সাহাপাড়া লাগোয়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম ছাড়া এই শহরেরও বেশিরভাগ এটিএমই এ দিন কাজ করেনি। এ দিন সকাল থেকেও ব্যাঙ্কগুলিতে বাতিল হওয়া বড় নোট জমা দেওয়ার লম্বা লাইন ছিল দিনভর। ভিড় সামলাতে হিমশিম খান পুলিশ কর্মীরাও। শহরের প্রবীণ বাসিন্দা পান্নালাল হাজরা বলেন, “শহরের সব এটিএম চালু হলে মানুষ কিছুটা রক্ষা পাবে। ভিড় কমবে ব্যাঙ্কগুলিরও। আমি ব্যাঙ্কে গিয়েও টাকা পায়নি। আর কতদিন চলবে এই হয়রানি?’’

পাশে আছি

পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে রবিবার সকাল থেকেই লম্বা লাইন। বেলা বাড়তে লাইনও বাড়ছে। রোদ মাথায় অনেকেরই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। কারও তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ। পিছনের লোককে লাইন দেখতে বলে দোকান থেকে জলের বোতলও কিনে নিয়ে আসছেন কেউ কেউ। অবস্থা দেখে পাশে দাঁড়ালেন লাগোয়া একটি শপিংমলের কর্মীরা। শুতৃষ্ণার্তদের হাতে এগিয়ে দিলেন জল ও শরবতের গ্লাস। সঙ্গে হালকা স্ন্যাক্সসও। এই শপিংমলের ম্যানেজার শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দেখছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষগুলো কষ্ট পাচ্ছেন। তাই আমরা তাঁদের পাশে একটু দাঁড়ালাম।’’ লাইনে দাঁড়ানো পুরুলিয়া ২ ব্লকের বিবেকানন্দ নগরের বাসিন্দা শ্যামল মণ্ডল, পুরুলিয়া শহরের রাঘবপুর এলাকার বাসিন্দা প্রীতম বাউরি-সহ অনেকেই এই হঠাৎ আতিথ্য পেয়ে তাজ্জব। তাঁরা বলেন, ‘‘লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পানীয় জলটুকুই অনেক।’’

মানবিক পুলিশ

বিকেল পাঁচটা। মানবাজার থানার সামনে একটি ব্যাঙ্কে তখনও লম্বা লাইন। ব্যাঙ্কের বারান্দায় বসে এক বৃদ্ধা চোখে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদছিলেন। টাকা খোয়া গেল নাকি? লাইনের তদারকিতে থাকা এক পুলিশ কর্মী ও এক আধিকারিক ছুটে এলেন। জানা গেল, বৃদ্ধার কাছে দু’টি পাঁচশো টাকার নোট রয়েছে। কিন্তু ওই টাকার ভাঙানি না হওয়ায় সকাল থেকে তাঁর কিছু খাবার জোটেনি। এ দিকে তাঁকে লাইন ভেঙে সামনেও নিয়ে যাওয়া যায় না। অনেকেই যে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে। শেষ অবধি পুলিশ কর্মী ও আধিকারিকেরা নিজেদের পকেট থেকেই টাকা বের করে বৃদ্ধার হাতে ভাঙানি তুলে দিলেন।

অচল বুঝি

বহু মানুষ টাকা পাননি। অনেকে আবার টাকা পেয়েও সমস্যায়। দিনভর লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে শনিবার সন্ধ্যায় কোনও মতে একটি ব্যাঙ্ক থেকে চার হাজার টাকা তুলতে পেরেছিলেন বাঁকুড়ার জুনবেদিয়ার বাসিন্দা অতনু নন্দী। তবে ব্যাঙ্ক থেকে তাঁকে দু’টি ২০০০ টাকার নোট ধরিয়ে দেয়। খু্চরো চেয়েও তিনি পাননি। বড় নোট নিয়ে বাজারে ভাঙাতে না পেরে এখন ফ্যাসাদে পড়েছেন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, “কোথাও খুচরো পাচ্ছি না। টাকা তুলে আমার কী লাভ হল? অচল নোটের মতোই দু’টি দু’হাজার টাকার নোট আমার মানিব্যাগ ভারী করে রয়েছে মাত্র।”

বে-লাইন

এক যুবককে রোজই নাকি ব্যাঙ্কে লাইন দিতে দেখা যাচ্ছে। এমনই সন্দেহ হওয়ায় রবিবার সকালে বরাবাজারের একটি ব্যাঙ্কের সামনে জোর জটলা শুরু হয়ে যায়। কয়েকজন ওই যুবককে চেপে ধরে জেরা শুরু করেন। প্রথমে একটু চোটপাট করলেও জটলা বাড়তে দেখে তিনি মিইয়ে যান। পুলিশের খোঁজ শুরু হতেই হঠাৎ লোকজনের ফাঁক গলে চম্পট দেন সেই যুবক। স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েকদিন ধরেই এলাকার কিছু ইটভাটা ও তেলকলের ব্যবসায়ী থেকে ইমারতের সরঞ্জাম ব্যবসায়ীদের হয়ে কয়েকজন যুবক ব্যাঙ্কে টাকা বদল করে বেরাচ্ছেন। সকালে এক ব্যাঙ্কে লাইন দেওয়ার পরে, দুপুরে তাঁদের দেখা যায় অন্য ব্যাঙ্কে। টাকা বদল করে দেওয়ার জন্য মিলছে কমিশনও।

Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy