Advertisement
E-Paper

পুজো করেও পড়ার খরচ তুলবে শোভন

পুলকবাবু বলেন, ‘‘আমি মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা করতে পারিনি। ছেলেকে পড়ানোর খুব ইচ্ছা। জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৮ ০১:০৭
প্রত্যয়ী: শোভন চক্রবর্তী।

প্রত্যয়ী: শোভন চক্রবর্তী।

রাজ্য বা জেলার মেধাতালিকায় তাদের কারও নাম নেই। কিন্তু আর্থিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এ বারের মাধ্যমিকে সফল হয়েছে তারা। তাতেই খুশি স্কুল ও পরিবারের সকলে।

বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের ছাত্র শোভন চক্রবর্তী এ বারে স্কুল থেকে সর্বোচ্চ নম্বর (৫২৬) পেয়েছে। বাবা পুলক চক্রবর্তী মুড়ি তৈরির কারখানায় সামান্য বেতনের চাকরি আর বাড়ি বা়ড়ি পুজো করে সংসার চালান। মা রূপালীদেবী গৃহবধূ। অঙ্কে ৮৩, ভৌতবিজ্ঞানে ৮১ এবং জীবনবিজ্ঞানে ৭৬ পাওয়া শোভন বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনটন। পুলকবাবু বলেন, ‘‘আমি মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা করতে পারিনি। ছেলেকে পড়ানোর খুব ইচ্ছা। জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে।’’

শোভন জানায়, সম্প্রতি উপনয়ন হয়েছে তার। মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পর ছুটির সময়ে সূর্যমন্ত্র, নারায়ণমন্ত্র সহ আরও কিছু মন্ত্র মুখস্ত করেছে। এ বার নিজেই পুজো করতে বের হবে। সেখান থেকে যত টাকা পাবে, তা দিয়েই পড়াশোনা চালাবে।

মাধ্যমিকের সময় প্রতিবেশী, পরিজন, স্কুল থেকে বই, সহায়িকা নিয়ে পড়াশোনা করেছে শোভন। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ার ইচ্ছে, তাই জোর দিয়েছিল ওই তিনটে বিষয়েই। কিন্তু ইংরেজির নম্বর কম পাওয়ায় মন খারাপ শোভনের। সে জানায়, উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজিতেও জোর দেবে সে। ভবিষ্যতে শিক্ষক হয়ে জীবন থেকে যে শিক্ষা নিচ্ছে, সেই পাঠই দিতে চায়। পড়াশোনা ছাড়াও ক্রিকেট খেলতে ভালবাসে শোভন।

বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপনকুমার ঘোষ জানালেন, আর্থিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শোভন পড়াশোনায় বরাবরই মনোযোগী। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবসময় পাশে থেকেছে। তবে সেই স্কুলের পড়ুয়াদের বেশির ভাগই তপসিলি জনজাতি ও প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। সাধারণ পড়ুয়া যারা আছে, তারাও নিম্নবিত্ত পরিবারের। তাই সবাইকে প্রয়োজন মতো আর্থিক সাহায্য করার উপায় নেই। তিনি বলেন, ‘‘কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যদি শোভনের পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়, তা হলে ওর ভবিষ্যত সুনিশ্চিত হবে।’’

শোভনের মতোই বাঁধগোড়া কালীকৃষ্ণ বিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া রুদ্রনাথ হাজরা (৬৩৩), ওই স্কুলেরই ছাত্র অরুণ হাজরা (৪৯৫), শ্রীনন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের শুভাশিস চট্টোপাধ্যায় (৪৪৭), বোলপুর বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের মানিক দাস (৪২০) আর্থিক অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করে ভাল ফল করেছে মাধ্যমিকে। কিন্তু তাদের একটাই চিন্তা, এর পর কী হবে।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও মাধ্যমিক পাস করেছে বোলপুরের দুই পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার দিনগুলিতে বাবার কোলে চেপে পরীক্ষা দিতে গিয়েছে তারা। গোয়ালপাড়া তনয়েন্দ্র বিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রীতিলতা চৌধুরী বিরল নার্ভের রোগে আক্রান্ত ছোট থেকেই। চায়ের দোকান বাবা পরেশ চৌধুরীর। দোকান বন্ধ রেখে কোলে করে মেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছেছেন। মেয়ে পাস করায় সাফল্যের হাসি তাঁর মুখেও। বোলপুর নীচুপটি নীরদ বরণী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুল হকও হাঁটাচলায় অক্ষম। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎই তার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। আসল রোগও এখনও ধরা পড়েনি। মনের জোর ছিল। সেই জোরেই বাবা শেখ আইনুল হকের কোলে চেপে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার সফলতার সাথে জীবনের পরীক্ষাতেও সফল তারা। প্রীতিলতা ও নাজিমুলের সাফল্যে খুশি স্কুলও।

Madhyamik result 2018 WBBSE মাধ্যমিক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy