Advertisement
E-Paper

ভাটি খুঁজতে গিয়ে হদিস কারখানারই

অবৈধ ভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ আগেও অনেক বার উঠেছে। শান্তিপুরে বিষমদে মৃত্যুর ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। আর তার পরেই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে প্রায় কেউটে বেরনোর অবস্থা।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৪
অভিযান: ঝালদায় বেআইনি ভাবে মদ তৈরির জন্য রাখা সরঞ্জাম ভেঙে ফেলছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

অভিযান: ঝালদায় বেআইনি ভাবে মদ তৈরির জন্য রাখা সরঞ্জাম ভেঙে ফেলছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

অবৈধ ভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ আগেও অনেক বার উঠেছে। শান্তিপুরে বিষমদে মৃত্যুর ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। আর তার পরেই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে প্রায় কেউটে বেরনোর অবস্থা। ভাটি উচ্ছেদ করতে গিয়ে ঝালদায় মিলেছে দেশি মদের কাঁচামাল তৈরির কারখানার সন্ধান। একটি নয়। তিনটি।

পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি মদ বিক্রি রুখতে গত তিন দিন ধরে বিভিন্ন থানা এলাকায় লাগাতার অভিযান হয়েছে। শুক্রবার ঝালদা থানার এসআই রানা ভকতের নেতৃত্বে অভিযান হয়েছিল ঝাড়খণ্ড সীমানার নোয়াডি পঞ্চায়েতের চাঁদাই গ্রামের অদূরে, জঙ্গলের ভিতরে। সেখানেই তিনটি কারখানার সন্ধান মেলে। সেগুলি ভেঙে ফেলা হলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

জেলায় দেশি মদের কাঁচামাল বা ‘র স্পিরিট’ তৈরির কারখানার কথা আগে শোনা যায়নি বলেই দাবি করছেন পোড় খাওয়া পুলিশকর্তাদের অনেকে। জঙ্গলের মধ্যে এমন কারখানা দেখে কিছুটা বিস্মিত তাঁরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝালদায় সেচ নালার পাশে জঙ্গলের মধ্যে ছিল কারখানা তিনটি। পুলিশের দাবি, সেখানে দেশি মদ তৈরির ‘র স্পিরিট’ তৈরি হত। মাটির বড় হাঁড়িতে মহুল ও অন্য জিনিস দিয়ে ফোটানো হত। সেই বাষ্প জলের মধ্যে ঠান্ডা পাইপ দিয়ে চলে যেত অন্য পাত্রে। ছোট ছোট ফোঁটায় তরল জমা হত। পরে বোতলে ভরে পাচার করা হত বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ জানাচ্ছে, ওই ‘র স্পিরিট’-এর সঙ্গে পরিমান মতো জল মিশিয়ে তৈরি হত দেশি মদ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথপুর মহকুমার ৭টি থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আট জনকে। আটক করা হয়েছে ২১৮ লিটার দেশি ও বিদেশি মদ। বেশ কিছু ভাটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। অবশ্য নকল বিদেশি মদ বিক্রির চল আগে রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় থাকলেও এখন সেটা অনেকটাই কমেছে বলে মনে করছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, মূলত পশ্চিম বর্ধমানের নিয়ামতপুর এলাকায় নকল বিদেশি মদ তৈরি হয়ে চলে আসত রঘুনাথপুর মহকুমায়। কাশীপুরে বছর দেড়েক আগে পুলিশ এক বার অভিযান চালিয়েছিল। তখন নকল বিদেশি মদ তৈরির ছোট কারখানার হদিস মিলেছিল। উদ্ধার হয়েছিল নকল লেবেল, ছিপি আঁটার যন্ত্র, কাঁচামাল।

পুলিশের দাবি, এখন নকল বিদেশি মদের রমরমা আর নেই। আগে দেশি মদের দোকানে বিদেশি মদ বিক্রি করা যেত না। লুকিয়ে চুরিয়ে নকল বিদেশি মদ বিক্রি হত অনেক জায়গায়। এখন বিদেশি মদ বিক্রির অনুমতি মেলায় সেই প্রবণতা কমেছে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তাদের একাংশ। তবে এই দফায় পাড়া ও নিতুড়িয়া থানা এলাকায় অবৈধ মদের দোকানে অভিযান চালিয়ে যে বিদেশি মদ আটক করা হয়েছে, সেগুলি আসল না নকল তা নিয়ে এখনও পুলিশ নিশ্চিত নয়।

পুলিশ কর্তাদের একাংশের অভিজ্ঞতা বলছে, পুরুলিয়ায় চোলাইয়ের চল বিশেষ নেই। অবৈধ ভাবে ছোট দোকান বা ঝুপড়িতে দেশি-বিদেশি মদ বিক্রির অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। তবে যে ব্যাপারটা এখনও চিন্তার, সেটা হল ‘তাড়ি’। খেজুর বা তাল গাছের রস সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের রসায়নিক, গাছের শিকড় ইত্যাদি মিশিয়ে সেটি বানানো হয়। নেশা চড়াতে অনেক সময়ে দিয়ে দেওয়া হয় রাসায়নিক সারও। এর থেকে বড়সড় বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। রসায়নিকের মাত্রা এদিক-ওদিক হলে মৃত্যুও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। মহকুমার প্রায় সমস্ত থানায় এই পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু তাড়ির ভাটি ভেঙে দিয়েছে। আদ্রা থানা এলাকাতেই ভাঙা হয়েছে তেমন গোটা চারেক ভাটি।

তবে ঘটনা হল, পুলিশ অবৈধ মদ বিক্রির অভিযোগে যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের অনেকেই আদালতে জামিন পেয়েছেন। ছাড়া পেয়ে অনেকে আবার একই কারবারে তারা জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ। নিয়ম হল, মদ আটকের পরে আবগারি দফতরের মাধ্যমে নমুনা মাঠাতে হয় পরীক্ষার জন্য। রিপোর্টের ভিত্তিতে ধৃতদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা করে পুলিশ। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) সত্যব্রত চক্রবর্তী জানান, ধৃতদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারাতেই মামলা করা হয়। কিন্তু আটক করা মদের নমুনা পরীক্ষার কাজ শেষ না হওয়াতেই অনেক সময়ে তারা জামিন পেয়ে যায়। সত্যব্রতবাবুর দাবি, ‘‘অবৈধ মদ বিক্রেতারা যাতে ফের ব্যবসা শুরু করতে না পারে সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তাদের গতিবিধি ও কাজকর্মের উপরে নজর রাখছে পুলিশ।”

Factory Country Liquor Illegal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy