Advertisement
E-Paper

চুরি যাওয়ার ২১ বছর পর তদন্তে এল পুলিশ

তবে এসআরপি (খড়্গপুর) অমিত সিংহ বলেন, ‘‘অনেক কারণেই পুরনো মামলার তদন্তে পুলিশ অনেক দিন পরেও অভিযোগকারীর কাছে যায়। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ওই মামলায় পুলিশ কেন গিয়েছিল, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ট্রেন থেকে চুরি গিয়েছিল সোনা-রুপোর গয়না ভর্তি ব্যাগ। একুশ বছর পরে সেই ঘটনার খোঁজ নিতে অভিযোগকারীর বাড়িতে এল রেল পুলিশ!

খোওয়া যাওয়া গয়না ফেরত পাওয়ার আশা কবেই ছেড়েই দিয়েছে ওই পরিবার। এমনকী মৃত্যু হয়েছে অভিযোগকারীরও। এত দিন পরে পুলিশকে চুরির খোঁজ করতে আসতে দেখে হতবাক পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুরের নন্দুয়াড়ার ওই পরিবার। ফেসবুকে অভিযোগকারীর ছেলে ঘটনাটি উল্লেখ করায় নানা মন্তব্যে ভরে যাচ্ছে তাঁর ওয়াল। তবে এসআরপি (খড়্গপুর) অমিত সিংহ বলেন, ‘‘অনেক কারণেই পুরনো মামলার তদন্তে পুলিশ অনেক দিন পরেও অভিযোগকারীর কাছে যায়। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ওই মামলায় পুলিশ কেন গিয়েছিল, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

বুধবার বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে পুলিশ দেখে চমকে গিয়েছিলেন রঘুনাথপুরের নন্দুয়াড়ার বাসিন্দা শিক্ষক শেখর চক্রবর্তী। পুলিশ কেন? সব শুনে তাজ্জব হয়ে যান তিনি। আদ্রার রেল পুলিশের ওসি বুদ্ধদেব কুণ্ডুর কাছে তিনি জানতে পারেন, ২১ বছর আগে ট্রেনে তাঁর দিদির গয়না চুরি গিয়েছিল। শেখরবাবুর বাবা মানিকচন্দ্র চক্রবর্তী আদ্রায় জিআরপি-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগকারীই যে বেঁচে নেই।

টুকটাক জিজ্ঞাসাবাদ সেরে ওসি চলে গেলেও ঘটনার ঘোর কাটতে সময় লেগেছিল শেখরবাবুদের। পরে অবাক করা এই ঘটনা ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। তারপর থেকেই নানা মন্তব্য আসছে। তার মধ্যে ব্যাঙ্গাত্মক কথাও কম নেই।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, আসানসোলের নিয়ামতপুরে শেখরবাবুর দিদি মিষ্টিদেবীর বিয়ে হয়েছিল। এক সরস্বতী পুজোর দিনে তিনি মানিকবাবুর সঙ্গে রঘুনাথপুরে ট্রেনে ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিল বিয়েতে পাওয়া প্রায় সমস্ত গয়না। ট্রেনের বাঙ্কে একটি ব্যাগের মধ্যে জামাকাপড়ের সঙ্গে গয়নার বাক্সগুলি রেখেছিলেন তিনি। জয়চণ্ডীপাহাড় স্টেশনে নামার সময় তাঁরা দেখেন, ব্যাগ কেটে গয়নার বাক্স চুরি করে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা! প্রায় ২০ ভরি গয়না খোওয়া গিয়েছিল। পরের দিন আদ্রায় এসে রেলপুলিশের কাছে গয়না চুরির অভিযোগ জানিয়েছিলেন মানিকবাবু।

পরিবারের দাবি, রেলপুলিশ অবশ্য বিশেষ কিছু করে উঠতে পেরেছিল, এমনটা নয়। কয়েকবার তাঁরা রেলপুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুরির তদন্তের বিষয়ে জানার চেষ্টা করা করেছিলেন। কিন্তু কখনই সদুত্তর মেলেনি।

তাহলে ঘটনার দু’দশক পরে কী হল রেলপুলিশের?

রেলপুলিশের দাবি, একুশ বছর আগের ওই গয়না চুরির ঘটনার তদন্ত এখন শুরু হয়েছে বিষয়টা আদৌও এমন নয়। অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্ত করা হয়েছিল। তবে কেউ ধরা পড়েনি। চুরি যাওয়া গয়নাও উদ্ধার করা যায়নি। কয়েক বছর আগেই ঘটনার ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি রেলপুলিশের উপরমহল থেকে বড়সড় চুরি ও অপরাধের অভিযোগগুলি কী পর্যায়ে আছে, তা নিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়। কিন্তু মানিকবাবুর অভিযোগের তদন্তের ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হলেওস মামলাটির নিষ্পত্তি করা হয়নি। সে জন্যই ঘটনাটি সম্পর্কে আরও একটু বিশদে জানতে অভিযোগকারীর বাড়িতে গিয়েছিলেন ওসি।

ফেসবুক পোস্টে শেখরবাবু দাবি করেছেন, রেলপুলিশের যে অফিসার এসেছিলেন তাঁর কাছে শুনেছেন, গয়না চুরির ঘটনার তদন্তের অর্ডার হয়েছে বলেই, তিনি খোঁজ নিতে এসেছিলেন। বছর দুই আগে মৃত্যু হয়েছে অভিযোগকারী মানিকবাবু। সে প্রসঙ্গ তুলে শেখরবাবুর মন্তব্য, ‘‘হোক না একুশটা বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু রেলপুলিশ যে বাড়ি বয়ে খোঁজ নিতে এসেছিল, বাবা বেঁচে থাকলে তা দেখে খুশি হতো।’’

ঘটনাটি নজরে আসতেই ফেসবুকে নানা মন্তব্য আসছে। আরও একশো বছর পরে চুরি হওয়া গয়না উদ্ধারের আশা প্রকাশ করে মন্তব্য করছেন কেউ। আবার কেউ ঘটনাটিকে বিশ্ব রেকর্ড বলে কটাক্ষ করেছেন। পড়শিরাও কম যাচ্ছেন না। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘আশ্চর্যজনক ঘটনা বলেও একে কম বলা হয়। চোর পালানোর পরে পুলিশের টনক নড়ার অনেক উদাহরণ শুনেছি। এটা সেগুলিকেও ছাড়িয়ে গেল।”

তবে শেখরবাবুর দিদি মিষ্টিদেবী অবশ্য ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে শুনে গয়না ফেরতের আশায় বুক বেঁধেছেন। শেখরবাবু বলেন, ‘‘দিদিকে ঘটনার কথা জানাতেই, আকাশ থেকে পড়েছিল। সব শুনে দিদি বলেছে, ‘গয়নাগুলো ফেরত পাওয়ার আশা এখনও আছে, বল ভাই?’ কী জবাব দেব!’’ গয়না ফেরত পাওয়ার বিষয়ে মোটেই আশাবাদী নন শেখরবাবুরা। তিনি বলেন, ‘‘চোরটাই বেঁচে আছে কি না সন্দেহ! আর গয়না ফেরতের আশা আমরা অনেক আগে ছেড়ে দিয়েছি।”

Police Investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy