Advertisement
E-Paper

রাতের অভিযানে পুলিশ-জালে ৩৯৯

শনিবার গোটা জেলায় একযোগে তল্লাশি অভিযানে নামে জেলা পুলিশ। জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০০:৪৩
পাড়ুইয়ের সাত্তোরে মাটির উনুনে মিলল বোমা। ঘটনাস্থলে পুলিশ (বাঁ দিকে)। নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে নানুরে উদ্ধার হওয়া বোমা। নিজস্ব চিত্র

পাড়ুইয়ের সাত্তোরে মাটির উনুনে মিলল বোমা। ঘটনাস্থলে পুলিশ (বাঁ দিকে)। নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে নানুরে উদ্ধার হওয়া বোমা। নিজস্ব চিত্র

কার্যত বোমার স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বীরভূম— এমন অভিযোগ তুলে বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছে বিরোধীদের। বোমা মজুতের জন্য তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিরোধীরা। যদিও সেই অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করেছে তৃণমূল। কিন্তু সাম্প্রতিক দু’টি বিস্ফোরণের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, বীরভূমের পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। তবে, মল্লারপুর ও লাভপুরের জোড়া বিস্ফোরণের পরেই জেলা পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে।

শনিবার গোটা জেলায় একযোগে তল্লাশি অভিযানে নামে জেলা পুলিশ। জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতভর তল্লাশি চালিয়ে নানুর, লাভপুর, দুবরাজপুর, সদাইপুর, পাড়ুই এলাকা থেকে মোট ১১২টি তাজা বোমা, ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় জেলা জুড়ে মোট ৩৯৯ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ধার হওয়া বোমাগুলিকে রবিবার নিষ্ক্রিয় করে সিআইডি-র বম্ব ডিসপোজ়াল স্কোয়াড।

বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।

আগ্নেয়াস্ত্র-সহ অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিয়মিত আমাদের এই অভিযান চলবে।’’

সে রকমই এক অভিযানে রবিবার লাভপুরের দাঁড়কা এবং পাড়ুইয়ের সাত্তোর এলাকা থেকে বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। গত বুধবার গভীর রাতে বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল দাঁড়কা পঞ্চায়েত এলাকার দাঁড়কা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি পরিত্যক্ত আবাসনের ছাদ ও দেওয়াল। ওই ঘটনার রেশ মেলাতে না মেলাতেই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, এ দিন সকালে দাঁড়কা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে দরবারপুর গ্রাম লাগোয়া সেচখালের পাড়ে একটি ড্রাম ভর্তি প্রায় ২৫টি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই

এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। কারণ ২০১৭ সালে এই দরবারপুর গ্রামেই বালির ঘাট দখলের বিবাদের জেরে বোমা বিস্ফোরণে ৯ জনের মৃত্যু হয়। তার পরেও গোলাগুলির লড়াই অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দাঁড়কা পঞ্চায়েত এলাকায় বালির ঘাট এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা তথা গ্রাম দখলকে করে কিছু কিছু জায়গায় বোমা মজুত রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর থেকে সেই সব বোমা উদ্ধারের জন্য এলাকায় পুলিশি তল্লাশি চলছে। পুলিশের নজর এড়াতেই ওই সব বোমা সেচখালের পাড়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। কারা কী কারণে বোমাগুলি মজুত করেছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের জেরা করে আরও কয়েক জনের নাম মিলেছে। সাত্তোর গ্রামেও তল্লাশি অভিযান চালিয়ে পুলিশ তিন ড্রাম ভর্তি তাজা বোমা পায়। পুলিশ সূত্রে খবর, এক গ্রামবাসীর বাড়ি সংলগ্ন মাটির উনুনের ভিতর থেকে দুই ড্রাম এবং আর এক জনের বাড়ি সংলগ্ন কালভার্টের নীচে এক ড্রাম ভর্তি বোমা উদ্ধার হয়।

পরপর দু’টি বিস্ফোরণের ঘটনা জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। দাঁড়কা-কাণ্ডে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে দাঁড়কা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই থাকা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পার্থ সাহাকে সাসপেন্ড এবং লাভপুর থানার ওসি চয়ন ঘোষকে শো-কজ করা হয়েছে। মল্লারপুরের ক্লাবে বিস্ফোরণের ঘটনাতেও কর্তব্যে গাফিলতি ও

নজরদারিতে খামতি থাকার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে মল্লারপুর থানার প্রাক্তন ওসি টুবাই ভৌমিককে। সব মিলিয়ে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা বার্তা দিয়েছেন, কর্তব্যে ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না।

যদিও পুলিশের এই অভিযান আগে করা উচিত ছিল বলে দাবি করেছেন বিরোধীরা। বস্তুত, লোকসভা ভোটের পর থেকেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে তেতে রয়েছে জেলা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘ জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে লোকসভা নির্বাচনের পরে পরেই দাবি করা হয়েছিল সন্ত্রাস-মুক্ত বীরভূম গড়ে তুলতে হবে। বীরভূমে বোমা-বারুদের রাজনীতি এনেছে তৃণমূল।’’ তাঁর দাবি, অতীতেও পুলিশকে এমন ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। সুতরাং এটা পুলিশের একটা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। একই ভাবে বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের দাবি, ‘‘এক সময় বীরভূমের পরিচয় ছিল পাঁচ পীঠস্থানের জেলা হিসেবে। আজ সেই বীরভূম জেলার পরিচয় হয়ে গিয়েছে বোমা-বারুদ- পিস্তল-সন্ত্রাসের জন্য। জেলার মানুষ শান্তি চান।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, মিথ্যা মামলায় শুধু বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করলে চলবে না। যে যে তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা-পিস্তল মজুত

আছে, তাঁদেরও অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।

মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারির অভিযোগ মানেনি জেলা পুলিশ। বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জেলা সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বিরোধীরা নানা ভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বিশেষ করে বিজেপি। বাংলার সঙ্গে বীরভূম জেলাকেও অশান্ত করার চেষ্টা করছে। পুলিশ পুলিশের কাজ করেছে। যে বোমাবাজি করবে, যে সন্ত্রাস করবে, তাকে পুলিশ ধরবে। সে যে দলেরই হোক না কেন।’’

Crime Arms Bombs Police Arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy