সভাস্থলে বাজ পড়ে মৃত্যু নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন। — ফাইল চিত্র।
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে ভরা বর্ষায়, এমনই কানাঘুষো রাজনৈতিক মহলে। সেই মতো চলছে প্রস্তুতি। তবে সম্প্রতি সভাস্থলে বাজ পড়ে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় খারাপ আবহাওয়ায় খোলা জায়গায় সভা করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি।
ঝড়-বৃষ্টিতে গাছের তলায় আশ্রয় নিয়ে বাজ পড়ে একাধিক দুর্ঘটনা বহু বার সামনে এসেছে। গত রবিবার ইন্দাসে একই ভাবে তৃণমূলের সভায় আসা দলীয় কর্মীরা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সভাস্থলের বড় গাছের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে বাজ পড়ে এক কর্মীর মৃত্যুর পাশাপাশি জখম হন ৩১ জন। বাদলার সময়ে গাছের তলায় আশ্রয় নেওয়া যে অত্যন্ত ঝুঁকির, তা নিয়ে সরকারি প্রচার চলছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে আদৌ মানুষ কতটা সচেতন হয়েছেন, ইন্দাসের ঘটনায় সেই প্রশ্ন উঠছে। খারাপ আবহাওয়ায় প্রকাশ্যে সভা করা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিও ভাবুক, দাবি উঠছে বিভিন্ন তরফে।
ঘটনা হল, বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যে বাঁকুড়া উপরের সারিতে রয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ৩৫ জন, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ৪০ জন, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ৪২ জন, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ৪২ জন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৩০ জন এবং চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এ পর্যন্ত ৩ জনের বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাঠে চাষ করা বা পশু চরাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে গাছের তলায় আশ্রয় নেওয়া ডেকে এনেছে বিপদ।
বজ্রপাতে মৃত্যুতে অসচেতনতাই মূলত দায়ী, মত বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের ভূগোল শিক্ষক সুব্রত পানের। তিনি বলেন, “বাজ পড়লে গাছের তলায় ঠাঁই নেওয়ার চেয়ে ফাঁকা মাঠে হাঁটু মুড়ে মাথা মাটিতে ঠেকিয়ে বসে থাকা কম ঝুঁকির। এ নিয়ে বার বার প্রচার চললেও মানুষ শুধরোচ্ছেন না।” তিনি আরও জানান, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে স্থানীয় ভাবে মেঘ জমাট বেঁধে ঝড়-বৃষ্টি ও বাজ পড়ার ঘটনা বাড়ছে। তাই আরও সচেতনতা দরকার। তাঁর বক্তব্য, “রাজনৈতিক সভায় অনেকের জমায়েত হয়। তাই সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই প্রতিটি দলের সচেতন হওয়া দরকার। দলীয় কর্মীদেরও এ নিয়ে সচেতন করতে হবে।”
কী ভাবে? সুব্রত জানান, আবহাওয়া খারাপ থাকলে বিকেলের দিকে সভা এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি, সভা হলেও বাজ পড়ার আগাম সূচনা দেওয়া ‘দামিনী’ অ্যাপে নিয়মিত নজর রাখা, দলীয় কর্মীদের জন্য সভাস্থলের আশপাশে পোক্ত ছাউনির কোনও জায়গা আগে থেকে চিহ্নিত করে রাখলে বিপদ ঠেকানো সম্ভব।
ইন্দাসের ঘটনার পরে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও আলোচনা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “ইন্দাসের ঘটনার পরে রাজ্য নেতৃত্ব সভার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন। স্থানীয় স্তরে আমরাও সভা করার আগে সভাস্থলের আশপাশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি। সকলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা লক্ষ্য।” সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “ঝড়-বৃষ্টির দিনগুলিতে সভা থাকলে কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন থাকার নির্দেশ সর্বস্তরে দেওয়া হয়েছে এবং তা মেনেও চলা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, ইন্দাসের দুর্ঘটনার দিন বিকেলে সোনামুখীতে তাদের সভা ছিল। সেখানে প্রায় হাজার তিনেক লোকের জমায়েত ছিল। আবহাওয়া বেগতিক বুঝে মানুষজনকে আশপাশের পাকা ছাউনির তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, “সব মিলিয়ে সভা শুরু করতে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক দেরি হয়েছিল। তবে কর্মীদের নিরাপত্তা আগে।” বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলও জানান, যে ভাবে বাজ পড়ে দুর্ঘটনা বাড়ছে, তাতে সভা করার আগে নানা বিষয়ে ভাবতে হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy