Advertisement
E-Paper

হাতি-রাজনীতি চলছেই, ক্ষয়ক্ষতিও থেমে নেই

হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি ঘটলেই তখন বিরোধী দল তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা পথে নেমে আন্দোলন করতেন। রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হতেন।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:২৮
Local residents on protest regarding compensation of elephant attack

হাতি-সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের অফিসে বিক্ষোভ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

শাসক-বিরোধী শিবির বদলায়। অথচ হাতির হানায় আমজনতার ক্ষয়ক্ষতিতে দাঁড়ি পড়ে না। সেই নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে হাতির উপদ্রবে নাজেহাল বাঁকুড়ার জঙ্গল এলাকার মানুষজন।

বাম আমলের মাঝামাঝি থেকে এই জেলায় দল হাতির আনাগোনা শুরু। হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি ঘটলেই তখন বিরোধী দল তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা পথে নেমে আন্দোলন করতেন। রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হতেন। তাঁরা ক্ষমতায় এলে হাতির সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দিতেন। ২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদলের ক্ষেত্রেও হাতি-ক্ষোভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় বলে রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ। মনে করা হয়, বিষ্ণুপুর, সোনামুখী, বড়জোড়ার মতো বিধানসভার ভোটারদের একাংশকে প্রভাবিত করেছিল হাতির হানায় ক্ষমক্ষতি। তবে তারপরেও ১২ বছরে পরিস্থিতি যে বদলায়নি বছর বছর হাতির হানায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিই তার প্রমাণ দিচ্ছে।

হাতি উপদ্রুত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত বড়জোড়া বিধানসভার বেলিয়াতোড়ের বৃন্দাবনপুরের প্রবীণ বাসিন্দা সুভাষ তুং বলেন, “এক সময় বন কমিটিতে থাকায় জেলায় হাতির সমস্যা প্রথম থেকেই দেখে আসছি। সেই সময় হাতি সমস্যার জন্য বাম সরকারকেই কাঠগড়ায় তোলা হত। সরকার বদলালে সবার আগে হাতির সমস্যা মেটানোর আশ্বাস তৃণমূল নেতারা দিতেন। এখন ক্ষতিপূরণ বেড়েছে, মৃতদের পরিবারের একজনের চাকরির আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাতি সমস্যা মেটার বদলে বেড়ে গিয়েছে। পাল্লা দিয়ে হাতির সংখ্যাও বেড়েছে।” তবে ঝাড়গ্রামের মতো এই জেলায় দুষ্টু হাতি ধরে দূরে পাঠানোর পদক্ষেপও হয়নি।

হাতি রুখতে টাঙানো বৈদ্যুতিক তারের বেড়া বড়জোড়ায়। নিজস্ব চিত্র

হাতি রুখতে টাঙানো বৈদ্যুতিক তারের বেড়া বড়জোড়ায়। নিজস্ব চিত্র

নতুন বছরের শুরুতে পঞ্চায়েত ভোটের মুখেই হাতির হানায় বাঁকুড়া জেলায় চারটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এতে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। পঞ্চায়েত ভোটে একে জনসংযোগের হাতিয়ারও করা হচ্ছে। সিপিএমের বড়জোড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুজয় চৌধুরীর অভিযোগ, “বাম আমলে বন সুরক্ষা কমিটি গড়ে পরিকল্পিত ভাবে হাতির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হত। এখন সে সব উঠে গিয়েছে। প্রাণহানিও বেড়েছে আগের চেয়ে। রাজ্য সরকারের কৌশলগত ব্যর্থতার খেসারত সাধারণ মানুষকে দিতে হচ্ছে।” বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহ জানাচ্ছেন, হাতি সমস্যার সমাধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে জনমত গড়ে তোলা হচ্ছে। এ নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের কথাও ভাবছে বিজেপি। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যেই আমরা আন্দোলন শুরু করেছি, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি। তবে বৃহত্তর আন্দোলন ছাড়া রাজ্য সরকারের ঘুম ভাঙবে না। আমরা তার প্রস্তুতি শুরু করেছি।”

বাম আমলে হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবাদে প্রথম সারিতে থেকে আন্দোলন করতেন বড়জোড়ার তৃণমূল নেতা অলক মুখোপাধ্যায়। তিনি এখন বড়জোড়ার বিধায়ক। অলক বলছেন, “আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি হাতির সমস্যার সমাধানে। জঙ্গলে খাবার দিয়ে হাতিগুলিকে আটকে রাখার চেষ্টা করছি। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, মৃতের পরিজনকে চাকরিও দেওয়া হচ্ছে। তবে জীবনহানি আমরা চাই না। তাই জেলায় হাতিদের ঢোকা রুখতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”

রাজনৈতিক এই চাপানউতোরে মূল সমস্যা চাপা পড়ে গিয়েছে, আক্ষেপ ভুক্তভোগীদের। (শেষ)

elephant attack bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy