Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অবাধেই ঢুকলাম স্ত্রী ওয়ার্ডে

দরজায় তিন জন রক্ষী। তা সত্ত্বেও ভিজিটিং আওয়ারের আগেই অবাধে লোকজন ঢুকছেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের ওয়ার্ডে। সদ্যোজাতের ওয়ার্ডে এই অবাধ প্রবেশই সমস্যা ডেকে আনতে পারে, তা মানছেন হাসপাতালের কর্তারাও। কিন্তু ঠেকানো যাচ্ছে না।

অন্দরে: বাঁকুড়া মেডিক্যালের স্ত্রী ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র

অন্দরে: বাঁকুড়া মেডিক্যালের স্ত্রী ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০১:১৬
Share: Save:

দরজায় তিন জন রক্ষী। তা সত্ত্বেও ভিজিটিং আওয়ারের আগেই অবাধে লোকজন ঢুকছেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের ওয়ার্ডে। সদ্যোজাতের ওয়ার্ডে এই অবাধ প্রবেশই সমস্যা ডেকে আনতে পারে, তা মানছেন হাসপাতালের কর্তারাও। কিন্তু ঠেকানো যাচ্ছে না।

বাঁকুড়া মেডিক্যালে রোগীর সঙ্গে আত্মীয়দের দেখা করার সময় (ভিজিটিং আওয়ার) সকাল সাতটা থেকে আটটা এবং দুপুর একটা থেকে তিনটে। কিন্তু বেলা ১১টা নাগাদ স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগে ঢুকতে গিয়ে অবশ্য কোনও প্রশ্নের মুখেই পড়তে হল না। অথচ হাসপাতালের তিন জন রক্ষী ওয়ার্ডে দরজায় মোতায়েন। অবাধেই সদ্যোজাত শিশুদের ওয়ার্ডের ভিতরে ঘোরাঘুরি করা গেল। হাসপাতালের নার্সিং স্টাফ থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কেউই অসময়ে এই ওয়ার্ডে পুরুষদের ইতি-উতি ঘুরে বেরাতে দেখে কোনও প্রশ্ন তুললেন না। আরও কয়েকজন পুরুষও ঘুরছিলেন। কেউ কেউ আবার দরজা থেকে ওয়ার্ডের ভিতরে উঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন।

সন্তানসম্ভবা মহিলা কিংবা সদ্য প্রসব করা মহিলাদের ওয়ার্ডেও দেখা গেল বেশ কিছু পুরুষ ও মহিলা ঘুরছেন। অনেকে অচেতন মহিলার বিছানার পাশে বসেও থাকছেন। তাঁদের মধ্যে কে ওই মহিলার পরিবারের লোক, কে বা অপরিচিত তা বোঝা দুষ্কর। ফলে যে কোনও সময় বিপদের আশঙ্কা থাকছেই।

পুনিশোলের ফতেমা বেগম পুত্রবধূর বেডের পাশে বসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েদের ওয়ার্ডে ছেলেরা যখনতখন ঢুকে পড়ছে। খুবই অস্বস্তি হচ্ছে।’’ ওয়ার্ডের বাইরে বসেছিলেন ইঁদপুরের প্রশান্ত নন্দী। তাঁর স্ত্রী সদ্য সন্তান প্রসব করেছেন। চিন্তান্বিত মুখে তিনি বলেন, ‘‘ওয়ার্ডের মধ্যে সব সময় এত লোক গিজগিজ করছে যে কে কী মতলবে ঘুরছে বোঝা মুশকিল। স্ত্রী ও সন্তানকে ভালোয় ভালোয় বাড়ি নিয়ে যেতে পারলে বাঁচি।’’

স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের ভিতরে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির নীচে একটি কাঠের চেয়ারে হাসপাতালের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বসেছিলেন। ভিজিটিং আওয়ার না হওয়া সত্ত্বেও এত বাইরের লোকজন হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়ছেন কেন? তাঁর দায়সারা জবাব, ‘‘যাঁরা এসেছেন, তাঁদের নিশ্চয় জরুরি কিছু কাজ রয়েছে।” কিছুটা দূরে ছিলেন এক রক্ষী। ওই প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, “দু-এক জন হয়তো নজর এড়িয়ে গলে যাচ্ছেন। তা বলে অবাধে লোকজনকে ঢুকতে আমরা দিচ্ছি না। কেউ কেউ ওষুধ বা বাচ্চার খাবার দিতে ঢুকতে চাইলে দ্রুত কাজ সেরে তাঁদের বেরিয়ে যেতে বলি।” যাঁরা ঢোকেন, তাঁদের সবাই কি বেরিয়ে যান? এ বার ওই রক্ষী আমতা আমতা করতে থাকেন। সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

ওয়ার্ডের মধ্যে এই অযাচিত প্রবেশ যতক্ষণ না ঠেকানো যাচ্ছে, ততক্ষণ প্রশান্তদের মতো লোকজনদের হাসপাতালে ভর্তি থাকা পরিজনদের নিরাপত্তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার মধ্যেই থাকতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poor Security Bankura Medical College Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE