Advertisement
০২ মে ২০২৪
Pradhan Mantri Awas Yojana

আবাসের টাকা নিয়ে দড়ি টানাটানি কেন্দ্র-রাজ্যে, ভুগছেন সাধারণ মানুষ, থাকতে হচ্ছে ত্রিপল খাটিয়ে

আবাস যোজনার আওতায় বাড়ির কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু মাঝপথে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয় কেন্দ্র। তারই জেরে পরিবার নিয়ে ত্রিপল খাটিয়ে থাকতে হচ্ছে বহু মানুষকে।

Screen Grab

দেওয়াল তৈরি হয়েছে কিন্তু ছাদ নেই। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৪৩
Share: Save:

আবাস দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত তুঙ্গে। আবাস যোজনার টাকা না পাওয়ায় বাড়ির কাজ অসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে বহু জায়গায়। এর ফলে বীরভূমের সিউড়িতে সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ। অগত্যা, কেউ থাকছেন মাথার উপরে ত্রিপল খাটিয়ে, কাউকে থাকতে হচ্ছে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে। আর এই প্রসঙ্গকেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ার হাতিয়ার হিসাবে মানুষের কাছে তুলে ধরছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল।

সিউড়ি পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০-২১, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ এই তিন অর্থবর্ষে ‘হাউস ফর অল’ বা শহরাঞ্চলে সকলের জন্য আবাস প্রকল্পের অন্তর্গত অধিকাংশ বাড়ি অর্ধেক তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। কেন্দ্র যে হেতু টাকা দিচ্ছে না তাই কাজ অর্ধেক হয়ে থমকে গিয়েছে। জেলা সদর সিউড়িতে এ রকম প্রায় তিন হাজার সুবিধাভোগী রয়েছেন যাঁদের বাড়ির কাজ এখনও অসমাপ্ত। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, পাকা বাড়ি পাওয়ার আশায় অনেকে নিজের বাড়ি ভেঙে ‘হাউস ফর অল’-এর টাকা দিয়ে বাড়ির সামান্য কাজ শুরু করেছেন। ফলত, তাঁদের বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকতে হচ্ছে। অনেকেই বাড়ি তৈরি করতে অন্যত্র থাকতেও শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু তার পর থেকেই আর টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। ফলে যে সমস্ত বাড়ির কাজ চলছিল আবাস প্রকল্পের সরকারি টাকায়, তা অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আর সুবিধাভোগীদের থাকতে হচ্ছে মাথার উপর ত্রিপল খাটিয়ে বা ঝুপড়ি বানিয়ে।

সিউড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহু মানুষ বাড়ির কাজ শুরু করেছিলেন কিন্তু মাঝপথে কেন্দ্র টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ার জেরে তাঁরা বিপদে পড়েছেন। কেউ ত্রিপলের নীচে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন কেউ আবার অন্যত্র ভাড়ার টাকা গুনতে বাধ্য হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার কেন এটা করছে বুঝতে পারছি না। পুরসভার মধ্যে তিন হাজারের বেশি বাড়ি এ ভাবে অসমাপ্ত পড়ে আছে। এ ভাবে জোরজবরদস্তি করে মানুষের ভোট পাওয়া যায় না। আমার কিছু বলার মতো ভাষা নেই।’’ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি দীপক দাস বলেন, ‘‘বেনিয়মে ভর্তি ছিল তালিকা। খরচের হিসাব ঠিক মতো পাঠায়নি। এটা সম্পূর্ণ রাজ্য সরকারের দোষে। ক্যাগ রিপোর্টেও পুরসভার দুর্নীতি উঠে এসেছে। নিকট ভবিষ্যতে এই সমস্যার সমাধানের কোনও পথ দেখতে পাচ্ছি না। তৃণমূল নিজের মাসি, পিসি, ভাই, বোনকে বাড়ি দেবে, তার দায়ভার কি কেন্দ্র বহন করবে? বিজেপি টাকা বন্ধ করেনি, চুরি বন্ধ করেছে। কাউন্সিলররা চুরি করবে সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।’’

আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন৷ কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষকে কেন ভোগান্তির শিকার হতে হবে? সিউড়ি শহরেরই বাসিন্দা পাপিয়া কাহার বলেন, ‘‘মাথার উপর ত্রিপল খাটিয়ে আছি। সেটাও ছিঁড়ে গিয়েছে জায়গায় জায়গায়। ঠান্ডায় ছেলেমেয়েগুলো খুব কষ্ট পাচ্ছে। তিন-চার মাস এ ভাবেই পড়ে আছি। সবাইকে জানানো হয়েছে। নেতারা বলছেন, টাকা না ঢুকলে আমরা কী করব! টাকা যেন তাড়াতাড়ি দিয়ে দেওয়া হয়। খুব কষ্ট করে থাকছি।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সরস্বতী মাল বলেন, ‘‘খুবই কষ্টে আছি। বৃষ্টি নামলেই কাপড়চোপড় সব ভিজে যাচ্ছে। ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছি। এ ভাবে আর পারা যাচ্ছে না। কাউন্সিলরকে বললে উনি বলছেন, টাকা না ঢুকলে আমি কী করব। তাড়াতাড়ি মাথার উপর ছাদটা হয়ে গেলে সমস্যা কমে।’’ আর এক স্থানীয় বাসিন্দা হারু কাহার বলেন, ‘‘বাড়িটা কাঁধ পর্যন্ত হয়েছে। মাথার ছাদটা হয়নি। ছাদ না থাকায় আমাকে ধার করে ত্রিপল কিনতে হয়েছে। সেই ত্রিপলও কয়েক জায়গায় ফেটে গিয়েছে। ছাদটা হয়ে গেলে ছেলেমেয়েকে নিয়ে একটু থাকতে পারি। কাউন্সিলর বলেছেন, টাকা ঢোকেনি। আমরাও বুঝতে পারছি টাকা আটকে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা খুবই কষ্টে আছি এটা কেন্দ্রীয় সরকারের বোঝা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP Suri Municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE