Advertisement
২১ মার্চ ২০২৩
Mid Day Meal

অ্যাপ্রন থেকে খাদ্য তালিকা, মিড-ডে মিলে ভোলবদল স্কুলে

শিক্ষকদের একাংশ মানছেন, প্রশাসনের তরফে মিড-ডে মিল ব্যবস্থায় যাবতীয় খামতি ঢেকে তৈরি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(বাঁ দিকে) রাঁধুনিদের অ্যাপ্রন ও (ডান দিকে) খাদ্য তালিকার দেখা মিলছে জেলার নানা স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

(বাঁ দিকে) রাঁধুনিদের অ্যাপ্রন ও (ডান দিকে) খাদ্য তালিকার দেখা মিলছে জেলার নানা স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৩
Share: Save:

পরিচ্ছন্ন রান্নাঘর। ঝকঝকে বাসনপত্র। দেওয়ালে ঝোলানো নতুন খাদ্য তালিকা থেকে রাঁধুনিদের জন্য পাটভাঙা অ্যাপ্রন। সব কিছুতেই যেন একটা গোছানো ভাব। রাজ্যে মিড-ডে মিলের পরিস্থিতি সোমবারই আসছে কেন্দ্রীয় দল। তার আগে জেলা জুড়ে স্কুলগুলির মিড-ডে মিল ব্যবস্থায় এমন ভোল বদলের ছবিই চোখে পড়ছে।

Advertisement

শিক্ষকদের একাংশ মানছেন, প্রশাসনের তরফে মিড-ডে মিল ব্যবস্থায় যাবতীয় খামতি ঢেকে তৈরি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুঁটিনাটি বিষয়কে যথাযথ করতে প্রতিটি স্কুল ছুঁয়ে গিয়েছেন জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা। প্রতিটি স্কুলের জন্য টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরে ৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিড-ডে মিল প্রকল্প চলছে। প্রতিটি স্কুলে একই রকম পরিকাঠামো না থাকলেও নূন্যতম পরিকাঠামো সংখ্যাগরিষ্ঠ স্কুলে। কিন্তু সরকারি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে মিড-ডে মিল খুব কম সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই চলত। স্বাস্থ্য বিধিও যথাযথ ভাবে মানা হত না বলে অভিযোগ আছে। ময়ূরেশ্বরের মণ্ডলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিলের রান্নায় ডালের বালতিতে আস্ত সাপ মেলার ঘটনা ঘটেছিল চলতি মাসের ৯ তারিখেই। তার জেরেই বিতর্ক বাধতেই মিড ডে মিলে নজর দেয় প্রশাসন।

কী কী বদলেছে?

Advertisement

শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রান্নাঘর ও তার আশপাশ পরিচ্ছন্ন করা তো আছেই, প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট লোগো আঁকা, প্রতিটি স্কুলে প্রতিটি সাপ্তাহিক খাদ্য তালিকা ও পিএম পোষণের বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাপ্তাহিক খাদ্য তালিকার বোর্ড ছিল না। এ ছাড়া কোন দিন কত স্কুল পড়ুয়া স্কুলে উপস্থিত, কত জন মিড-ডে খাবে, কী পরিমাণ খাবার রান্না হয়েছে প্রতিটি স্কুলে বোর্ডে তা লিখে দেওয়া ব্যাবস্থা থাকলেও সেটা সব ক্ষেত্রে মানা হত না।

স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার দায়িত্নে থাকা স্বনির্ভর দলের মহিলাদের সাধারণ পোশাকেই দেখা যেত। তাঁদের জন্য দেওয়া অ্যাপ্রন ফেস মাস্ক, টুপি সব বেরিয়ে এসেছে। পড়ুয়াদের হাত ধোওয়ার নির্দেশিকা লাগাতে বলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে খাতাপত্র, হিসেব যথাযথ রাখার বিষয়টিতে।

সিউড়ি ও দুবরাজপুর দুই প্রাথমিক শিক্ষক বলছেন, ‘‘মিড ডে মিল ও হিসেবপত্র সংক্রান্ত একাধিক খাতা যথাযথভাবে পূরণ করার কথা থাকলেও স্কুল পড়ুয়াদের খাওয়ার হিসেব মূলত একটি বা দু’টি খাতায় সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। আগে মিড-ডে মিল পরীক্ষা করার আলাদা খাতাই ছিল না। সেটও তড়িঘড়ি তৈরি করা হয়েছে। আপ-টু-ডেট করা হয়েছে শিক্ষক শিক্ষিকাদের হাজিরা সংক্রান্ত খাতাও।’’

জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা আড়ালে বলছেন, ‘‘হিসেবের নানা খাতা কেনার এতটাই হিড়িক পড়েছিল যে জেলায় সেগুলির জোগানের আভাব দেখা দিয়েছিল!’’ ঘটনাটি যে মিথ্যা নয় তা মানছেন জেলার বই খাতার ব্যবসায়ীদের একাংশ। কোনও কোনও স্কুল আবার আবার ব্ল্যাক বোর্ড না পেয়ে শক্ত পিচ বোর্ডের উপর সাদা কাগজ সেঁটে সাদা কাগজে সাপ্তাহিক খাদ্য তালিকা তৈরি করেছে।

কেন্দ্রীয় দলের সফরের মুখে এই তৎপরতা ক্ষণিকের ব্যাপার কি না, সেই প্রশ্ন আছে। তবে যে ভাবে মিড-ডে মিল সংক্রান্ত ব্যবস্থা জোর দেওয়া হয়েছে তার কাছাকাছি চেষ্টা বজায় থাকলেও মিড-ডে মিলের রান্নায় সাপ মেলার মতো ঘটনা এড়ানো সম্ভব মত প্রশাসনের আধিকারিকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.