Advertisement
E-Paper

মাটি ফুঁড়ে উঠল জল,চিন্তা কাটল নিচিন্তার

জলকষ্টই ছিল খয়রাশোলের নিচিন্তা গ্রামের প্রধান সমস্যা। এক বালতি পানীয় জলের জন্য হিমসিম খেতে হতো গ্রামের মানুষকে।সেই গ্রামেই এখন ভিন্ন ছবি।অরোধ্য গতির জলধারার সামনে পানীয় জলের কলসী বা বালতি ধরলে নিমেষেই ভর্তি।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৯

জলকষ্টই ছিল খয়রাশোলের নিচিন্তা গ্রামের প্রধান সমস্যা। এক বালতি পানীয় জলের জন্য হিমসিম খেতে হতো গ্রামের মানুষকে।

সেই গ্রামেই এখন ভিন্ন ছবি।

অরোধ্য গতির জলধারার সামনে পানীয় জলের কলসী বা বালতি ধরলে নিমেষেই ভর্তি। স্কুল যাওয়ার আগে দিব্যি উষ্ণ জলে স্নান সেরে নিচ্ছে খুদেরা। চলছে কাপড় কাচা থেকে সবই। না, কোনও ঝর্নার সন্ধান মেলেনি গ্রামে। মিলেছে— ‘আর্টেজিও কূপ’ (আর্টেজিয়ান ওয়েল)। গ্রামবাসী জানাচ্ছেন, গ্রামের প্রাথমিক স্কুল প্রাঙ্গণে মাস তিনেক আগে একটি গভীর নলকূপ বসাতে গিয়ে আর্টেজিও কূপটি মেলে। ভূগর্ভ থেকে নির্গত অবিরাম জলধারই জলকষ্ট মিটিয়ে দিয়েছে গ্রামের শতাধিক পরিবারের।

ভূগোলবিদেরা বলছেন, ‘‘ওই কূপের বৈশিষ্ট্য হল, কোনও রকম পাম্প ছাড়াই ভূগর্ভস্থ জল অনবরত পাইপের মুখ দিয়ে ভূপৃষ্ঠের উপরে উঠে আসতে থাকে। শিলাস্তরের বৈশিষ্ট্য পূর্ণ গঠনের জন্য দু’টি শিলাস্তরের মধ্যে জমে থাকা ভূগর্ভস্থ জল (কয়েক দশক, এমনকী কয়েক শতক ধরে বৃষ্টির জল মাটি ও শিলা চুঁইয়ে সেখানে জমা হয়) প্রাকৃতিক চাপের ফলে উঠে আসে। জলের সমচ্চশীলতা ধর্মের জন্যই এমনটা হয়ে থাকে।’’

খয়রাশোলের রূপসপুর পঞ্চয়েতের অন্তর্গত এই গ্রামটি। সাতশোর উপর লোক বাস করেন। গ্রামে দীর্ঘ দিন ধরেই প্রবল জলকষ্ট ছিল। গ্রামবাসী সুজিত মালাকার, সন্তোষ মণ্ডল, মন্টু গড়াইরা বলছেন, ‘‘গ্রামে বহু বার গভীর নলকূপ বসানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সেটা সফল হয়নি। মূল কারণ, ২০০ ফুটের পর থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০ ফুট একটা পাথরের স্তর ছিল। সেই স্তরটিই ভেদ করা যাচ্ছিল না।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর তিনেক আগে পাশের ডেকুরা গ্রামে অপর একটি আর্টেজিও কুপ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে নিচিন্তা গ্রামে পানীয় জল আনার একটা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেটা সফল হয়নি। জলকষ্ট ছিল গ্রামের স্কুলেও। মিড-ডে মিল রান্না থেকে পানীয় জল পাওয়া— চরম আসুবিধা হতো। মাস কয়েক আগে গোটা পঞ্চায়েত নির্মল ঘোষিত হওয়ায় জেলা প্রশাসনের কর্তারা গ্রামে আসেন। তখন জেলাশাসকের কাছে স্কুল চত্বরে একটি সাব-মার্সিবল বসানোর অনুরোধ করেন গ্রামর মানুষ। আর্জি মেনে ভারী যন্ত্র দিয়ে ৫১০ ফুট গর্ত খুঁড়তেই মেলে সাফল্য। এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, ওই এলাকায় আরও কয়েকটি আর্টেজিও কূপ রয়েছে। কিন্তু সব চেয়ে সেরা কূপ নিচিন্তা গ্রামেরটাই। গ্রামের বধূ কাকলি ভাণ্ডারী, নূপুর মালাকাররা বলছেন, ‘‘হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি। আগে কী যে কষ্ট হতো, বলে বোঝাতে পারব না।’’ খুশি খুদেরাও গ্রামেরই স্কুলের পড়ুয়া দেব মণ্ডল, মিলন বাগদিরা বলছে, ‘‘কী সুন্দর গরম জল। স্নান করে খুব আরাম পাচ্ছি আমরা।’’

তবে, গ্রামবাসীর দুশ্চিন্তা এখনও যয়নি। তাঁরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ জলের বেশির ভাগটাই পাশের শাল নদীতে গিয়ে মিশছে। সেই অপচয় বন্ধ হওয়া দরকার। স্থানীয়দের পরামর্শ, অপচয় বন্ধ করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে বাড়ির দরজায় দরজায় জল পাবেন গ্রামের মানুষ। পাশাপাশি কূপের বাড়তি জল নালা বানিয়ে গ্রামের দু’টি পুকুরে জমানো গেলে ২০০ একর জমি সেচের আওতায় আসবে। ইতিমধ্যেই ব্লক প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

এই জল কী ভবিষ্যতে শেষ হয়ে যাবে? বিশ্বভারতীর ভূগোলের অধ্যাপক তথা নদী বিশেষজ্ঞ মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সেটা নির্ভর করছে, যে শিলাস্তরে জল সঞ্চিত রয়েছে, তার জলধারণের ক্ষমতার উপর। পরীক্ষার মাধ্যমে সেটাও জানা সম্ভব। তবে, এটুকু বলা যায়, ওই ভৌমজল অত্যন্ত মূল্যবান। সেই জল ধরে রেখে ব্যবহার করাই শ্রেয়।’’ খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় দাস জানান, গ্রামের মানুষ যা চাইছেন, তার যুক্তি রয়েছে। তাঁরা খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ করব।

Water Crisis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy