বিতর্কে: বেড়ো গ্রামের মন্দিরের পাশের সেই পাহাড়। নিজস্ব চিত্র
পাহাড় কেটে পাথর বের করার সরকারি প্রকল্প ঘিরে সংশয় তৈরি হয়েছে রঘুনাথপুরের বেড়ো গ্রামে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পাহাড়ের নীচের চণ্ডী মন্দির রক্ষা করার দাবি তুলে পাহাড় কাটা বন্ধ করার দাবি তুলেছেন কিছু গ্রামবাসী। রবিবার বিকেলে বেড়ো গ্রামের চণ্ডী মন্দিরের সামনে ওই দাবিতে সভা করেন শতাধিক গ্রামবাসী। তবে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি প্রকল্প কোনও মতেই বন্ধ করা চলবে না, পাল্টা দাবি তুলেছে আরও কিছু গ্রামবাসী। মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেড়ো গ্রামের কিছু বাসিন্দা পাহাড় কাটার সরকারি প্রকল্প বন্ধ করার দাবি তুলেছেন বলে শুনেছি। বিষয়টি জেলাশাসককে জানানো হয়েছে। ওঁরা চাইলে প্রশাসন আলোচনায় বসবে।’’
রঘুনাথপুর ১ ব্লক এলাকার বেড়ো ও খাজুরা পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে গ্রানাইট হাব তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে রঘুনাথপুরে গ্রানাইট হাব তৈরির কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই ওই এলাকায় পাহাড় কেটে গ্রানাইট পাথর বের করার প্রকল্প রুপায়ণ করছে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ মাইনস অ্যান্ড মিনারেল ডেভলপমেন্ট ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড (এমডিটিসি)। তবে পাহাড় কাটার কাজে প্রাথমিক কিছু বাধা পাচ্ছে এমডিটিসি। খাজুরা পঞ্চায়েত এলাকার আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম কুইলাতোড়াতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের আপত্তিতে পাহাড় কাটার কাজ শুরুই করা যায়নি। তবে বেড়ো গ্রামের চণ্ডী পাহাড়ের ক্ষেত্রে এত দিন কোনও সমস্যা ছিল না। প্রায় পাঁচ মাস ধরে পাহাড়ের একাংশে পাথর বের করার কাজ চলছে সেখানে।
এর মধ্যেই ‘চণ্ডী মেলা উন্নয়ন কমিটি’ চণ্ডী মন্দিরের লাগোয়া পাহাড় কাটা চলবে না বলে দাবি তুলেছে। ফলে ওই এলাকায় প্রকল্প নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। রবিবার চণ্ডী মন্দিরের লাগোয়া মাঠে ওই দাবি নিয়ে সভায় আবার দেখা গিয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় কয়েকজন নেতা কর্মীকে। তবে মেলা উন্নয়ন কমিটির দাবি, ওই কমিটি পুরোপুরি অরাজনৈতিক। কমিটির সদস্য কেশব আচারিয়া বলেন, ‘‘বেড়োর ওই এলাকা পুরোটাই পাহাড়ে ঘেরা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে পাহাড় কেটে ফেললে।” পাহাড়ের গায়ে স্থানীয় লোকজন গত কয়েক দশক ধরে প্রচুর গাছ লাগিয়েছেন। পাহাড় কাটা হলে সেই গাছ কাটা পড়বে। তাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে অভিযোগ তুলেছে কমিটি। তাদের দাবি, শুধু বেড়ো গ্রামের পাহাড় নয়, গোটা পঞ্চায়েত এলাকাতেই পাহাড় কেটে পাথর বের করা চলবে না। কেশববাবু বলেন, ‘‘পাহাড় কাটার ফলে এখন থেকেই বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। শতাব্দী প্রাচীন চণ্ডী মন্দিরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’
তবে ঘটনা হল, গ্রামেরই অনেক বাসিন্দা চাইছেন বেড়োতে প্রকল্পের কাজ চলুক। চণ্ডী মন্দিরের সেবাইত দ্বারকানাথ আচার্য গোস্বামীও তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন। মেলা উন্নয়ন কমিটি যখন পুলিশের মাধ্যমে মহকুমাশাসকের কাছে কাজ বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছে, তখন দ্বারকানাথবাবুর উদ্যোগে কাজ চালু রাখার দাবিতে গ্রামে শুরু হয়েছিল গণস্বাক্ষর সংগ্রহ। সূত্রের খবর, হাজারের বেশি গ্রামবাসী কাজ চালু রাখার দাবিতে সই করেছেন। দ্বারকানাথবাবু বলেন, ‘‘এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এই প্রকল্প দরকার। ইতিমধ্যেই স্থানীয় যুবকরা কাজ পেতে শুরু করেছেন। আরও মানুষ পাবেন। গ্রানাইট হাব হলে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নতি হবে।’’
বেড়ো গ্রামের পাহাড় কাটার কাজে চণ্ডী মন্দির কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা বলে দাবি করেছেন দ্বারকানাথবাবু। এমডিটিসি সূত্রেও জানা গিয়েছে, বেড়ো পাহাড়টি প্রায় ৪৩ একর জমির উপরে রয়েছে। এখন মন্দিরের অপর প্রান্তে মাত্র এক একর জমিতে কাজ চলছে। ফলে চণ্ডী মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা অমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর ১ ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েত এলাকায় গ্রানাইট হাব তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই এলাকায় সরকারি প্রকল্পের কাজ চলবে। আমাদের দলের কেউ প্রকল্প বন্ধে ইন্ধন যোগালে তাদের বিরুদ্ধে দলগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy