স্মরণ: সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। নিজস্ব চিত্র
রাজনৈতিক নেতার তকমা আঁটা কেপি সিংহ দেওয়ের অন্য পরিচয় উঠে এল তাঁর স্মরণসভায়। এই মানুষটিই যে একদিন মানুষখেকো চিতাবাঘের হাত থেকে দাদাকে বাঁচাতে বন্দুক ধরেছিল, সে কাহিনি অনেকেরই অজানা। স্মৃতির সিন্দুক খুলে সেই গোপন খবরই এ দিন জনতাকে বিলিয়ে দিলেন তাঁর এক বন্ধু।
রবিবার পুরুলিয়া নিস্তারিণী মহিলা কলেজ প্রেক্ষাগৃহে তৃণমূল আয়োজিত এই নেতার স্মরণসভায় কেপির বন্ধু ব্যবসায়ী রাতুল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১৯৮২ সালে পুরুলিয়ার জয়পুরে লোকালয়ে একবার চিতাবাঘ ঢুকে লোকজনের উপর হামলা চালাচ্ছিল। প্রশাসন ও বন দফতরের অনুরোধে কেপি, তাঁর দাদা জগদানন্দ প্রসাদ সিংহ দেও, রাতুলবাবু সেখানে যান। তখন ঘুমপাড়ানি গুলির ব্যবহার ছিল না। ডিএফও বাঘটিকে মেরে ফলতে বলেছিলেন। রাতুলবাবু বলেন, ‘‘কেপির দাদা জগুদা চিতাবাঘটিকে মারবেন বলে বন্দুক উঁচিয়ে এগিয়ে যেতেই ঝোপ থেকে বাঘটা তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি বন্দুক দিয়ে বাঘটাকে ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বন্দুকটা হঠাৎ ভেঙে গেল। পুলিশও ছিল। কিন্তু কেউই বন্দুক তুলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। যদি গুলিটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে জগুদার গায়ে লাগে! সেই সময় দেখি, কেপি পরপর দুটো গুলি ছুড়ে বাঘটাকে মাটিতে ফেলে দিল। দাদার জীবনও রক্ষা হল।’’
শুধু তাই নয়, খেলাধুলো নিয়েও তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক তথা পুরুলিয়ার প্রাক্তন সাংসদ নরহরি মাহাতোর কথায়, ‘‘১৯৮২ সালে দিল্লিতে কেপিদা রোজ আমাকে এশিয়ান গেমস দেখাতে মাঠে নিয়ে যেতেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা পুরুলিয়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান কৃষ্ণপদ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘আমি মানভূম ক্রীড়া সংস্থার পদে ছিলাম। মাঠে জলের সমস্যা চলছিল। কেপি তখন বিধায়ক। তাঁকে গিয়ে ধরলাম। তিনি এক কথায় কাজ করে দিয়েছিলেন।’’
কেপিকে ঘিরে নানা কথা তুলে ধরেন জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়, আরএসপির জেলা সম্পাদক অত্রি চৌধুরী, বিজেপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিবেক রঙ্গা, তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো, মন্ত্রী সন্ধ্যারানি ়টুডু। এসেছিলেন সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সুবলচন্দ্র দে। তিনি ধরিয়ে দেন সেই কথা— ‘‘একজন সফল মানুষের পিছনে একজন নারীর ত্যাগ থাকে। সেই ত্যাগ যিনি করেছেন তাঁকেও শ্রদ্ধার্পণ করছি।’’ কেপির স্ত্রীকেও শ্রদ্ধা জানান।
ফেরার পথে দলের অনেক কর্মীকেই বলতে শোনা গিয়েছে, এ দিন কেপিদাকে যে সম্মান দেখানো হল, শেষ পর্বে দলের একাংশ সেটুকু আগে দেখালে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মানুষটাকে চলে যেতে হতো না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy