শোরগোল: বাঁকুড়ার কাঞ্চনপুর হাইস্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে চাকরিপ্রার্থীদের বোঝাচ্ছে পুলিশ। রবিবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
প্রশ্নপত্র কম পৌঁছনোর অভিযোগকে ঘিরে তেতে উঠল পরীক্ষাকেন্দ্র। পরীক্ষা পরিচালনায় অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখালেন চাকরিপ্রার্থীরা। অনেকে পরীক্ষা না দিয়ে ফিরে গেলেন। রবিবার পাবলিক সার্ভিক কমিশনের (পিএসসি) আয়োজিত খাদ্য সরবরাহ দফতরের কর্মী নিয়োগের পরীক্ষাকে ঘিরে গোলমাল হল বাঁকুড়ার কাঞ্চনপুর উচ্চবিদ্যালয়ে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ নামিয়ে বিক্ষোভকারীদের সামাল দেয় প্রশাসন।
সারা রাজ্যের সঙ্গেই এ দিন বাঁকুড়া জেলার বেশ কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে খাদ্য দফতরের সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষাকেন্দ্র সূত্রে জানা যাচ্ছে, দুপুর ১টা নাগাদ পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার্থীরা সবাই সময়মতো এসে গিয়েছিলেন। অথচ, পরীক্ষা শুরুর প্রায় আধ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও প্রশ্নপত্র বিলি করা হয়নি বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ হয়ে স্কুল চত্বরেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পরীক্ষার্থীরা।
খবর পেয়ে বাঁকুড়া সদর থানার আইসি রাজর্ষি দত্তের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিক্ষোভকারী পরীক্ষার্থীদের জোর করে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে ঢোকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। যদিও পুলিশের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। শেষে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরে দুপুর ২টো নাগাদ পরীক্ষা শুরু হয়। যদিও বহু পরীক্ষার্থীই শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় বসেননি। স্কুল সূত্রে খবর, এ দিন এই স্কুলে ২২০ জনের পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছেন ১১১ জন।
এমন সমস্যা কেন হল? এ নিয়ে কাঞ্চনপুর হাইস্কুলের শিক্ষকেরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক দাবি করেন, প্রশ্নপত্র বিলি করার প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে দেখা যায়, মোট পরীক্ষার্থীর তুলনায় অনেক কম প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে। যথেষ্ট সংখ্যায় প্রশ্নপত্র না আসা পর্যন্ত বিলি করার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘটনাটি পরীক্ষার আয়োজকদের জানানো হয়। পরে অন্য একটি পরীক্ষাগ্রহণ কেন্দ্রের বাড়তি কিছু প্রশ্নপত্র নিয়ে এসে পরীক্ষা শুরু করা হয়। দেওয়া হয় বাড়তি সময়।
গোটা ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে অবশ্য প্রশ্নের মুখে পড়ছে জেলা প্রশাসন। জেলার শিক্ষক মহলের একাংশের দাবি, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব প্রশাসনেরই। পরীক্ষার আগেই জেলার ট্রেজারি অফিসে প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই প্রশ্নপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর দায়িত্ব প্রশাসনেরই।
এ দিন কাঞ্চনপুর হাইস্কুল ছাড়া অন্য কোনও পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে কোনও ধরনের সমস্যার অভিযোগ ওঠেনি। কাঞ্চনপুর হাইস্কুলে এমন কেন ঘটল, জানতে চেয়ে বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস-কে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপেও জানতে চেয়েও জবাব মেলেনি।
ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা অবশ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না। কাঞ্চনপুর হাইস্কুলে পরীক্ষা দেওয়া সোনামুখীর পাঁচালের এক পরীক্ষার্থী বলেন, “কাকভোরে ঘুম থেকে উঠে বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে আমরা পরীক্ষা দিতে এসেছি। অথচ প্রশাসন ঠিক সময়ে প্রশ্নপত্রটাই আমাদের হাতে তুলে দিতে পারল না! শেষে আমরা যখন পরীক্ষাকেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছি, তখন পুলিশ দিয়ে জোর করে আমাদের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। ধস্তাধস্তিও করা হয়েছে।”
সিমলাপালের শরদিন্দু সিংহ মহাপাত্র পরীক্ষায় বসেননি বলে দাবি করেছেন। তাঁর আক্ষেপ, “এত বড় একটি পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে একটুও সতর্কতা নেয়নি প্রশাসন? প্রশ্নপত্র পাচ্ছি না। পুলিশ দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ক্ষোভে আর পরীক্ষা দিতে ঢুকিনি।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তার অবশ্য আশ্বাস, ‘‘এমন সমস্যা কেন হল খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও-এর দাবি, ‘‘পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকানোর জন্য ধাক্কাধাক্কি করা হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy