২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকে গত লোকসভা নির্বাচন—এই পর্বে হওয়া সমস্ত ভোটে জেলার ন’টি বিধানসভা এলাকার বুথভিত্তিক পর্যালোচনা শুরু করছে জেলা তৃণমূল। পাশাপাশি, আগামী বিধানসভা ভোটের আগে অঞ্চল থেকে জেলাস্তর পর্যন্ত সম্মেলন আয়োজনের বিষয়টিও প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে জেলা নেতৃত্বের তরফে দলের ব্লক ও শহর সভাপতিদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, ওই সময়ে বিভিন্ন ভোটে ন’টি বিধানসভার মূলত যে সব বুথে দলের ফল খারাপ হয়েছে, সেগুলিকে চিহ্নিত করে তার পর্যালোচনা রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে ব্লক ও শহর সভাপতিদের কাছে। মানুষের চাহিদা মেনে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হলেও কেন কিছু এলাকায় দলের ভরাডুবি হচ্ছে, তা দেখাই এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য। দলের জেলার এক শীর্ষ নেতা বলেন, “যে বুথে পরপর দলের বিপর্যয় হয়েছে, সেখানে মানুষের অসন্তোষের কারণ খতিয়ে দেখা হবে। দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা না কি অন্য কোন কারণ, সব খতিয়ে দেখা হবে।”
২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে জেলার সিংহভাগ পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে তৃণমূল ক্ষমতা দখল করলেও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের কাছে হারতে হয়। একুশের বিধানসভা ভোটেও ছ’টি কেন্দ্রে জেতে বিজেপি। তেইশের পঞ্চায়েত ভোটে জেলা জুড়ে তৃণমূল সাফল্য পেলেও চব্বিশের লোকসভা ভোটে ফের পুরুলিয়া কেন্দ্রে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে। দলের নিচুতলার এক কর্মীর কথায়, “ভোটের সময়ে উদয়াস্ত খেটে কর্মীরা যাঁদের জিতিয়ে আনছেন, দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তো তাঁদেরই এলাকার মানুষজনকে জবাবদিহি করতে হয়। রাজ্য সরকার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন-সহ বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে দিলেও দলেরই ক্ষমতাসীন নেতাদের একাংশের দুর্নীতিতে তা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। এই খবর যে শীর্ষ নেতৃত্বের কানে পৌঁছয় না, তা নয়। কিন্তু পরিস্থিতির বড় একটা হেরফের হয় না।”
আগামী বিধানসভা ভোটের আগে, চলতি বছরেই পঞ্চায়েত থেকে জেলা, তিনটি স্তরেই সম্মেলনের ভাবনা রয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। দলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “বুথস্তরে বৈঠকের পরে আঞ্চলিক অর্থাৎ পঞ্চায়েত স্তরে সম্মেলন হবে। পরে ব্লক ও শেষে হবে জেলা সম্মেলন। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলে বুথ স্তরের বৈঠক শুরু হবে। তবে সম্মেলনের সময় দলে আলোচনার পরেই ঠিক হবে।” তিনি আরও জানান, এ ছাড়া প্রতি বুথে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কর্মীদের রেখে ন্যূনতম ১৫ জনের বুথ কমিটি গড়া হবে। কমিটিতে দলের পুরনো কর্মীদেরও রাখা হবে।
দল সূত্রে খবর, গত দু’টি লোকসভা ভোটের পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে বুথস্তরে কর্মীদের মাটি কামড়ে পড়ে থাকার ঘটনায় দলের ফল ভাল হয়েছে। আগামী বিধানসভা ভোটের আগেও সেই রণনীতি সামনে রেখে নতুন করে সাংগঠনিক কাজকর্ম শুরু হচ্ছে। বুথভিত্তিক পর্যালোচনা রিপোর্ট চাওয়া নিয়ে জেলা সভাপতির দাবি, “দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সাংগঠনিক বিষয়ে কিছু নির্দেশ রয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)