ধৃতদের হাজির করালেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার। —নিজস্ব চিত্র।
পাশাপাশি তিনটি দোকান। এক পাশের দোকানি গুলিতে নিহত। মাস খানেকের ব্যবধানে অন্য পাশের দোকানিও গুলিবিদ্ধ হন। দুই দোকানিকে গুলি করার ঘটনায় পুলিশ শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করল মাঝের দোকানিকে। দু’পাশের দোকানিদের সঙ্গে গোলমালেই ওই মাঝের দোকানি লোকজন নিয়ে ওই কাণ্ড ঘটায় বলে দাবি পুলিশের। পুরুলিয়া শহরের রেনি রোডের ঘটনা।
রবিবার ওই চার জনকে হাজির করে তদন্তের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া। জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘তদন্তে নেমে পুলিশ একটি খুনের ঘটনার সঙ্গে অন্য একটি গুলি-কাণ্ডের জড়িতদের গ্রেফতার করেছে। ধৃতেরা হল রেনি রোডের দোকানি অসীমকুমার মুখোপাধ্যায়, গোপাল গৌর, বিশাল চট্টোপাধ্যায় ও সুরজ কর্মকার। গোপাল ঝাড়খণ্ডের চান্ডিলের বাসিন্দা। অন্য তিন জন পুরুলিয়া সদর থানা এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ জুন পুরুলিয়া শহরের রেনি রোড এলাকায় জিতেন রজক নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। তিনি রাতে দোকান বন্ধ করে নিজের মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার পথে পিছন থেকে মোটরবাইক নিয়ে ধাওয়া করে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। গুলি তাঁর চোয়ালে লাগে। তবে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
তদন্তকারীদের দাবি, শহরের অলঙ্গিডাঙা মোড়ে যেখানে জিতেন রজকের জামাকাপড় ইস্ত্রি করার দোকান রয়েছে, তার পাশেই হুড়া থানার লধুড়কার বাসিন্দা অসীম মুখোপাধ্যায়ের দোকান। বেশ কিছুদিন আগে অসীমের সঙ্গে জিতেনের মতান্তর হয়। অসীমের অন্য পাশে দোকান ছিল শহরেরই বাসিন্দা তপন দে-র। দু’জনেই ফটোকপি ও মোবাইলের জিনিসপত্র বিক্রি করতেন। পুলিশের দাবি, ধরা পড়ার পরে জেরায় অসীম স্বীকার করেছে এই দু’জনের জন্য তাঁর ব্যবসা তেমন জমছিল না বলে তার ধারণা হয়। তখনই সে ঠিক করে দু’জনকে একেবারেই সরিয়ে দেবে।
সেই মতো দু’জনকেই খুনের পরিকল্পনা করে বেশ কিছু দিন আগে ঝাড়খণ্ডের টাটানগরে তাঁর সঙ্গে আলাপ হওয়া গোপাল গৌরের সহায়তা নেয়। সঙ্গে দেয় বাকি দু’জন। পুলিশের দাবি, তপনকে গুলি করেছে অসীম। তবে জিতেনকে গুলি করে বিশাল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১০ জুন রাত প্রায় ১১টা নাগাদ শহরের গাড়িখানা এলাকায় একটি রাস্তার উপরে তপন দে নামে এক ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পাশে তাঁর সাইকেল পড়েছিল। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের মনে হয়েছিল, দুর্ঘটনা। এক পুলিশ কর্তা জানান, কানের পাশে ক্ষত থাকলেও প্রথমে খুনের ঘটনা বলে মনে হয়নি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ওই ক্ষত গুলির। শরীরের মধ্য গুলি পাওয়া যায়নি। গুলি গলার পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, কে, কেন গুলি চালিয়েছে প্রথমে পুলিশ আঁচ করতে পারেনি।
এরই মধ্যে গুলি-কাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অসীমের সঙ্গে জিতেনের বচসা হয়েছিল। সেই সূত্রে পুলিশ অসীমকে জেরা করে। কিন্তু, তেমন প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের দাবি, অসীমের বিরুদ্ধে আগেও ছিনতাই-সহ অসামাজিক কাজের অভিযোগ থাকায় পুলিশ তার মোবাইলের নম্বর ধরে সূত্র খোঁজার কাজ চালিয়ে যায়। তখনই জানা যায়, ঘটনার দিন তো বটেই আগেও বেশ কয়েক বার ঝাড়খণ্ডের একটি মোবাইল নম্বরের সঙ্গে অসীমের যোগাযোগ হয়েছে। ঘটনাচক্রে, জিতেনকে গুলি করার দিন অসীম ও ঝাড়খণ্ডের ওই নম্বর একই লোকেশনে ছিল।
সেই সূত্রেই ঘটনার দু’সপ্তাহ পরে ঝাড়খণ্ডের আদিত্যপুর থেকে পুলিশ ওই ফোন নম্বরের ব্যবহারকারী গোপাল গৌরকে আটক করে। পুলিশের দাবি, জেরায় সে কবুল করে অসীমের কথায় সেই জিতেনকে গুলি চালিয়েছিল। শুধু তাই নয়, অসীম তাদের নিয়ে আগে তপনকে গুলি চালিয়ে খুন করে। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ওই দুই কাণ্ডে জড়িত বাকি দু’জনকেও একে একে ধরে। জেরায় ধৃতেরা স্বীকার করেছে তাঁরা একটি দল গঠনের মতলবেও ছিল।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও, দু’টি ঘটনার মাস্টার মাইন্ড অসীম গা ঢাকা দিয়েছিল। পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেরাচ্ছিল।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২ অগস্ট পুলিশের কাছে খবর আসে, ওড়িশা থেকে অসীম শহরে ঢুকেছে। তার টাকা-পয়সার টান পড়ায় সে শহরে ফিরবে বলে আগেই খবর আসে। পুলিশ ওঁত পেতে ছিল। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন তাকে আদালতে তোলা হলে তদন্তের জন্য পুলিশ অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। অন্যরাও বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ঝাড়খন্ডের বাসিন্দা গোপাল অন্য কোন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দু’টি ঘটনাতেই ধৃতদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, খুনের চেষ্টা ও খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy