Advertisement
১১ মে ২০২৪

ঋতু-দিনে স্কুল-কামাই, তৎপর হচ্ছে প্রশাসন

সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। তেমন ছাত্রীর সংখ্যা শতকরার নিরিখে খুব বেশি না হলেও, দেরি করেনি প্রশাসন। ইতিমধ্যেই স্কুলগুলির শৌচাগারের অবস্থা জানতে আলাদা সমীক্ষা শুরু হয়েছে।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০২:০৪
Share: Save:

শৌচাগার ব্যবহার করার মতো অবস্থায় নেই অথবা ‘বাধা’ দেয় পরিবার। তাই ঋতুস্রাবের দিনগুলিতে স্কুলমুখো হয় না পুরুলিয়ার বেশ কিছু ‘কন্যাশ্রী’।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। তেমন ছাত্রীর সংখ্যা শতকরার নিরিখে খুব বেশি না হলেও, দেরি করেনি প্রশাসন। ইতিমধ্যেই স্কুলগুলির শৌচাগারের অবস্থা জানতে আলাদা সমীক্ষা শুরু হয়েছে। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, পদক্ষেপ করা হবে।’’ প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা প্রচারে জোর দেওয়া হবে, যাতে পরিবারের তরফে ছাত্রীদের ‘ওই দিনগুলিতে’ স্কুলে যেতে বাধা দেওয়ার প্রবণতা কমে। কন্যাশ্রী মেয়েদের পারস্পরিক আলোচনাতে সমস্যার উৎস ও সমাধানের চেষ্টা হবে। ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সহযোগিতাতেও কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিল জেলা প্রশাসন। সেখানে হাজির বিভিন্ন গ্রাম ও শহরাঞ্চলের ২৭৪টি কন্যাশ্রী ক্লাবের প্রতিনিধিদের হাতে সমীক্ষার ‘ফর্ম’ দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘উদ্দেশ্য ছিল, ছাত্রীদের ঋতুস্রাব সংক্রান্ত ধারণা এবং ওই সময়ে তারা কী-কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা জানা।’’ ‘কন্যাশ্রী’দের দেওয়া উত্তর থেকে জানা যাচ্ছে, শতকরা চার জন ঋতুস্রাবের দিনগুলিতে স্কুলে যায় না। চার জনের এক জন বলেছে, স্কুলের শৌচাগার ব্যবহার করার মতো অবস্থায় নেই। শতকরা ১২ জন বলেছে পরিবারের বাধার কথা।

সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন’ ব্যবহার করে পুরুলিয়ার প্রায় ৯৭ শতাংশ ‘কন্যাশ্রী’ প্রাপক। যে তিন শতাংশ ‘ন্যাপকিন’ ব্যবহার করে না, তাদের মধ্যে শতকরা ৭১ জনই কারণ হিসাবে চড়া দামের কথা উল্লেখ করেছে। যারা ‘ন্যাপকিন’ ব্যবহার করে চড়া দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারাও। জেলাশাসক জানান, কম দামে যাতে সমস্ত ছাত্রী ‘ন্যাপকিন’ পায়, তা নিশ্চিত করতে চাইছে প্রশাসন। আর সে কাজে ‘তুরুপের তাস’ করা হবে স্বনির্ভর দলগুলিকে।

সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে পুরুলিয়ার কিছু স্কুলে ‘ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন’ বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি নিয়মিত ‘রিফিল’ করা হত না বলেই অভিযোগ। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পুরুলিয়া ১ এবং পুরুলিয়া ২ ব্লকে একটি করে স্বনির্ভর দল এখন ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন’ তৈরি করে। সেই ‘ন্যাপকিন’ নিয়ে স্বনির্ভর দলের মহিলারা কাছের কয়েকটি স্কুলে যান। ‘ইউনিসেফ’ ও প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ওই স্কুলগুলিতে প্রতি ক্লাসে কোনও এক ছাত্রীকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে। তারাই সহপাঠীদের থেকে টাকা তুলে এক সঙ্গে ‘ন্যাপকিন’ কিনে রাখে। জেলার সমস্ত ব্লকেই যাতে এই বন্দোবস্ত পরে চালু করা যায়, সে ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা করছে প্রশাসন।

জেলাশাসকের আশ্বাস, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে কাজে লাগিয়ে বাজারের থেকে কম দামে ছাত্রীদের কাছে ‘ন্যাপকিন’ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘ঋতুস্রাব যে জীবনচক্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, অধিকাংশ ছাত্রীরই সে ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা আছে। কিছু সমস্যা রয়েছে। তা কাটিয়ে ওঠা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Girl Menstruation Kanyashree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE