Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
একশো দিনের কাজ
100 day's work

গতি কোথায়, প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন

বহু পরিযায়ী শ্রমিকই বাইরে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে এসেছেন। অথচ, এখানে এসেও তাঁরা কাজ না পাওয়ায় সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২১ ০৭:৩৩
Share: Save:

করোনা মোকাবিলায় রাজ্যে কড়াকড়ি চলছে। তবে গ্রামের মানুষের কাজ নিশ্চিত করতে ছাড় রয়েছে একশো দিনের প্রকল্পে। অথচ, এই পরিস্থিতিতে মানুষের রুটিরুজির ব্যবস্থা করতে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন একশো দিনের প্রকল্পে গতি বাড়াচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। যদিও প্রশাসনের দাবি, আরও মানুষকে কাজে যুক্ত করতে বিডিও-দের বলা হয়েছে।

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি অর্থবর্ষে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলায় পরিবারপিছু একশো দিনের কাজ দেওয়া হয়েছে ১৭.৫৯ দিন। জেলায় প্রায় ১০ লক্ষ একশো দিনের প্রকল্পের জব-কার্ড প্রাপক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেবল ৮৩ হাজার মানুষই চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত কাজ পেয়েছেন।

তবে কি এই প্রকল্পে কাজের আগ্রহ কম? যদিও বাস্তব ছবিটা তা নয় বলে দাবি করছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজনেরা।

করোনা পরিস্থিতিতে বহু পরিযায়ী শ্রমিকই বাইরে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে এসেছেন। অথচ, এখানে এসেও তাঁরা কাজ না পাওয়ায় সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ছাতনার খড়বনা গ্রামের বাসিন্দা সরোজ কুণ্ডু দিল্লিতে একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন। তিনি বলেন, “দিল্লিতে লকডাউনের জন্য গ্রামে ফিরে এসেছি। এখানে কাজের খোঁজে নানা জায়গায় হন্যে হয়ে ঘুরছি। কিন্তু কোথাও কাজ নেই। আমার উপরেই গোটা পরিবার নির্ভরশীল। এই অবস্থায় একশো দিনের কাজ পেলে খুব সুবিধা হত।”

একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন ইঁদপুরের হিরাশোল গ্রামের বাসিন্দা মৃন্ময় তন্তুবায়। তিনি আমদাবাদে সিমেন্টের বস্তা তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় লকডাউন ঘোষণার আশঙ্কায় বাড়ি ফিরেছেন। মৃন্ময়বাবু বলেন, “হাতে কোনও কাজ নেই। এখন একশো দিনের কাজ পেলে, সমস্যা অনেকটাই মিটত।”

ছাতনার চিনাবাড়ি পঞ্চায়েতের আগয়ার বাসিন্দা শান্তি রায় ওড়িশায় দিনমজুরির কাজ করতেন। তিনি করোনা পরিস্থিতির জন্য গ্রামে ফিরেছেন। শান্তিবাবু বলেন, “একশো দিনের কাজের দাবিতে স্থানীয় পঞ্চায়েতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পঞ্চায়েত অফিস বন্ধ। কোথাও কাজ পাচ্ছি না।” স্থানীয় চিনাবাড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান চণ্ডীচরণ রক্ষিতের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত খোলা। তবে একশো দিনের কাজ ভোটের সময় সে ভাবে হয়নি। নতুন করে সবে কাজ শুরু হয়েছে। কেউ এলেই কাজ পাবেন।’’

পুরুলিয়া জেলায় একশো দিনের কাজের গতি বাড়াতে প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতের সংসদ স্তরে দল গড়ে কাজে আগ্রহী মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছে জেলা প্রশাসন। তাঁদের আবেদনপত্র দিয়ে তার ভিত্তিতে সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে কাজ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়ায় এমন কোনও উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি বলে বিরোধীদের দাবি।

গত বছর লকডাউনে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘কর্মদিশা’ কর্মসূচি নিয়ে প্রতিটি পঞ্চায়েতের ২০০টি পরিবারকে একশো দিনের কাজ দেওয়া হয়েছিল। তাতে কাজের গতিও অনেকটাই বেড়েছিল। এ বার তেমন উদ্যোগ কি নেওয়া হচ্ছে? এ নিয়ে বাঁকুড়ার জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ারকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজের। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “সমস্ত বিডিওকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মতো একশো দিনের প্রকল্পের পরিকল্পনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

তবে এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনকেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে বলে দাবি করছেন বিরোধীরা। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকেরা জেলায় ফিরে এসে কাজ পাচ্ছেন না। তাঁদের সংসার চালাতে অসুবিধা হচ্ছে। অথচ, প্রশাসন জেলায় একশো দিনের কাজের গতি বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছে না। এতে ওই প্রকল্পের সুফল থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।”

সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী বলেন, “বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শ্রমিকেরা কাজ হারাচ্ছেন। অথচ, একশো দিনের কাজও পাচ্ছেন না। অবিলম্বে প্রশাসনের একশো দিনের কাজের গতি বাড়াতে জোর দেওয়া উচিত।”

বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান শুভাশিস বটব্যালের দাবি, “দীর্ঘ সময় ধরে ভোট হওয়ায় এবং করোনা পরিস্থিতির জন্যই একশো দিনের কাজে কিছু সমস্যা হচ্ছে। কাজের গতি বাড়াতে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব। তবে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে। এতে মানুষের খাবারের সমস্যা অনেকটাই মিটছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

100 day's work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE