Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
ফাঁপরে পুরসভা

টাকায় টান, কর বকেয়া প্রায় কোটি টাকা

পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের মধ্যে রাজ্য সরকারের গোটা কুড়ি দফতর রয়েছে।

পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, কুড়িটি অফিস দীর্ঘ দিন ধরে কর মেটায়নি।

পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, কুড়িটি অফিস দীর্ঘ দিন ধরে কর মেটায়নি।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৪
Share: Save:

পুরসভাকে কোনও সরকারি দফতর কর মেটায়নি আঠারো বছর ধরে। কোন সরকারি অফিসের আবার পনেরো বছরের কর বকেয়া। দীর্ঘ দিন অনাদায়ী কর। আর্থিক টানাটানিতে পড়েছে রঘুনাথপুর পুরসভায় সূত্রের খবর, পুরএলাকার মধ্যে থাকা সরকারি অফিসগুলি থেকে ষাট লক্ষেরও বেশি টাকার কর আদায় হয়নি। তবে পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, পুরসভার কাছে কর বাবদ সরকারি দফতরগুলির প্রায় এক কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ছোট পুরসভা। নিজস্ব আয় সেই অর্থে কিছু নেই। বিভিন্ন সরকারি দফতর ও ব্যক্তিগত ক্ষেত্রগুলির হোল্ডিং ট্যাক্সই ভরসা পুরসভার। সরকারি অফিসগুলি থেকে এক কোটি টাকার কাছাকাছি কর বকেয়া থাকায় পুরসভার আর্থিক সঙ্কট কিছুতেই মেটানো যাচ্ছে না।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের মধ্যে রাজ্য সরকারের গোটা কুড়ি দফতর রয়েছে। সেগুলি থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স পাওয়ার কথা পুরসভার। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, ওই কুড়িটি অফিস দীর্ঘ দিন ধরে কর মেটায়নি। ফল হয়নি অনেক বার নোটিস দিয়েও। পুরসভা সূত্রের খবর, বকেয়া করের নিরিখে সবার উপরে রয়েছে রঘুনাথপুর ১ ব্লক অফিস। পুরসভার দাবি, আঠারো বছর ধরে তারা হোল্ডিং ট্যাক্স মেটায়নি। শুধু ব্লক অফিসের থেকেই পুরসভার পাওনা সাড়ে ৩২ লক্ষের বেশি টাকা। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে সেচ দফতর। কুড়ি বছর ধরে হোল্ডিং ট্যাক্স মেটায়নি তারা। পুরসভার দাবি, ৯ লক্ষ টাকা সেচ দফতরের বকেয়া। কর বকেয়া রাখার তালিকায় রয়েছে পূর্ত দফতর, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর, বনদফতর, পশু চিকিৎসালয়, ব্লক স্বাস্থ্য দফতর।

পুরসভার নিজস্ব আয়েই অস্থায়ী কর্মীদের বেতন হয়। করের টাকাতেই পুরসভা মেটায় শহর জুড়ে থাকা ছোট-বড় পথবাতির বিদ্যুতের বিল। আবার পুরসভার স্থায়ী কর্মীদের বেতনের কুড়ি শতাংশ ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশনের আশি শতাংশ টাকা আদায় করা কর থেকেই দিতে হয় পুরসভাকে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে সেখানে অস্থায়ী শ্রমিক ও কর্মীর সংখ্যা প্রায় দুশো। স্থায়ী কর্মী রয়েছেন ষোলো জন। পেনশন পান ৬০ জন। পুরসভা সূত্রের খবর, পথবাতির বিদ্যুতের বিল মেটাতেই তিন মাসে কুড়ি থেকে পঁচিশ লক্ষ টাকা লেগে যায়। কর্মীদের বেতন, গাড়ির তেল আর অন্য খরচ মিলিয়ে বছরের খরচ প্রায় দেড় কোটি টাকা ছুঁয়ে যায়। কিন্তু কর বাবদ আদয় হয় মেরেকেটে তার কুড়ি শতাংশ।

পুরপ্রধানের দাবি, এমন নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থায় সরকারি অফিস সময়ে কর মিটিয়ে দিলে অনেক সমস্যার সুরাহা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা এলাকার মধ্যে ছোট বা বড় কারখানা নেই। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হাতে গোনা। শহরের ছ’হাজার বাড়ির প্রায় অর্ধেকে থাকেন দারিদ্র সীমার নীচের মানুষজন। ফলে পুরসভার নিজস্ব আয় সেই অর্থে কিছুই নেই। সরকারি অফিসগুলির বকেয়া প্রায় কোটি টাকার কর পাওয়া গেলে অনেক কাজই করা সম্ভব হত।”

হোল্ডিং ট্যাক্স না দেওয়ার বিষয়ে কী বক্তব্য সরকারি অফিসগুলির? পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অজয় ভট্টাচার্যর দাবি, পুরসভা বকেয়া করের জন্য চিঠি দিলেই তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সেটা পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে টাকা এলেই কর মিটিয়ে দেওয়া হয়। অজয়বাবুর দাবি, ‘‘বর্তমানে কর বকেয়া নেই।’’ সেচ দফতরের রঘুনাথপুর মহকুমার বাস্তুকার সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বকেয়া করের বিষয়ে পুরসভার চিঠি পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।” কর বকেয়া থাকার বিষয়ে ‘টেকনিকাল সমস্যা’-র কথা বলছেন বিডিও (রঘুনাথপুর ১) অনির্বাণ মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের পুরসভার কর মেটানোর জন্য কোনও তহবিলই নেই। তাই সেখান থেকে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব তহবিল কার্যত ফাঁকা। তাই বিশাল অঙ্কের কর মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raghunathpur Municipality Raghunathpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE