সোমবার ভোরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুরি-চান্ডিল শাখার সুইসা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রেললাইনের উপরে দুই নাবালিকা-সহ তিন জনের দেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশ। ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার সন্দেহে মঙ্গলবার বাবু জান মোমিন ও বিজয় মাছুয়া নামের দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে তারা। পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া তিনটি দেহের একজন প্রাপ্তবয়স্কা মহিলার। তাঁর নাম কাজল মাছুয়া। বাকি দু’জনের এক জন কাজলের ১৩ বছর বয়সি বোন এবং অন্য জন তাঁর আট বছরের কন্যা। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে খুন বলে সন্দেহ পুলিশের।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, কাজল ও তাঁর নাবালিকা বোন এক সময় পার্শ্ববর্তী জিলিং গ্রামে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। সেখানে ইটভাটার মালিক বাবু জান মোমিনের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ও কাজলের নাবালিকা বোনের সঙ্গে ইটভাটার মুনশি বিজয় মাছুয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রবিবার বিকালে কাজল তাঁর বোন এবং মেয়েকে নিয়ে সুইসা বাজারে মোবাইল ফোন সারাতে যান। তখন তাঁদের ফোন করে সুইসা রেলস্টেশন লাগোয়া একটি নির্জন জায়গায় ডেকে পাঠান অভিযুক্তেরা। মত্ত অবস্থায় থাকা ওই দু’জনের সঙ্গে কাজল ও তাঁর বোনের বিবাদ বাধে। তার জেরেই তাঁদের খুন করা হয় বলে অনুমান পুলিশের।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে দুর্ঘটনা অথবা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য ওই তিন জনের মৃতদেহ রেললাইনে ফেলে আসার পরিকল্পনা করেন অভিযুক্তেরা। তবে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলিতে আঘাতের চিহ্ন দেখে রেল পুলিশ বুঝতে পারে যে, ট্রেন দুর্ঘটনায় ওই তিন জনের মৃত্যু হয়নি। তদন্তে নেমে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "দেহ তিনটি উদ্ধারের পর রেল পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। মঙ্গলবার রেল পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ বাবু জান মোমিন ও বিজয় মাছুয়াকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে রেল পুলিশ আরও বিশদে জানার চেষ্টা করবে।”
রেল পুলিশের খড়্গপুরের এসআরপি দেবশ্রী সান্যাল বলেন, "তদন্ত একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমরা এই ঘটনায় যুক্ত দু’জনকে গ্রেফতার করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতেরা খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতেরা জানিয়েছেন, বাবু জান মোমিনের সঙ্গে কাজলের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক ছিল বিজয় মাছুয়ার সঙ্গে কাজলের নাবালিকা বোনেরও। রবিবার সন্ধ্যায় কাজল ও তাঁর বোনের সঙ্গে বাবু জান ও বিজয়ের ব্যাপক ঝগড়া হয়। যার জেরেই ওই তিন জনকে খুন করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এই বিষয়ে আরও বিশদ জানা যাবে।”
বুধবার ধৃতদের পুরুলিয়া জেলা আদালতে হাজির করিয়ে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ।