Advertisement
E-Paper

রাস্তা না ডোবা, বন্ধ হল বাস

খানাখন্দে ভরা রাস্তায় বর্ষার জল জমে যাতায়াতের ঝুঁকি বাড়ে। এ রাজ্যে বেহাল রাস্তায় ধানের চারা লাগিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ করে এসেছে। ভিন্‌ রাজ্যে এক শিল্পী রাস্তার খন্দে কুমিরের পুতুল বসিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৯
বড়জোড়ার বাঁধকানা-দধিমুখা-জগন্নাথপুর রাস্তার এমনই দশা।—নিজস্ব চিত্র

বড়জোড়ার বাঁধকানা-দধিমুখা-জগন্নাথপুর রাস্তার এমনই দশা।—নিজস্ব চিত্র

খানাখন্দে ভরা রাস্তায় বর্ষার জল জমে যাতায়াতের ঝুঁকি বাড়ে। এ রাজ্যে বেহাল রাস্তায় ধানের চারা লাগিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ করে এসেছে। ভিন্‌ রাজ্যে এক শিল্পী রাস্তার খন্দে কুমিরের পুতুল বসিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। এই সমস্ত প্রতীকী প্রতিবাদের মধ্যেই বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল বড়জোড়ার বাঁধকানা-দধিমুখা-জগন্নাথপুর রাস্তায় বাস চলাচল।

জেলা বাস মালিক সমিতি এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্থানীয় গদারডিহি গ্রামপঞ্চায়েতের কাছে চিঠি দিয়ে রাস্তাটি অবিলম্বে সারানোর দাবি তুলেছেন। বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই সমস্ত এলাকার বাসিন্দারা।

জেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জগন্নাথপুর থেকে সারাদিনে তিনটি বাস দু’বার করে দধিমুখা এবং বাঁধকানার উপর দিয়ে যাতায়াত করে। একটি যায় বাঁকুড়া, একটি দুর্গাপুর। অন্য বাসটি সোনামুখীর রাধামোহনপুর পর্যন্ত যায়। এই তিনটি বাসের উপরই জগন্নাথপুর, দধিমুখা, গদারডিহি, বেলুট, শালডাঙা, হরেকৃষ্ণপুর, গোবিন্দপুর-সহ প্রায় ১২টি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। এলাকার ছাত্রছাত্রীদের স্কুল-কলেজে যাওয়া, চাকুরিজীবীদের অফিস-কাছারি যাওয়া—সব কিছুই নির্ভর করে থাকে এই বাসগুলির উপরে। এই রাস্তা দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন সেই সমস্ত নিত্যযাত্রী এবং সাধারণ মানুষজন। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা রাস্তা সারাইয়ের দাবি তুলে এলেও কিছুতেই টনক নড়েনি প্রশাসনের।

কিন্তু একেবারে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল? বাঁকুড়া বাসমালিক সমিতির সদস্য তথা জগন্নাথপুর-বাঁকুড়া রুটের বাস মালিক তুষারকান্তি আঢ্য জানান, বাঁধকানা থেকে জগন্নাথপুরের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। তার মধ্যে দু’ কিলোমিটার পিচ রাস্তা। বাকিটা মোরামের। খানাখন্দে জর্জরিত পিচ রাস্তাটি দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করা দায়ে হয়ে উঠেছিল। মোরামের রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ। চলতি বর্ষার গোড়া থেকেই রাস্তাটি দিয়ে যাতায়াত করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে তাঁর দাবি।

তুষারবাবু বলেন, ‘‘দধিমুখা ও জগন্নাথপুরের মাঝে বীরবাঁধের পাড়ের রাস্তা দিয়ে বাসগুলি যাতায়াত করে। রাস্তার এমন হাল হয়েছে যে যে কোনও মূহুর্তে গাড়ি উল্টে বাঁধের জলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যাত্রীদের ঝুঁকির কথা ভেবেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।’’ তাঁর দাবি, চালক ও কর্মীরাই ওই রাস্তা দিয়ে বাস নিয়ে যাতায়াত করতে অস্বীকার করেছেন। তিনটি বাসের কর্মীরা এক সঙ্গে পঞ্চায়েতে লিখিত আবেদন করেছেন রাস্তা সারাই করার জন্য। বাস মালিক সমিতির জেলা সম্পাদক দীপক সুকুল জানান, রাস্তাটি মেরামত করার দাবি জেলা প্রশাসনের কাছেও জানানো হয়েছে।

গদারডিহি এবং দধিমুখা এলাকায় দু’টি হাইস্কুল রয়েছে। শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের অনেকেই বাসে চড়ে স্কুলে যাতায়াত করেন। বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। গদারডিহি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্নেহাশিস পান জানান, তিনি নিজে প্রতিদিন বেলিয়াতোড় থেকে বাসে স্কুলে যাতায়াত করতেন। এখন ব্যস্ত সময়ে গুটিকয় ভাড়াগাড়িই যাতায়াতের ভরসা। ওই এলাকার পড়ুয়াদের অনেকেই প্রাইভেট টিউশনের জন্য বড়জোড়া এবং বেলিয়াতোড়ে যাতায়াত করে। সেই পাটও শিকেয় উঠতে বসেছে। তবে এই সমস্ত কাণ্ডের দায় তিনিও চাপিয়েছেন বেহাল রাস্তার উপরেই। স্নেহাশিসবাবু বলেন, ‘‘রাস্তার এমন হাল যে সাইকেল চালিয়ে আসাটাও কম ঝুঁকির নয়। অবিলম্বে ওই রাস্তা মেরামত করা দরকার।’’

এই পরিস্থিতিতে কী বলছে প্রশাসন? বিডিও (বড়জোড়া) পঙ্কজকুমার আচার্য বলেন, “সমস্যার কথা শুনেছি। পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনাও করেছি বিষয়টি নিয়ে। আপাতত পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে কাজ চালানোর মতো করে রাস্তা সারাই করার কথা ভাবা হয়েছে। বর্ষার পরে পূর্ণাঙ্গ মেরামতির কাজে হাত দেওয়া হবে।’’ ফের বাস কবে চলে— বেহাল পথের দিকে তাকিয়ে আপাতত সেই অপেক্ষাতেই রয়েছে গ্রামগুলি।

water logged Transports stopped
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy