Advertisement
E-Paper

থেমে গেল ঢোলবাদকের বাজনা

পুরুলিয়ার বলরামপুরের পাড়দ্দা গ্রামের কালিন্দীপাড়ায় ষষ্ঠীদের বাড়ি। কালিন্দীপাড়া নাটুয়া-নাচের জন্য খ্যাত। সেখানে একটি দলে ঢোল বাজাতেন ষষ্ঠী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৯
ছারখার: হাতির আক্রমণে মৃত ষষ্ঠী কালিন্দীর মা আলতা কালিন্দী। কোলে ষষ্ঠীর ছেলে। ছবি: সুজিত মাহাতো

ছারখার: হাতির আক্রমণে মৃত ষষ্ঠী কালিন্দীর মা আলতা কালিন্দী। কোলে ষষ্ঠীর ছেলে। ছবি: সুজিত মাহাতো

সন্ধ্যায় গ্রামে বিয়েবাড়ি রয়েছে। পেশাদার বায়েন ষষ্ঠী কালিন্দীর সেখানে ঢোল বাজাতে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগে, সকালে এলাকায় হাতি এসেছে শুনে বাবা আর ভাইকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন। হাতি পিষে মেরেছে ষষ্ঠীকে। আর তার পরেই পুরো পাড়দ্দা গ্রামের হাওয়া যেন ভারী হয়ে গিয়েছে। ষষ্ঠীর মা অলকাদেবী বলেন, ‘‘এমনটা হয়ে যাবে জানলে কাউকে বাড়ি থেকে বেরোতে দিতাম না।’’

পুরুলিয়ার বলরামপুরের পাড়দ্দা গ্রামের কালিন্দীপাড়ায় ষষ্ঠীদের বাড়ি। কালিন্দীপাড়া নাটুয়া-নাচের জন্য খ্যাত। সেখানে একটি দলে ঢোল বাজাতেন ষষ্ঠী। মঙ্গলবার সকালে বাবা নিরু কালিন্দী ও ভাই লাল্টুকে নিয়ে হাতি দেখতে বেরিয়েছিলেন। বাবা ও ভাই নিরাপদ দূরত্বে থাকলেও অন্য কয়েক জন অতি-উৎসাহীর সঙ্গে গ্রামের অদূরের জঙ্গলে ঢুকে পড়া হাতিগুলির খুব কাছে চলে যান ষষ্ঠী। হঠাৎই একটি দাঁতাল ক্ষিপ্ত হয়ে তাড়া করে। প্রত্যক্ষদর্শী দুমারি গ্রামের ভুতু সর্দার, খয়রাডি গ্রামের সুভাষ মাহাতোরা বলেন, ‘‘দাঁতালটা ছুটে এসে সজোরে ধাক্কা দেয় গাছের গায়ে। নীচে পড়ে গিয়েছিল ষষ্ঠী। ওকে পিষে মেরে ফেলে।’’ তার পরেই ভিড় পাতলা হতে থাকে। তবে উদ্ধারের পরে একপ্রস্ত হিড়িক পড়ে ষষ্ঠীর দেহের ছবি তোলার।

বরাবাজার সীমানায় বলরামপুরের পাড়দ্দা গ্রাম। ওই এলাকায় সাম্প্রতিক অতীতে হাতি দেখা যায়নি। বন দফতরের দাবি, এ দিন খবর চাউর হতেই পাড়দ্দা-সহ আশপাশের দশ-বারোটি গ্রামের কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়েছিল। পাড়াদ্দা যাওয়ার পথে দেখা গেল, কাতারে কাতারে মানুষ চলেছেন হাতি দেখতে। কেউ সাইকেলে। কেউ মোটরবাইকে। অযোধ্যা পাহাড়তলির ঘাটবেড়া-কেরোয়ার তিলাই গ্রামের বরুণ রাজোয়াড় ও জরিডি গ্রামের দুর্গাচরণ মাহাতো দশ-বারো কিলোমিটার পায়ে হেঁটে চলে এসেছেন। তাঁরা জানান, ভোরে তাঁদের গ্রামে ঢোকে হাতিরা। তখন থেকেই তাদের পিছনে হাঁটছেন।

তবু কেবলই: মৃতদেহের ছবি তোলার হিড়িক। —নিজস্ব চিত্র।

সাতসকালে থানার পুলিশ কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ছুটেছিলেন বলরামপুর থানার ওসি পঙ্কজ সিংহ। হাতির কাছে কেউ যাতে না যান সে জন্য টানা মাইকে প্রচার করেছেন। কিন্তু তার পরেও হাতির দলটিকে লোকজন যথেচ্ছ উত্যক্ত করেছে বলে পুলিশের দাবি। বন দফতর ও পুলিশ জানাচ্ছে, সব মিলিয়ে দুই দফতরের জনা পঞ্চাশ কর্মী ও হুলা-পার্টির লোকজন ছিলেন হাতিগুলির থেকে এলাকা রক্ষার জন্য। কিন্তু অতি-উৎসাহীদের ঢলের সামনে কার্যত দিশাহারা অবস্থা হয়ে যায় তাঁদের।

বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যে এলাকায় হাতির নিয়মিত আনাগোনা থাকে, সেখানকার বাসিন্দারা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই সচরাচর হাতির দলকে উত্যক্ত করেন না। এই এলাকায় হাতি আসে না বলেই সম্যক অভিজ্ঞতা নেই বাসিন্দাদের। এ দিন যাত্রাপথে হাতিগুলিকে কেউ পাথর ছুড়েছেন। কেউ পটকা ফাটিয়েছেন। পাড়দ্দা গ্রামে আবার লোকজন হাতির দলটির কাছে গিয়ে সানাই বাজিয়েছে আর ঢাক পিটিয়েছে। তাতেই একটি দাঁতালের মেজাজ বিগড়ে যায় বলে মনে করছেন বন-কর্তারা। তবে ষষ্ঠী নিজে ঢাক বাজাননি বলেই প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন ষষ্ঠীর স্ত্রী দয়ামণি কালিন্দী। খবর পেয়ে তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের মেন্টর অঘোর হেমব্রম ও বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাই মণ্ডল। ওই পরিবার যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায়, সে ব্যাপারে চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।

Elephant Balarampur Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy