Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খুনে জড়িত মা-ও, দাবি রিপোর্টে

সোমবার রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনে ওই রিপোর্ট পাঠিয়েছে প্রশাসন। পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামে বছর বাষট্টির সনাতন গোস্বামীর (ঠাকুর) বাড়িতে এক যুবতী তাঁর শিশুকন্যাকে নিয়ে থাকতেন। সনাতন শিশুটির শরীরে সাতটি সুচ বিদ্ধ করে রেখেছিল।

খেদ: ছেলের গ্রেফতার হওয়ার খবর পেয়ে নদিয়াড়া গ্রামের বাড়িতে সনাতনের মা। ছবি: সুজিত মাহাতো।

খেদ: ছেলের গ্রেফতার হওয়ার খবর পেয়ে নদিয়াড়া গ্রামের বাড়িতে সনাতনের মা। ছবি: সুজিত মাহাতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০১:১০
Share: Save:

শিশুকন্যাকে চক্রান্ত করেই খুন করা হয়েছে। আর তাতে সামিল ছিলেন ওই শিশুর মা। রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনে পাঠানো রিপোর্টে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন এই কথাই উল্লেখ করেছে বলে জানা গিয়েছে।

সোমবার রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনে ওই রিপোর্ট পাঠিয়েছে প্রশাসন। পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামে বছর বাষট্টির সনাতন গোস্বামীর (ঠাকুর) বাড়িতে এক যুবতী তাঁর শিশুকন্যাকে নিয়ে থাকতেন। সনাতন শিশুটির শরীরে সাতটি সুচ বিদ্ধ করে রেখেছিল। শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যদের চাপে ১১ জুলাই সনাতন এবং ওই মহিলা তাকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। শিশুর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখে চিকিৎসকদের সন্দেহ হওয়ায় ১৪ জুলাই থেকে সনাতন বেপাত্তা হয়ে যায়। ওই দিনই চাইল্ড লাইন তার বিরুদ্ধে এফআইআর করে। ২১ জুলাই এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। শিশুর মৃত্যুর পরে খুনের অভিযোগে তার মা-কে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। শনিবার রাতে উত্তরপ্রদেশ থেকে সনাতনকেও গ্রেফতার করে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের একটি দল।

শিশু মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসনকে সামাজিক তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছিল রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন। সেই মতো, পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উত্তমকুমার অধিকারির নেতৃত্বে ছ’সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে সোমবার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। উত্তমবাবু বলেন, ‘‘বিশদে তদন্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গেই কথা বলা হয়েছে। সংশোধনাগারে গিয়ে কথা বলে হয়েছে ওই শিশুর মায়ের সঙ্গেও।’’ পরে সনাতনের সঙ্গেও কথা বলে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দফতরে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সামাজিক তদন্তের রিপোর্টে শিশুটির মায়ের ভূমিকা ‘অত্যন্ত নেতিবাচক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সামাজিক তদন্তে জানা যায়, চলতি বছর ১৭ মার্চ সনাতন ওই শিশুর মা-কে বিয়ে করে নদিয়াড়া গ্রামে নিয়ে এসেছিল। শিশুটি দিদিমার কাছেই ছিল। জুনের শেষে দিদিমা তাকে নদিয়াড়ায় রেখে যান। উত্তমবাবুর দাবি, ওই শিশুর মা জানিয়েছেন তিনি এবং সনাতন বৃন্দাবনে চলে যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন। তদন্তকারীদের দাবি, তার জন্য ‘অসাধু ব্যবসা’ করে টাকা জোগাড়ের ফন্দি করেছিলেন দু’জনে। কিন্তু শিশুটি তাঁদের ‘পথের কাঁটা’ হয়ে পড়ে। সেই জন্যই তাকে খুন করার চক্রান্ত করা হয়।

চক্রান্তে শিশুর মা সামিল ছিলেন দাবি করছেন সনাতনের পরিজনেরাও। সনাতনের গ্রেফতার হওয়ার খবর পৌঁছে গিয়েছে তাঁর বাড়িতে। সোমবার নদিয়াড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, সনাতনের বাড়িতে ভিড় করেছেন পড়শিরা। বাড়ির এক প্রান্তে দড়ির খাটিয়ায় মাথা নিচু করে বসেছিলেন সনাতনের মা পার্বতীদেবী। তিনি বলেন, ‘‘মা হয়ে ছেলের শাস্তি কেই বা চায়। কিন্তু আমার ছেলে যে জঘন্য অপরাধ করেছে তাতে আমি চাই ওর শাস্তিই হোক।’’ পাশাপাশি ওই শিশুর মায়েরও শাস্তি দাবি করেছেন পার্বতীদেবী। সনাতনের ছোট পুত্রবধূ রীনা ঠাকুর বলেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি শিশুটির মা-ও অপরাধে যুক্ত ছিল। ওঁর সহযোগিতা ছাড়া এই কাণ্ড ঘটনো সম্ভব হতো না।’’ তবে অবশেষে সনাতন ধরা পড়ায় খুশি তার পড়শিরা। পড়শি বধূ চিন্তা রায়ের কথায়, ‘‘আমরা উদ্যোগী হয়েছিলাম বাচ্চাটাকে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য। না হলে সনাতনের অপরাধ সামনে আসত না। ও ধরা পড়ায় আমরা খুশি।”

সনাতনের খোঁজে ঝাড়খণ্ডে গিয়েছিল পুরুলিয়া পুলিশের একটি দল। সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন পুরুলিয়া মফস্সল থানার ওসি সাধন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা সনাতনের গতিবিধি অনুসরণ করে তাঁকে এক প্রকার কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন। দু’বার তাঁদের প্রায় হাতের নাগালে এসেও ফসকে গিয়েছিল সনাতন। ঘটনাচক্রে, সনাতনকে নিয়ে যে দিন জেলায় ফেরার ট্রেন ধরেছেন তাঁরই সহকর্মীরা, সেই দিন চাকরি জীবন থেকে অবসর নিলেন সাধনবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE