Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডুবেছে অর্ধেক ধানের জমি, ক্ষতি ২০ কোটির

একই অবস্থা কাজীপাড়ার শাহজামাল শেখ, লাঙলহাটার সুখদেব ধীবরদেরও। তাঁরা জানান, বিঘেখানেক করে জমিতে ঝিঙে, করলা, লাফা-সহ বিভিন্ন সব্জি চাষ করেছিলেন। হাটে হাটে ওই সব সব্জি বিক্রি করেই সংসার চলে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ০২:০৮
Share: Save:

বিঘে সাতেক জমিতে ধার-দেনা করে ধান পুঁতেছিলেন লাভপুরের ব্রাহ্মণপাড়ার মন্টু বাগদি। সার-কীটনাশক দিতেই দিব্য সবুজ হয়ে মাথা তুলেছিল সেই চারা। ধান বেচেই পুজোর বাজার করার আশায় ছিলেন মন্টু। বিঘে পাঁচেক জমিতে ধান লাগিয়ে বাড়ি সারানোর কাজে হাত দেবেন ভেবেছিলেন বলরামপুরের রফিক শেখ। গত চার দিনে কুয়ে নদীর জলে তলিয়ে গিয়েছে সেই স্বপ্ন।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিঘে প্রতি ৪/৫ হাজার টাকা খরচ করে ধান পুঁতেছিলাম। সেই ধান এখন জলের তলায়। জল সরলেও বেশির ভাগ ধান গাছ আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। ফলে তেমন ফলনই হবে না। উঠবে না আবাদী খরচটুকুও। মন্টুর কথায়, ‘‘এখন কী করে ধার শোধ করব, কী করেই বা অন্য দিক সামাল দেব, ভেবে পাচ্ছি না।’’

একই অবস্থা কাজীপাড়ার শাহজামাল শেখ, লাঙলহাটার সুখদেব ধীবরদেরও। তাঁরা জানান, বিঘেখানেক করে জমিতে ঝিঙে, করলা, লাফা-সহ বিভিন্ন সব্জি চাষ করেছিলেন। হাটে হাটে ওই সব সব্জি বিক্রি করেই সংসার চলে। শাহজামালদের কথায়, ‘‘টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই সব্জি এবং গাছে পচন ধরতে শুরু করেছিল। তারপর নদী-বাঁধের জল ঢুকে জমিটাই তলিয়ে গিয়েছে। একটা স্থায়ী রোজগার চলে গেল।’’ কপাল চাপড়াচ্ছেন তাঁরা।

এই দুরবস্থা ওই এলাকার চাষিদের এই প্রথম নয়। প্রায় প্রতি বছর নিয়ম করে কুঁয়ে নদীর জলে তলিয়ে যায় মিরিটি, ব্রাহ্মণপাড়া, বলরামপুর, গলাইচণ্ডী, আবাদ, শীতলগ্রাম, খাঁপুর, ঠিবা-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষি-জমি। মিরিটির যাদব দে, তপন বাগদিরা জানান, অধিকাংশ বছরই এ ভাবে প্রকৃতির হাতে মার খেতে হয়। অথচ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ মেলে না। বিস্তর কসরত করে যদিও মেলে, তা ক্ষতির তুলনায় অনেক কম।

বীরভূম জেলা কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ বার সিউড়ি ১ ও ২, দুবরাজপুর এবং লাভপুর ব্লকে মোট ৮৫১০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে ৩৫টি পঞ্চায়েতের ১৬৯টি মৌজার ৪৭৮৫ হেক্টর জমির চাষে ক্ষতি হয়েছে। যার মধ্য বীজতলা রয়েছে ৮৪৫ হেক্টর জমিতে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মধ্যে ৩৩ শতাংশের নীচে রয়েছে ২৫৮০ এবং ৩৩ শতাংশের উপরে রয়েছে ২২০৫ হেক্টর জমি। যার পুরোটাই লাভপুর ব্লক এলাকায়। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, ১৩, ৫৪৫ মেট্রিক টন ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে। কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, টাকার অঙ্কে শুধু ধানেই মোট ক্ষতির পরিমাণ ১৯ কোটি ৯১ লক্ষ ১১ হাজার ৫০০।

জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা সমীরকুমার ঘোষ জানান, ৩৩ শতাংশের ঊর্ধ্বে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার চাষিরা সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ পাবেন। চাষিদের সাহায্য করার জন্য সরকারের কাছে ২ কোটি ৯৭ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা অনুদান চাওয়া হয়েছে। ধান বাদে অন্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE