ঘটনাস্থল: বাঁকুড়া শহরের আইলাকান্দি এলাকায় এই আবাসনেরই চারটি ফ্ল্যাটে চুরি হয়েছে। নিজস্ব চিত্র
চোরের হানা খোদ ডিএসপি-র ফ্ল্যাটে।
কয়েক সপ্তাহ আগেই দিনে দুপুরে বাঁকুড়ার গন্ধেশ্বরী সেতু সংলগ্ন একটি আবাসনে চুরির হয়েছে। তার তদন্ত চলছে। চুরিও চলছে। মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়া শহরের আইলাকান্দি এলাকায় একটি সরকারি আবাসনে হানা দিল চোরেরা। এক রাতে আবাসনের একাধিক বিল্ডিং-এর চারটি বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ। সেখানে থাকেন বাঁকুড়া পুলিশের ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) আশিস সুব্বা। চুরি হয়েছে তাঁর ফ্ল্যাটেও।
মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ সন্দেহভাজন কারও নাগাল পায়নি। বুধবার আবাসনের ডি১ বিল্ডিং-এর একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা জেলা প্রশাসনের কর্মী সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের তরফে বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিছু সোনার গয়না তাঁর বাড়ি থেকে চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ সুশান্তবাবুর। জানিয়েছেন, ঘটনার রাতে তিনি বাইরে ছিলেন। পড়শিরা ফোনে বিষয়টি জানান। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন ডিএসপি আশিসবাবু। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি অফিসের কাজে তিনি শিলিগুড়ি গিয়েছেন। এ দিন সকালে পড়শিরা দেখেন, ওই ফ্ল্যাটের দরজা খোলা। প্রাথমিক তদন্তে বাঁকুড়া পুলিশ জানতে পেরেছে, ডিএসপির ফ্ল্যাটে ল্যাপটপ, মোবাইল ও ঘড়ি ছিল। দুষ্কৃতীরা সেগুলি নিয়ে যায়নি। বাঁকুড়া সদর থানার এক আধিকারিক বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে তেমন কিছু খোয়া যায়নি। তবে ডিএসপি না ফেরা পর্যন্ত এ বিষয়ে আমরা সঠিক ভাবে কিছু বলতে পারব না।” ঘটনার পরে পুলিশের তরফে ডিএসপির ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ডিএসপি যেখানে থাকেন, তার পাশের বিল্ডিং-এর একটি ফ্ল্যাটেও হানা দেয় চোরেরা। আবাসিকেরা জানান, সেখানে কৃষি দফতরের এক আধিকারিক থাকেন। সম্প্রতি তিনি স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়েছেন। তাঁর পড়শি সোমা নন্দী বলেন, “সকালে হাঁটতে বেরোনোর সময়েই দেখেছিলাম মূল দরজাটা খোলা। তখন বুঝতে পারিনি। ফেরার পরে পাশের ফ্ল্যাটে চোখ পড়ে। দেখি দরজা খোলা। উঁকি দিয়ে দেখি, ভিতরে সব লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে রয়েছে।”
অন্য একটি বিল্ডিং-এর দু’টি ফ্ল্যাটেও চুরি হয়েছে। আবাসনের প্রতি তলায় চারটি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই বিল্ডিং-এর বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, চুরি করে বেরনোর সময়ে দুষ্কৃতীরা ওই তলার অন্য তিনটি ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে বেঁধে দিয়ে গিয়েছিল। ওই বিল্ডিং-এ চুরি হয়েছে এমন একটি ফ্ল্যাটের পড়শি বধূ বর্নালি রায় বলেন, “উপরের তলার একজন সকালে দরজায় ধাক্কা মেরে ঘুম ভাঙিয়ে আমাদের তোলেন। আমাদের দরজাগুলি বাইরে থেকে বিছানার চাদর দিয়ে বাঁধা ছিল। তিনিই খুলে দেন।’’
এই ঘটনার পরে আবাসনের বাসিন্দারা নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন। ওই সরকারি আবাসনে কমবেশি পঞ্চাশটি পরিবারের বাস। বাসিন্দাদের অনেকে পনেরো বছর, কেউ বা বছর দশেক ধরে ওখানেই রয়েছেন। তাঁদের দাবি, আগে কখনও এমনটা ঘটেনি। এ দিন ওই আবাসনে গিয়ে দেখা গেল, অনেক বাসিন্দা ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এসে চুরি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছেন। তাঁদের অনুমান, রাত ১টার পরে চোরেরা এসেছিল। আবাসিক দেবাশিস রায় বলেন, “অদ্ভুত ব্যাপার! বিভিন্ন বিল্ডিং-এ ঢুকে চারটি ফ্ল্যাটে তালা ভেঙে চুরি করে চলে গেল দুষ্কৃতীরা, আর কেউ টুঁ শব্দটিও পেল না।’’
আবাসনের বাসিন্দা লালমোহন বীর, দীপক দাসরা জানান, আবাসিকেরাই টাকা দিয়ে নিরাপত্তা কর্মী রেখেছেন। ঘটনার সময়ে তাঁরা কী করছিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ দিন ওই আবাসনে গিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীদের দেখা মেলেনি। লালমোহনবাবু, দীপকবাবুদের কথায়, “এমনটা হবে কখনও ভাবিনি। খুব ভয়ে ভয়ে রয়েছি। আমরা চাই পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy