দিনভর ঘরে থেকে সন্ধ্যা নাগাদ খাঁচায় বন্দি হল বাঘ। বুধবার এই বাঘবন্দি খেলা ঘিরে শোরগোল পড়ে যায় ঝালদা বনাঞ্চলের সীমানা থেকে কিছুটা দূরে সুবর্ণরেখার পাড়ে ঝাড়খণ্ডে সিলি এলাকার মাড়দু গ্রামে। এ দিন ভোরে ওই গ্রামের এক গৃহস্থের ঘরে বাঘ ঢুকেছে বলে খবর ছড়ায়। বাঘ দেখতে ভিড় জমান আশপাশের গ্রাম থেকে আসা কৌতুহলীরা। ভিড় সামলাতে পৌঁছয় পুলিশ। দফায় দফায় বৃষ্টির মাঝে সন্ধ্যা পৌনে ছ’টা নাগাদ বাঘটিকে খাঁচা বন্দি করতে সক্ষম হন দুই রাজ্যের বনকর্মীরা।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) পরিতোষ উপাধ্যায় জানান, বাঘটি রয়্যাল বেঙ্গল। তাকে নিরাপদে উদ্ধার করা গিয়েছে। আপাতত বাঘটিকে পলামুর ব্যাঘ্র প্রকল্পে রাখা হবে।
এ দিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ঘরের দরজা খুলতেই বাঘটি ভিতরে ঢুকে পড়ে বলে দাবি মাড়দু গ্রামের পুরন্দর মাহাতোর। তিনি বলেন, “গবাদি পশুগুলিকে ছাড়তে উঠেছিলাম। দরজা খুলতেই আচমকা ঘরে ঢোকে বাঘ। ভিতরের ঘরে আমার মেয়ে ও আমাদের এক আত্মীয়ের মেয়ে শুয়েছিল। জীবন বাজি রেখে কোনও রকমে ওদের নিয়ে বেরিয়ে আসি।” এরপর এক পড়শির কাছ থেকে তালা চেয়ে নিজের বাড়ির দরজা বন্ধ করেন পুরন্দর। ততক্ষণে চিৎকার শুনে কয়েক জন জড়ো হন। খবর যায় বন দফতরে।
পুরন্দরের মেয়ে সোনিকার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তার কথায়, “চোখে না দেখলেও বাঘের গর্জন স্পষ্ট শুনেছি। বরাত জোরে প্রাণ বেঁচেছে। যেন পুনর্জন্ম হল।”
কোন পথ দিয়ে বাঘ গ্রামে ঢুকেছিল, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি বন দফতর। তবে ঝাড়খণ্ডের বনকর্তাদের অনুমান, দলমা পাহাড়ের জঙ্গল হয়ে বাঘটি এসে থাকতে পারে। তাকে খাঁচাবন্দি করতে পলামু থেকে ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এসেছিলেন। আনা হয়েছিল বাঘ ধরার বিশেষ গাড়ি। সেই গাড়ির সঙ্গে থাকা খাঁচাতেই বাঘ ধরা পড়ে। ঘুমপাড়ানি গুলি থেকে অন্যান্য প্রস্তুতিও ছিল বলে জানাচ্ছে বন দফতর।
বাঘ দেখতে আসা লোকজনদের মধ্যে মাঘা গ্রামের নিতাই মাহাতো, আনন্দ পরামানিকদের কথায়, “তাকে এক ঝলক দেখব বলে বৃষ্টিতে ভিজেও এসেছিলাম। কিন্তু খাঁচা ঢেকে দেওয়ায় বাঘ দেখতে পাইনি। তবে এই প্রথম কাছ থেকে বাঘের গর্জন শোনার সুযোগ হল। এটাও কম কী।”
বাঘিনি জ়িনতের পরে মাস কয়েক আগে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান-সহ কয়েকটি বনাঞ্চলের জঙ্গলে একটি বাঘ ঘোরাঘুরি করছে বলে খবর মেলে। এ কি সেই বাঘ? স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেনি বন দফতর। রাঁচী বন বিভাগের ডিএফও শ্রীকান্ত ভার্মা বলেন, “এ নিয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত নই। নমুনা সংগ্রহের পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার থাকে। সেই প্রক্রিয়া মিটলে স্পষ্ট ভাবে সব কিছু জানা যাবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)