Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

হাতে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি, মেলেনি বাড়ির টাকা

জাহিমা বিবি বছর পঁয়ত্রিশ আগে স্বামীকে হারান। স্বামী শেখ হানিফ ছিলেন প্রান্তিক চাষি। তাঁদের চার ছেলে, ৬ মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে জমিজমা অধিকাংশই বিক্রি হয়ে যায়।

ভগ্নপ্রায়: জীর্ণ ঘরের সামনে জাহিমা বিবি। বলাইচণ্ডীতে। নিজস্ব চিত্র

ভগ্নপ্রায়: জীর্ণ ঘরের সামনে জাহিমা বিবি। বলাইচণ্ডীতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

মাসচারেক আগে তাঁর হাতে পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাক্ষরিত বাড়ি তৈরির অনুদান বরাদ্দের চিঠি। কিন্তু অভিযোগ, এখনও তিনি পাননি কোনও টাকা। সেই চিঠি হাতে প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেও সুরাহা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সহায় সম্বলহীন স্বামীহারা এক মহিলা। জীর্ণ বাড়িতে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। সাঁইথিয়ার ফুলুর পঞ্চায়েতের বলাইচণ্ডী গ্রামের ঘটনা।

জাহিমা বিবি বছর পঁয়ত্রিশ আগে স্বামীকে হারান। স্বামী শেখ হানিফ ছিলেন প্রান্তিক চাষি। তাঁদের চার ছেলে, ৬ মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে জমিজমা অধিকাংশই বিক্রি হয়ে যায়। এখন এক মেয়েকে নিয়ে জীর্ণ টিনের চালের বাড়িতে থাকেন তিনি। কার্যত পরের সাহায্য দিন কাটে তাঁদের। জাহিমা জানান, বছরখানেক আগে সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের ‘অসহায় সংখ্যালঘু মহিলা আবাসন প্রকল্পে’ বাড়ির অনুদানের জন্য আবেদন করেন।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ওই প্রকল্পে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সহায়-সম্বলহীন স্বামীহারা মহিলারা অনুদান পাওয়ার যোগ্য। সে জন্য বাড়ি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার কাগজ, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবইয়ের প্রতিলিপি-সহ অন্যান্য নথিপত্র দিয়ে ব্লক অফিসে আবেদন করতে হয়। ব্লক অফিসের তরফে আবেদনপত্র খতিয়ে দেখার পরে তিন দফায় উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ লক্ষ ২০ টাকা দেওয়া হয়। প্রতি ক্ষেত্রে বরাদ্দ টাকা যথাযথ কাজে লাগানো হয়েছে কিনা, সরেজমিনে তা দেখার পর পরের দফার টাকা বরাদ্দ করা হয়।

প্রশাসনেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধি বা এলাকার শাসকদলের নেতারাই উপভোক্তা নির্বাচন করে নথি-সহ আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেন ব্লক অফিসে। সেই আবেদনপত্রের ভিত্তিতেই অনুদান বরাদ্দ করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই মতো ওই বৃদ্ধা বছরখানেক আগে শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বের মাধ্যমে কাগজপত্র জমা দেন। ব্লক অফিসের কর্মীরা তাঁর বাড়ি পরিদর্শন করে যান। লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্লক অফিস থেকে মুখ্যমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত অনুদান বরাদ্দের চিঠিও পৌঁছে যায় তাঁর বাড়িতে। চিঠিতে লেখা ছিল— ‘অসহায় সংখ্যালঘু মহিলাদের আবাসন প্রকল্পে আপনাকে এক জন উপভোক্তা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরে ও আপনাকে আপনার নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি বিত্ত প্রদান করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’

তার পর থেকেই ওই চিঠি আর পাসবই হাতে ব্যাঙ্ক, পঞ্চায়েত, ব্লক অফিসে ঘুরেছেন বছর পঁয়ষট্টির ওই বৃদ্ধা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েতে গেলে ব্লক অফিসে যেতে বলা হয়। ব্লক অফিস থেকে ব্যাঙ্কে যেতে বলা হয়। শাসকদলের নেতারা কথা কানে তোলেন না। তাই ভাঙা বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। বাড়ির যা অবস্থা তাতে যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে।’’

ফুলুর পঞ্চায়েতের প্রধান লাভলি বিবি বলেন, ‘‘ওই আবাসন প্রকল্পের ব্যাপারটি পঞ্চায়েতের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। তাই কিছু বলতে পারব না।’’

ঘটনাচক্রে ওই পঞ্চায়েত এলাকারই বাসিন্দা তৃণমূলের সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান। দায় এড়িয়েছেন তিনিও। তার সাফাই, ‘‘ওটা ব্লকের ব্যাপার। তাই কিছু বলতে পারব না।’’

সাঁইথিয়া ব্লকের বিডিও স্বাতী দত্তমুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sainthia Pradhan Mantri Awas Yojana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE