শ্বশুর, শাশুড়ির পরে এ বার পুত্রবধূ। একই পরিবারের তিন সদস্যের ‘দখলে’ থাকল পঞ্চায়েত প্রধানের কুর্সি। এমনই ঘটল মহম্মদবাজারের হিংলো গ্রাম পঞ্চায়েতে।
ওই পঞ্চায়েতে এ বার প্রধান হলেন তৃণমূলের বিজয়ী প্রার্থী পিয়ালি বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে ওই পদে ছিলেন তাঁর শাশুড়ি সর্বাণীদেবী। পঞ্চায়েতের প্রধান হিসেবে ওই পরিবারের প্রথম সদস্য ছিলেন পিয়ালিদেবীর শ্বশুর ধনকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক ধনকৃষ্ণবাবু টানা চার বার নির্বাচিত হন। দু’বার প্রধান হয়েছিলেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, সংরক্ষিত থাকায় দু’বার ওই পদে বসতে না পারলেও, ক্ষমতার রাশ থেকেছে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের হাতেই। দলীয় সূত্রে খবর, মহম্মদবাজার ব্লকে তৃণমূলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের কাজকর্মে সন্তুষ্ট ছিলেন না এলাকার তফসিলিদের বড় অংশ। মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু হয়ে নির্বাচনের ফলপ্রকাশের সময় তার আঁচও মিলেছে। কিন্তু প্রায় ৭০ শতাংশ আদিবাসী অধ্যুষিত হিংলো পঞ্চায়েতে একটি আসনেও বিরোধীরা দাঁত ফোটাতে পারেনি। ছ’টির মধ্যে ৬টিতেই জিতেছে তৃণমূল।
মহম্মদবাজারের তৃণমূল ব্লক সভাপতি গৌতম মণ্ডল এ নিয়ে বলছেন, ‘‘এলাকায় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সুনাম রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে মানুষের পাশে থাকার প্রচেষ্টা। সিপিএম আমল থেকেই ধনকৃষ্ণবাবু বিরোধী শিবিরে থেকে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করেছেন। তারই ফল এটা।’’ প্রায় একই সুর সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাস মালের কথাতেও। তিনি বলেন, ‘‘দক্ষ সংগঠক ছিলেন ধনকৃষ্ণবাবু। সে জন্য ওই এলাকায় আমরা তেমন ভাবে সংগঠন মজবুত করতে পারিনি। তাঁর পরিবারও সেই ধারা বজায় রাখতে পেরেছে।’’
ধনকৃষ্ণবাবুর ছেলে কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েতের কর্মী। তিনি বলেন, ‘‘এর কারণ সব সময় মানুষের পাশে থাকা। বাবা ১৯৯২ সালে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে এই পঞ্চায়েতের প্রধান হন। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল গঠনের পরে ওই দলের প্রতীকে জিতে ফের ওই আসনে বসেন। ২০১১ সালে তাঁর মৃত্যু পরে এলাকার মানুষের ইচ্ছায় মা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জিতে প্রধান হন। এ বার হলেন আমার স্ত্রী।’’
পিয়ালিদেবীর কথায়, ‘‘আমার শাশুড়ি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে কর্মরত। তিনি অবসর নিতে চলেছেন। ছুটি পেতে সমস্যা হবে। তাই আমাকে প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। পরিবারের সুনাম বজায় রাখার চেষ্টা করবো। মানুষের পাশে থাকব। মহিলাদের স্বনির্ভর করার উপরে জোর দেব।’’ এমন চান সর্বাণীদেবীও।