Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মন্দির চত্বরে স্কুল, নেই মিড-ডে মিল

মন্দির চত্বরেই স্কুল। তাই মন্দির কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞায় চালুই করা যায়নি মিড-ডে মিল। রামপুরহাট শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে হিন্দু মিলন মন্দিরের ভবনে থাকা শ্রী প্রণবানন্দ আদর্শ বিদ্যালয় নামের ওই প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা তাই মিড-ডে মিল থেকে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছে।

খাদ্যের এই অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে রামপুরহাটের স্কুলটির পড়ুয়ারা। —ফাইল চিত্র।

খাদ্যের এই অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে রামপুরহাটের স্কুলটির পড়ুয়ারা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৫ ০০:২৭
Share: Save:

মন্দির চত্বরেই স্কুল। তাই মন্দির কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞায় চালুই করা যায়নি মিড-ডে মিল। রামপুরহাট শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে হিন্দু মিলন মন্দিরের ভবনে থাকা শ্রী প্রণবানন্দ আদর্শ বিদ্যালয় নামের ওই প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা তাই মিড-ডে মিল থেকে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। সম্প্রতি ওই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ ওই স্কুল পরিদর্শন করে আসার পরে স্কুলটি মিড-ডে মিল চালু না করায় অন্যত্র স্থানান্তর করা হতে পারে বলে অভিভাবকদের একাংশের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এই আশঙ্কায় বুধবার তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে স্কুল সরানো যাবে না বলে দাবি জানিয়ে এলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে তাঁরা গণস্বাক্ষরিত স্মারকলিপি জমা দেন। তবে রাজাবাবুর আশ্বাস, ‘‘আমরা ওই স্কুলে মিড-ডে মিল চালু করতে চাই। বিষয়টি আলোচনার স্তরে রয়েছে। তবে স্কুল সরানোর কোনও পরিকল্পনা নেই।’’

রামপুরহাট পশ্চিম চক্রের অধীনে ৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে শুধু মাত্র শ্রী শ্রী প্রণবানন্দ আদর্শ বিদ্যালয় ছাড়া বাকি ৯১টি স্কুলে দীর্ঘদিন থেকে মিড-ডে মিল চালু আছে। ওই চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অরুণকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই স্কুলে এ বার মিড-ডে মিল চালু করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সে জন্য আলাপ আলোচনা চলছে।’’

এই স্কুলে কেন মিড-ডে মিল চালু করা যায়নি? ১৯৬৪ সালের ওই স্কুলটি এখনও নিজস্ব জায়গার অভাবে হিন্দু মিলন মন্দিরের পাঁচখানা ঘরে চলছে। রামপুরহাট হিন্দু মিলন মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই স্কুলের কাছ থেকে তাঁরা ভাড়া বা ইলেকট্রিক খরচ নেন না। এ দিকে, মন্দির কমিটি স্কুলে মিড-ডে মিল চালু করা যাবে না বলে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই তাঁরা কোনও ভাবে স্কুলে ছোটদের খাওয়ার অনুমতি দিতে পারছেন না। অথচ ওই স্কুলে বর্তমান পড়ুয়া ১৯০ জন । স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা এবং সহ-শিক্ষক নিয়ে মোট শিক্ষকের সংখ্যা পাঁচ জন।

কিন্তু মন্দির কমিটি ওই সিদ্ধান্ত নিলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের স্কুলে মিড-ডে মিল দেওয়া নিয়ম। তাই প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ওই স্কুলের পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খাওয়াতে উদ্যোগী হয়েছেন। তাই একটা স্কুলে কেন এতদিন ধরে মিড-ডে মিল চালু থাকবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ। তিনি নিজে এ ব্যপারে সপ্তাহ খানেক আগে ওই স্কুল পরিদর্শন করে যান। তিনি এ নিয়ে কথা বলার জন্য রামপুরহাট হিন্দু মিলন মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের দেখা পাওয়া যায়নি বলে রাজা ঘোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘যেখানে ভারত সেবা সঙ্ঘের প্রতিনিধিরা সারা বিশ্বে আর্ত পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে, সেখানে একটি স্কুলে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হবে এই কারণে সরকারি প্রকল্পের খাবার থেকে শিশুদের বঞ্চিত করা যায় না। তবে আমরা ওই স্কুলে মিড-ডে মিল চালু করতে উদ্যোগী হয়েছি।’’

অন্যদিকে রামপুরহাট হিন্দু মিলন মন্দিরের সভাপতি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মিড-মিল চালু করার ক্ষেত্রে আমাদের পরিচালন কমিটি প্রথম থেকে আপত্তি জানিয়ে এসেছে। সম্প্রতি আবারও মিড-মিল চালু করার ক্ষেত্রে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হবে বলে মন্দির পরিচালন কমিটি আপত্তির কথা জেলা প্রাথমিক সংসদকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে গিয়েছে।’’

কিন্তু এই বির্তকের মধ্যে স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন কিছু অভিভাবক। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪০ জন অভিভাবক স্কুলে জড়ো হন। তাঁরা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মনীষা হালদারের সঙ্গে দেখা করেন। স্কুল অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে যাওয়ার জন্য আপত্তি জানান। পাশাপাশি তাঁরা জানান, স্কুলে মিড-ডে মিল চালু নেই। সেটা জেনেই অভিভাবকরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের ওই স্কুলে ভর্তি করেছেন। অভিভাবকদের মধ্যে রীতা রায়, বুদ্ধদেব মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা শুনছি স্কুল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু তা হতে দেওয়া যাবে না। স্কুলে ভাল পড়াশোনা হোক, এটাই আমরা চাই। অধিকাংশ অভিভাবক লিখিত ভাবে এসআই এবং জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের সভাপতির কাছে তা জানিয়েছেন।’’ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘স্কুলে মিড-ডে মিল চালুর একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বার দেখা যাক কী হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mid-day meal School Rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE