আহতের শুশ্রূষা।ছবি: শুভ্র মিত্র
বিরোধীরা যখন আকান্ত হওয়ার অভিযোগ তুলছেন, বিষ্ণুপুরে দেখা গেল অন্য ছবি। ব্লক অফিস চত্বরে তৃণমূলের পতাকা হাতে দু’পক্ষের মধ্যে চলল লড়াই। আধলা ইট, লাঠিসোটা হাতে নিয়ে। দেখা গেল কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য এবং পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়কেও।
দলের কর্মীদের অনেকেই বলছেন, মারামারিটা হয়েছে দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে। তবে প্রকাশ্যে তা মানতে নারাজ দু’জনের কেউই। বিধায়ক এবং পুরপ্রধানের বক্তব্য, সিপিএম আর বিজেপি হামলা চালিয়েছে। এ দিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য মনোয়ন জমা নেওয়া শুরু হয় বিষ্ণুপুর ব্লক অফিসে। সময় নির্দিষ্ট ছিল ৩টে পর্যন্ত। চত্বরে জারি ছিল ১৪৪ ধারা। তবে গোড়া থেকেই অফিসের সামনে জটলা দেখা যাচ্ছিল। ঝামেলা শুরু হয় ২টো নাগাদ। পুরসভা থেকে লোকজন সঙ্গে নিয়ে ব্লক অফিসে হাজির হন শ্যামবাবু। ছিলেন তুষারবাবুও। দু’জনেই আগে-পরে ব্লক অফিসের ভিতরে ঢুকে যান।
দলীয় কর্মীদের একাংশের দাবি, বাইরে তুষারবাবুর লোকজন ছিলেন। শ্যামবাবুর লোকজনের সঙ্গে ঝামেলা বাধলে প্রথমে তাঁরা পিছু হটেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ফিরে আসেন। গেট ঠেলে অফিসের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা চলতে থাকে। শুরু হয় ইটবৃষ্টি। খবর পেয়ে বড় বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস। লাঠি নিয়ে তাড়া করে পুলিশ দু’পক্ষকেই সরিয়ে দেয়। ঝামেলা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্লক অফিস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তুষারবাবু। ভিতরে আটকে পড়েছিলেন পুরপ্রধান। বাইরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে পুলিশ তাঁকে বিডিও অফিস থেকে বার করে আনে। ঝামেলায় দু’পক্ষের বেশ কয়েক জন জখম হয়েছেন। বেলশুলিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের বারিশুল গ্রামের সামসুদ্দিন খান নামে একজন চোট পেয়েছেন। তাঁর দাবি, মেয়ের কলেজে পরীক্ষা চলছে। তাঁকে দেখতে ব্লক অফিসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই তাঁর উপরে অনেকে চড়াও হন। সামসুদ্দিন বলেন, ‘‘শ্যামবাবুর লোকজন আমাকে মেরেছে।’’ তবে দলের কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বেলশুলিয়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকেই এ দিন তুষারবাবুর লোকজন এসে জড়ো হয়েছিলেন।
ইট হাতে ছোটাছুটি, পুলিশের টহল। বিষ্ণুপুর ব্লক অফিস চত্বরে সোমবার। ছবি: শুভ্র মিত্র
সমস্ত কিছুর পরে শ্যামবাবু এবং তুষারবাবু দাবি করছেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হয়নি। তাঁরা আলাদা ভাবে বিডিও-র সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তুষারবাবু বলেন, ‘‘সিপিএম আর বিজেপি-র লোকজন এটা করেছে।’’ শাসকদলের পতাকা নিয়ে? শ্যামবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের পতাকা তো বাজারেই কিনতে পাওয়া যায়।’’
বিরোধীরা অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে কটাক্ষ করছেন। বিজেপি-র বিষ্ণুপুর সাংগঠিনক জেলার সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘ওদের নিজেদের মধ্যে মারামারি হচ্ছে শুনে আতঙ্কে আমারাই ওই চত্বর মাড়াইনি আজকে। পুলিশের উপরে আর ভরসা রাখা যাচ্ছে না।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন ঘোষও বলেন, ‘‘এই আশঙ্কাটা আমরা আগেই করেছিলাম। ঘটলও তাই। রড, তলোয়ার— এই সব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরাই যেতে পারিনি।’’ তাঁর কটাক্ষ, উন্নয়নের কাজ ভাল ভাবে করলে বিরোধীদের ভোটে দাঁড়াতে বাধা দিতে হত না।
এ দিন ব্লক অফিসেই কন্যাশ্রীদের প্রশিক্ষণ শিবির হচ্ছিল। ঝামেলার খবর পেয়ে অভিভাবকেরা ছুটে আসেন। ওই এলাকার বাসিন্দারাও ঘটনায় আতঙ্কিত। তাঁদের অনেকেই বলছেন, ‘‘প্রথম দিনেই যদি এটা হয়, তাহলে ভোট পর্যন্ত কী চলবে?’’ ঝামেলা যে হয়েছে, সে কথা মানতে নারাজ ব্লক প্রশাসন। পুলিশও। দিনের শেষে একটি মনোনয়নও জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন বিডিও (বিষ্ণুপুর) জয়িতা চক্রবর্তী। এসডিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস জানান, মঙ্গলবার থেকে ব্লক অফিসের সামনে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে।
অন্য দিকে, পাত্রসায়র থানা এবং ব্লক অফিসের মাঝে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় জখম হয়েছেন ৪ জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy