Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বলরামপুর

কংগ্রেস নেতা খুনে যাবজ্জীবন ৬ জনের

বলরামপুরের এক কংগ্রেস নেতাকে খুন করার দায়ে যাবজ্জীবন হল ছ’জনের। সাজাপ্রাপ্তেরা এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত হলেও শাসকদল তা অস্বীকার করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২০
Share: Save:

বলরামপুরের এক কংগ্রেস নেতাকে খুন করার দায়ে যাবজ্জীবন হল ছ’জনের। সাজাপ্রাপ্তেরা এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত হলেও শাসকদল তা অস্বীকার করেছে। তিন বছর আগে লোকসভা নির্বাচনের পরে পরেই ঘটে যাওয়া ওই খুনের ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল গোটা পুরুলিয়া জেলায়। প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। সেই হত্যা-মামলার রায় ঘোষণা করেন পুরুলিয়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক কে পি শাহ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের ১২ মে বলরামপুরের ইচাডি গ্রামের জঙ্গল থেকে দেউলি গ্রামের বাসিন্দা, কংগ্রেস নেতা জয়ন্ত কুমারের মুন্ডুহীন দেহ মেলে। বস্তাবন্দি অবস্থায় দেহটি গভীর জঙ্গলে পড়েছিল। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক নেপাল মাহাতো জানান, তিনি ওই নির্বাচনে পুরুলিয়া লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ভোটের পরেই গেঁড়ুয়া অঞ্চলের কংগ্রেস সভাপতি জয়ন্তকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মাথা কেটে খুন করা হয়েছিল। পুলিশ মৃতদেহ কংগ্রেস কর্মীদের দেখতে দিচ্ছে না, জোর করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসছে— এই অভিযোগ তুলে পুরুলিয়া শহরে ঢোকার মুখে শিমুলিয়ায় কংগ্রেস কর্মীরা পথ অবরোধ করেন। ওই খবর শুনে পুলিশ নিহতের বৌদিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে পৃথক একটি গাড়িতে মৃতদেহের গাড়ির সঙ্গে পুরুলিয়া পর্যন্ত নিয়ে এসেছিল। দেহের সঙ্গে জয়ন্তর বৌদিকে দেখে কংগ্রেস অবরোধ তুলে নেয়।

সরকারি আইনজীবী পঙ্কজ গোস্বামী জানিয়েছেন, খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে দুর্যোধন পরামানিক, হলধর পরামানিক, কানাই পরামানিক, দয়াল পরামানিক, নিমাই পরামানিক ও বলাই পরামানিককে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত করেছেন বিচারক। আর এক অভিযুক্ত যামিনী পরামানিককে আদালত বেকসুর খালাস করেছে। সাজাপ্রাপ্তেরা বলরামপুরে দেউলি গ্রামেরই বাসিন্দা। যাবজ্জীবনের পাশাপাশি প্রত্যেকের পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা হয়েছে। ঘটনার ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়ায় এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া কারওরই জামিন হয়নি।

নিহত জয়ন্তর বাবা মহাবীর কুমারের দাবি ছিল, তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তদের দু’জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, জয়ন্তর দেহ ইচাডির জঙ্গলে পড়ে রয়েছে। দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ আরও কয়েক জনকে গ্রেফতার করে। তাদের জেরা করে ওই জঙ্গলেই একটি পুকুরের মধ্যে থেকে জয়ন্তর কাটা মুন্ডুর সন্ধান মেলে। একটি ব্যাগের মধ্যে তা পাঁকে পোঁতা ছিল। সেই ব্যাগে কিছু কাগজপত্রও মেলে। জয়ন্তর বাড়ির লোকজন দেহ ও কাটা মুন্ডটি শনাক্ত করেন।

নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘নৃশংস ওই খুনের ঘটনায় অবশেষে জয়ন্তর পরিবার সুবিচার পেল।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, জয়ন্তর বাবা যে ১৫ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, পরবর্তী কালে পুলিশি তদন্তে তাঁদের মধ্যে ১৩ জনের নামই চার্জশিট থেকে বাদ পড়ে। তদন্তে পুলিশ অন্য কয়েক জনের নাম পেয়ে তাদের ধরে। বলরামপুরের কংগ্রেস নেতা ভোলানাথ মাঝি বলেন, ‘‘সাজাপ্রাপ্তেরা সকলেই তৃণমূলের কর্মী। আদালতের রায়ের উপরে আমাদের আস্থা রয়েছে। তবে পুলিশের চার্জশিটে বেশ কয়েক জনের নাম বাদ পড়েছে। তাই আমরা এই মামলার বিচার চেয়ে পুনরায় উচ্চ আদালতে যাব।’’

বলরামপুরের তৃণমূল নেতা সুদীপ মাহাতো বলেন, ‘‘সাজাপ্রাপ্তেরা দলের কোনও পদে নেই। দলের কর্মী বা নেতাও নন।’’ জেলা তৃণমূল শান্তিরাম মাহাতো জানিয়েছেন, তাঁরা দলের সমর্থক হতে পারেন। তবে, খুনের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলেই তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Balarampur Sentenced to life Congress Leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE