Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ওটির যন্ত্রে শর্টসার্কিট, পুড়ল রোগীর পিঠ 

মঙ্গলবার বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের ঘটনা। কী ভাবে সরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটতে পারে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেখ মফিজুল। নিজস্ব চিত্র

বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেখ মফিজুল। নিজস্ব চিত্র

বাসুদেব ঘোষ
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৫৬
Share: Save:

অস্ত্রোপচারের ঠিক আগের মুহূর্তে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রে ঘটল শর্টশার্কিট। অল্পের জন্য প্রাণে বাচঁলেও আগুনে পুড়ে গেল রোগীর পিঠ!

মঙ্গলবার বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের ঘটনা। কী ভাবে সরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটতে পারে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ‘যন্ত্রের উপরে মানুষের হাত নেই’—মন্তব্য করে এই ঘটনার একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বীরভূম জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি। যা জেনে ক্ষুব্ধ রোগীর পরিবারের প্রশ্ন, অপারেশনের আগে কেন প্রয়োজনীয় যন্ত্র পরীক্ষা করা হয়নি? এই ক্ষেত্রে রোগীর প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটলে সে দায় কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিতেন, নাকি নাকি যন্ত্রের ঘাড়েই চাপাতেন? বোলপুর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘আমি ঘটনাটি বিশদে খোঁজ নিয়ে দেখব। কেন এই ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হবে।’’ তদন্ত কমিটি অবশ্য গড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইলামবাজারের শীর্ষা পঞ্চায়েতের শোলা গ্রামের বাসিন্দা শেখ মফিজুল হার্নিয়ার সমস্যা নিয়ে গত শনিবার বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, দ্রুত রোগীর হার্নিয়া অস্ত্রোপচার করতে হবে। সেই মতো মঙ্গলবার অস্ত্রোপচারের দিন ধার্য করা হয়। বছর উনিশের মফিজুলকে এ দিন সকালে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মফিজুলের কোমর থেকে শরীরের নীচের অংশটি অবশ করে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু, অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত বন্ধ করার যন্ত্র ‘ডায়াথার্মি মেশিন’টি চালু করতেই ঘটে বিপত্তি! যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেশিন চালু সঙ্গে সঙ্গে তাতে শর্টসার্কিট হয়ে আগুন ধরে যায়।

আগুনের শিখায় রোগীর পিঠ-সহ দেহের বেশ কিছু অংশ পুড়ে যায় বলে অভিযোগ। তড়িঘড়ি ওই রোগীকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে স্থানান্তরিত করা হয় মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে। এই ঘটনায় জানাজানি হতেই হইচই পড়ে যায় হাসপাতাল চত্বরে। চিকিৎসকেরা পরে জানান, রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচারের ঠিক আগে এমন ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেই দায়ী করেছে রোগীর পরিবার। মফিজুলের জামাইবাবু শেখ রাজেশ বলেন, ‘‘ওটি-র যন্ত্রাংশ পরীক্ষা না-করেই কেন তা ব্যবহার করা হল? আজ যদি আরও বড়সড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেত, তার দায় কারা নিতেন? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।’’

ঘটনার বিষয়ে কোথাও লিখিত অভিযোগ না হলেও পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তীর্থঙ্কর চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘অপারেশন থিয়েটারে এই ঘটনার খবর পেয়েই আমি ওখানে গিয়েছিলাম। ওটি-তে কেন এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে।’’ বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। তবে, যন্ত্রের উপরে মানুষের হাত নেই। হয়তো কোনও ভাবে শর্টসার্কিট হয়েছে। এখন রোগীর শারীরিক অবস্থা ভাল। প্রয়োজন হলে আমরা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরামর্শও নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

OT Hospital Bolpur Sub Divisional Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE