Advertisement
E-Paper

উৎসবের মধ্যেই রক্তে টান জেলায়

একই প্রশ্ন আড়শার রাঙামাটি গ্রামের বাসিন্দা তরুলতা মহাদানিরও। তাঁর হাসপাতালে ভর্তি ছেলের জন্য প্রয়োজন চার প্যাকেট ‘বি’ পজিটিভ রক্তের। তাঁর এক আত্মীয় জানান, কোনও রকমে দু’ প্যাকেট জোগাড় করতে পেরেছি।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২১
টানাটানি: পুরুলিয়ার ব্লাডব্যাঙ্কে এমনই হাল চলছে। নিজস্ব চিত্র

টানাটানি: পুরুলিয়ার ব্লাডব্যাঙ্কে এমনই হাল চলছে। নিজস্ব চিত্র

প্রয়োজন চার ইউনিট ‘এ’ পজিটিভ রক্ত। ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে ঘণ্টাখানেক হত্যে দিয়ে হাতে মিলল দু’ ইউনিট! পুরুলিয়ার জয়পুর থানা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের শাঁকাকুড়ির বাসিন্দা নিমাই মাহাতো অসুস্থ মায়ের জন্য সেই রক্তের প্যাকেট হাতে নিয়ে জানতে চাইলেন, ‘‘আর বাকি রক্ত টা কোথায় পাব?’’

একই প্রশ্ন আড়শার রাঙামাটি গ্রামের বাসিন্দা তরুলতা মহাদানিরও। তাঁর হাসপাতালে ভর্তি ছেলের জন্য প্রয়োজন চার প্যাকেট ‘বি’ পজিটিভ রক্তের। তাঁর এক আত্মীয় জানান, কোনও রকমে দু’ প্যাকেট জোগাড় করতে পেরেছি। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা জানিয়ে দিয়েছেন, রক্তদাতা নিয়ে এলে তবেই তাঁরা রক্ত দেবেন।

উৎসবের মরসুমে কয়েক বছর আগেও এ রাজ্যে রক্তদানের কার্যত হুড়োহুড়ি পড়ে যেতে। এ বার সেই পুজোর আমেজের মধ্যেই পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক রক্তাপ্লতায় ভুগছে। ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মীরা জানাচ্ছেন, রক্তদান শিবির কমে যাওয়াতেই জেলার একমাত্র ব্ল্যাডব্যাঙ্কের এই হাল!

৫৩৬ বেডের পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে প্রতি দিন গড়ে রোগী ভর্তি থাকে এক হাজার থেকে এগারোশো। এ ছাড়া রঘুনাথপুরে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে কোটশিলা, বলরামপুরের বাঁশগড়, নিতুড়িয়ার হাড়মাড্ডি ও হুড়ায়। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। আদ্রায় রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ডিভিশনাল হাসপাতাল। ওই সব হাসপাতালে বহু রোগী ভর্তি থাকেন। বেশ কয়েকটি নার্সিংহোমও রয়েছে। সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রক্তের জন্য ভরসা একমাত্র পুরুলিয়া সদরের ব্লাড ব্যাঙ্কটি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় চারশোর বেশি থ্যালাসেমিয়া রোগী-সহ অন্যান্য রোগীদের জন্য মাসে গড়ে রক্তের চাহিদা থাকে সাড়ে আটশো থেকে নশো ইউনিটের। ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরই গ্রীষ্মে রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। গত গ্রীষ্মের মরসুমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলা পুলিশ বিভিন্ন থানা এলাকায় শিবিরের আয়োজন করে ১৩০০ ইউনিটের বেশি রক্তের ব্যবস্থা করে। তাতে সঙ্কট রোখা গিয়েছিল। কিন্তু উৎসবের মরসুম পড়ার আগে থেকেই রক্তের ভাণ্ডারে টান শুরু হয়েছে।

অগস্ট মাসে জেলার বিভিন্ন শিবির থেকে মিলেছিল ৪৬৮ ইউনিট রক্ত। পরের মাসে তা কিছুটা বেড়ে হয় ৬০৬ ইউনিট। কিন্তু অক্টোবরে ১০ তারিখ পর্যন্ত চারটি শিবির থেকে মিলেছে ১০০ ইউনিট। ব্লাড ব্যাঙ্কের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘চলতি মাসে জেলায় আর মাত্র একটিই শিবির রয়েছে। শুক্রবার মানবাজার ২ ব্লকের বোরোতে ওই শিবির হওয়ার কথা। কিন্তু পুজোর এই মরসুমে বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন এগিয়ে এলে প্রচুর শিবির হতে পারত।’’ সঙ্কট কাটাতে বাধ্য হয়েই ব্লাড ব্যাঙ্ক দ্বারস্থ হয়েছে বাঁকুড়ার। চলতি মাসে বাঁকুড়ার সোনামুখীতে রক্তদানের একটি শিবির রয়েছে। কিন্তু তাতেও সঙ্কট কতটা মিটবে তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা।

পুলিশ শিবির করার সময় যুব তৃণমূলের পক্ষ থেকেও স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাতে গোনা দু’-একটি শিবিরের পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি সুশান্ত মাহাতোর স্বীকারোক্তি, ‘‘নানা কারণে আমরা শিবির করতে পারিনি।’’ ফের তাঁর আশ্বাস, জেলার সমস্ত ব্লক ও পুরএলাকায় ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা শিবির করবেন। আগে বামফ্রন্টের জমানায় ডিওয়াইএফ বছরভর ক্যালেন্ডার করে জেলার বিভিন্ন এলাকায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করত। সংগঠনের জেলা সম্পাদক ত্রিদিব চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘এখন শিবির করতে গেলেই বাধা আসছে। কোথাও স্কুল দেওয়া হচ্ছে না, কোথাও হলঘর পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও কম হলেও রক্তদান শিবির বন্ধ হয়নি।’’

পুরুলিয়া শহরের একটি সংস্থা নিয়মিত শিবিরের আয়োজন করে থাকে। সেই সংস্থার পক্ষে সন্দীপ গোস্বামী বলেন, ‘‘পুজোর ঠিক আগেই আমরা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কেই শিবির করে ৫১ ইউনিট রক্ত দিয়েছি। কালী পুজোর পরে ফের শিবিরের আয়োজন করা হবে।’’

কিন্তু পুরুলিয়া শহরে তো প্রায় ৫০টি পুজো হয়। জেলায় পাঁচশোর বেশি পুজো হয়। বাসিন্দাদের দাবি, ওই পুজো উদ্যোক্তাদের যদি দু’জন করে রক্ত দেন, তাহলেই হাজারের বেশি ইউনিট রক্ত জমে যাবে। রক্তদানও যে উৎসবের একটা দিক, তা কেন ভুলে যাচ্ছে?

Purulia Blood Bank Blood পুরুলিয়া রক্তদান
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy