Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক রাতে খটঙ্গার তিন মন্দিরে চুরি

একই রাতে পাশাপাশি তিনটি গ্রামের গোপাল, কালী ও রঘুনাথ জিউয়ের মন্দিরের দরজার তালা ভেঙে বিগ্রহের গয়না ও নগদ মিলিয়ে প্রায় লাখখানেক টাকার সামগ্রী চুরির ঘটনা ঘটল সিউড়ি ১ ব্লকে।

চাঞ্চল্য: চুরির পরে তদন্তে এল পুলিশ। ভাণ্ডিরবনের গোপাল মন্দিরে। নিজস্ব চিত্র

চাঞ্চল্য: চুরির পরে তদন্তে এল পুলিশ। ভাণ্ডিরবনের গোপাল মন্দিরে। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

একই রাতে পাশাপাশি তিনটি গ্রামের গোপাল, কালী ও রঘুনাথ জিউয়ের মন্দিরের দরজার তালা ভেঙে বিগ্রহের গয়না ও নগদ মিলিয়ে প্রায় লাখখানেক টাকার সামগ্রী চুরির ঘটনা ঘটল সিউড়ি ১ ব্লকে। বুধবার গভীর রাতে সিউড়ি থানার ভাণ্ডিরবন, বীরসিংহপুর ও খটঙ্গা গ্রামের ঘটনা। বৃহস্পতিবার সকালে মন্দিরে চুরির ঘটনা নজরে আসার পরে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়। এলাকায় পুলিশ গেলে বিক্ষোভের মুখে পড়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে সিউড়ি-আমজোড়া রাস্তার ডান দিকেই রয়েছে খটঙ্গা পঞ্চায়েতের ওই তিনটি গ্রাম। তিনটি গ্রামের মন্দির তিনটি কমবেশি এক কিলোমিটারের ব্যবধানে রয়েছে। তার মধ্যে দুটি ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী মন্দির। একটি ভাণ্ডিরবনের গোপাল মন্দির ও অন্যটি বীরসিংহপুরের কালী মন্দির। অপেক্ষাকৃত নবীন খটঙ্গার রঘধুনাথ জিউর মন্দির। বুধবার রাতে তিনটি মন্দিরে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। মন্দিরগুলির একাধিক দরজার তালা ভেঙে বিগ্রহের সোনা-রুপোর বিভিন্ন গয়না ও প্রণামী বাক্স ভেঙে নগদ টাকা, কাঁসর ঘণ্টা নিয়ে চম্পট দেয় বলে অভিযোগ।

ভাণ্ডিরবনে গোপাল মন্দিরের সেবাইত দু’ভাগে বিভক্ত। মাসের ২০ দিন সেবা করেন আনন্দ ঘোষাল। বাকি ১০ দিন করে সেবা করে মন্দির পরিচালন সমিতি। আনন্দ ঘোষাল বলেন, ‘‘অন্য দিনের মতো বুধবার রাত আটটা নাগাদ গোপালকে শয়ান দিয়ে মন্দিরের মোট চারটি দরজায় ছ’টি তালা লাগিয়ে বাড়ি চলে যাই। বৃহস্পতিবার সকালে মন্দিরে ফুল তুলতে এসে গ্রামের এক মহিলা দেখেন মন্দিরের দরজা খোলা। সে খবর জানতেই ছুটে এসে দেখি সব ক’টি দরজার তালা ভাঙা হয়েছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, মন্দিরের নিমকাঠের গোপাল বিগ্রহের গলা থেকে চারটি হার, হাতের বালা, কোমরের বিছে, পায়ের মল, টিপ ইত্যাদি সোনা-রুপোর কোনও
গয়না নেই। প্রণামীর বাক্সও নিয়ে গিয়েছে চোরের দল।

একই বক্তব্য মন্দির পরিচালন কমিটির সুপ্রভাত দাসেরও। এলাকার ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে এমন চুরির ঘটনা মেনে নিতে পারেননি গ্রামের মানুষও। বছর দু’য়েক আগেও গোপাল মন্দিরের চুরি হয়েছিল। সে চুরির কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এ বারও কী কিছু পারবে পুলিশ। একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ ও সন্দিহান হয়ে পড়েছেন গ্রামের মানুষ। খটঙ্গার রঘুনাথ ডিউর মন্দিরে বিগ্রহ নেই। রয়েছে শালগ্রাম শিলা। বুধবার রাতে শীলগ্রাম শিলার উপরে রাখা সোনার ও রুপোর পৈতে এবং কাঁসর ঘণ্টা নিয়ে গিয়েছে চোরেরা।

একই ঘটনা পাশের বীরসিংহপুর গ্রামেও। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দরজার তালা ভেঙে কালীর পাষণ-মূর্তির গা থেকে চোরেরা খুলে নিয়েছে হার, নথ ও একজোড়া পায়ের নুপুর। সেবাইত তুষার মুখোপাধ্যায় ও সাধন সরকাররা বলছেন, ‘‘এ ভাবে চুরি যাওয়া কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। মাত্র এক কিমির মধ্যে কেন পরপর মন্দিরে চুরি হবে।’’ তাঁদের ক্ষোভ বালি কারবারীদের পুষে রাখা কিছু বাইরের লোকের বিরুদ্ধেও। এলাকাবাসীর দাবি, গ্রামের পাশ দিয়েই গিয়েছে ময়ূরাক্ষী। সেখান থেকে বালি তোলার বরাত যাঁরা পেয়েছেন। তাঁরাই কিছু লোককে পুষেছেন। যারা মুখে বেঁধে সন্ধ্যার পর থেকে গোটা এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, পুলিশ
প্রথমে এই বহিরাগতদের এলাকায় ঢোকা বন্ধ করুক।

একই বক্তব্য তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সঞ্জিত রায়েরও। সঞ্জিতবাবু আবার রঘুনাথ ডিউ মন্দিরের সদস্যও। তিনি বলছেন, ‘‘কারণ ছাড়াই মুখ ঢেকে বাইক মোটরবাহিনীর এ ভাবে ঘোরাঘুরি বন্ধের জন্য পুলিশকে জানানো হয়েছে।’’ পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে সঠিক তদন্ত করার। এরপর থেকে মুখ বাঁধা কাউকে দেখতে পেলে তাঁদের ধরে প্রশাসনের হাতে তুলে দিতেও বলেছে। এ জন্য আর্জি পার্টি গড়ে তোলা হবে দু’এক দিনের মধ্যে। বালি কারবারি, বিডিও, বিএলআরও সঙ্গে খটঙ্গা পঞ্চায়েতে আজ বৈঠক রয়েছে। সেখানেও বালি কারবারীদের সতর্ক করা হবে।

এলাকাবাসীর হঁশিয়ারি, এ দিন আর রাস্তা অবরোধের পথে হাঁটিনি। চুরির কিনারা হচ্ছে কিনা দিন কয়েক দেখে ফের আন্দোলনে নামব আমরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Temple Stolen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE