Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পৌষের মেঘে খণ্ডিত গ্রহণ-দর্শন

বৃহস্পতিবার সকালে সূর্যগ্রহণ দেখানোর জন্য ব্রেক থ্রু সায়েন্স সোসাইটি পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর, আদ্রা, কাশীপুর, বান্দোয়ান, দরোডি ও লক্ষ্মণপুরে আয়োজন করেছিল। জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্র বন্দোবস্ত করেছিল স্কুল পড়ুয়া ও সাধারণ মানুষজনের জন্য।

মহাজাগতিক: খণ্ডগ্রাসে মেঘের আচ্ছাদন। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

মহাজাগতিক: খণ্ডগ্রাসে মেঘের আচ্ছাদন। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

শীতের নরম সূর্যকে গ্রাস করতে অসময়ে আকাশে উড়ে এসে জুড়ে রইল মেঘ। তারই ফাঁকে ফাঁকে, খণ্ডে খণ্ডে গ্রহণপর্ব দেখল পুরুলিয়া।

বৃহস্পতিবার সকালে সূর্যগ্রহণ দেখানোর জন্য ব্রেক থ্রু সায়েন্স সোসাইটি পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর, আদ্রা, কাশীপুর, বান্দোয়ান, দরোডি ও লক্ষ্মণপুরে আয়োজন করেছিল। জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্র বন্দোবস্ত করেছিল স্কুল পড়ুয়া ও সাধারণ মানুষজনের জন্য। ব্রেক থ্রু সায়েন্স সোসাইটির জেলা সম্পাদক স্বদেশপ্রিয় মাহাতো বলেন, ‘‘১৯৯৫ সালে পুরুলিয়ার মানুষজন শেষ বার পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখেছিলেন। এই বছর খণ্ডগ্রাস দেখার সুযোগ এসেছিল।’’ তিনি জানান, জেলার বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েক দিন ধরে এই কথা প্রচার করা হয়েছে। খালি চোখে যাতে মানুষ এই দৃশ্য না দেখেন, সে জন্য ১০ টাকা দামে ‘সান ফিল্টার’ বিক্রির ব্যবস্থা ছিল।

সূর্যগ্রহণের খবর আগে থেকে দেখেছিল টিনটিন। ইনকাদের দেশে যথাসময়ে এমন পরিস্থিতি করেছিল, যাতে মনে হয় সূর্য তার কথা শোনে। খেলা ঘুরে গিয়েছিল। ২০১৯ সালেও জেলার অনেক জায়গায় সূর্যগ্রহণের সময়ে কেউ কেউ দাঁতে কুটোটি কাটতে চান না। গ্রহণ নিয়ে এখনও রয়েছে নানা অন্ধ বিশ্বাস। ওই বিজ্ঞান-সংগঠনের সদস্যরা জানাচ্ছেন, এ দিন তাঁদের লক্ষ্য ছিল মানুষজনের চোখ খোলা। বোঝানো, যা হচ্ছে তা একটা মহাজাগতিক ব্যাপারমাত্র। কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ সামনে চলে এসে চোখের আড়াল করে দিচ্ছে সূর্যকে।

এ দিন গ্রহণ দেখতে স্কুলের পড়ুয়াদের উৎসাহ ছিল প্রবল। ১৯৯৫ সালে যখন পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখেছিল পুরুলিয়া, ওই পড়ুয়াদের অনেকে তখনও পৃথিবীর আলো দেখেনি। পুরুলিয়া শহরে জেলা বিজ্ঞানকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, চত্বরে টেলিস্কোপ ঘিরে এক দঙ্গল কিশোর-কিশোরী। চাক্ষুষ করার সুযোগ আসার আগেই পাছে মেঘ চলে আসে, ফুরিয়ে যায় গ্রহণের সময়— তাই সবাই ব্যতিব্যস্ত। জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রের আধিকারিক ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টেলিস্কোপ দিয়ে সাদা বোর্ডে প্রতিফলনের মাধ্যমে এই দৃশ্য দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু আকাশ মেঘে ঢাকা থাকায় দেখার সুযোগ অল্পই মিলেছে।’’

জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রে শিক্ষাসহায়ক সুমন কর্মকার জানান, সকালের দিকটায় কিছুই দেখা যায়নি। বেলা দশটা দশ মিনিটের পরে কিছু ক্ষণের জন্য গ্রহণ দেখা গিয়েছে। গ্রহণ প্রত্যক্ষ করতে আসা পুরুলিয়া শহরের রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সঙ্গীতা চক্রবর্তী, শান্তময়ী গার্লস হাইস্কুলের সুপ্রীতি পরামাণিক, ইপ্সিতা মণ্ডলেরা বলে, ‘‘দারুণ একটা অভিজ্ঞতা। তবে খুব অল্প সময়ের জন্য।’’ কেন্দ্রে একটি বক্তৃতা সভায় এ দিন জগন্নাথ কিশোর কলেজের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক পঙ্কজ সরকার গ্রহণের বিষয়টি বিশদে বোঝান।

আকাশ আচ্ছন্ন থাকলেও কুসংস্কারের মেঘ জীবন থেকে অনেকটাই কাটছে বলে মনে করছেন ব্রেক থ্রু সায়েন্স সোসাইটির জেলা সম্পাদক স্বদেশপ্রিয়বাবু। তিনি বলছেন, ‘‘যে সমস্ত জায়গা আমরা গ্রহণ দেখানোর জন্য নির্বাচন করেছিলাম, সর্বত্র প্রচুর সাধারণ মানুষ এসেছিলেন। এটাই আমাদের সাফল্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Solar Eclipse Winter Weather
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE