কথায়: নোটবাতিলের অভিজ্ঞতা চায়ের আড্ডায়। বাঁকুড়ায়। নিজস্ব চিত্র
ছোট মেয়ের বিয়ের জন্য মুদি দোকানি উত্তম কুণ্ডুর বাড়িতে তখন সাজো সাজো রব। হাতে নগদ হাজার চল্লিশেক টাকা মজুত। এ ছাড়াও ব্যাঙ্কে যা গচ্ছিত টাকা রয়েছে, তাতে বিয়ে বাড়ি উতরে যাবে বলে নিশ্চিত ছিলেন ছাতনার খড়বনার ওই বাসিন্দা। কিন্তু হঠাৎই সব ওলট পালট হয়ে গেল ৮ নভেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোটবন্দি ঘোষণার পরইে। ব্যাঙ্কের টাকা তুলতে না পেরে শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশী, আত্মীয়দের কাছে টাকা ধার করে মেয়ের দিয়েছিলেন তিনি।
নোটবন্দির এক বছর পরেও সে দিনের কথা ভুলতে পারছেন না উত্তমবাবু। তিনি বলছেন, “এক ঘোষণায় বাড়ির উৎসবের আমেজ নিমেষে বদলে গেল উৎকন্ঠায়। হাতে থাকা সব ১০০০ ও ৫০০ টাকার নোট বাতিল হয়ে গিয়েছে! ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের কাছে গিয়ে হাতে পায়ে ধরে, বিয়ের কার্ড দেখিয়েও টাকা পাওয়া যায়নি।” ধার ঋণে জর্জরিত হয়ে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আক্ষেপ আজও ঝরে পড়ছে তাঁর গলায়। তিনি বলেন, “কারও কাছে ধার করলে রাতে ঘুম হয় না আমার। নিজের উপার্জন করে জমানো টাকা থাকা সত্ত্বেও সেই আমাকে ধারই করতে হয়েছিল মেয়ের বিয়ের জন্য।”
খড়বনারই আরেক বাসিন্দা দীনবন্ধু কুণ্ডু ওই সময় বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। নোট বাতিলের পরে মাস চারেক কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল তাঁকে টাকার অভাবে। দীনবন্ধুবাবু বলেন, “নিজের টাকা নিজে তুলব, সেই অধিকারটাও হারিয়ে ফেলেছিলাম। এমন পরিস্থিতিও যে জীবনে আসতে পারে, ভাবতে পারিনি। দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছিল ওই সময়টা।”
নোট বাতিলের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। অথচ সাধারণ মানুষের মন থেকে ভোগান্তির ক্ষত এখনও মিটছে না। মঙ্গলবার বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকানে, অফিস কাছারির আড্ডাতেও ঘুরে ফিরে এসেছে এক বছর আগের সেই স্মৃতি। ‘অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক সাগর রায় বলেন, “প্রায় সাড়ে তিন দশক হল ব্যাঙ্কে চাকরি করছি। এমন পরিস্থিতি কখনও হয়নি। রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল আমাদের। এক দিকে গ্রাহকদের চাপ, অন্যদিকে দফায় দফায় সরকারি নির্দেশ বদল হচ্ছিল। এই দুয়ের মাঝে পড়ে পেষাই হচ্ছিলেন ব্যাঙ্কের কর্মীরা।”
বাঁকুড়া শহরের লালবাজারের যুবক বিপ্লব বরাটের বাবা পেনশনভোগী। ওই টাকাতেই তাঁদের সংসার চলে। তাঁর দাবি, ‘‘নোট বাতিলের পরে দু’মাস বাবা পেনশনের টাকা তুলতেই পারেননি। ওই সময় খুব সমস্যায় পড়েছিলাম আমরা।” বাঁকুড়ার মাচানতলা মোড়ের চায়ের আড্ডায় এ দিন নোট বাতিল নিয়ে আলোচনায় মশগুল ছিলেন অনেকেই। চা দোকানি বুদ্ধদেব দে মোদক বলেন, “নোট বাতিলের পর থেকেই নানা সমস্যা শুরু হল। বাজারে দশ টাকার কয়েন জাল বলে গুজব উঠল। নোটের বদলে খুচরোর জোগান বেড়ে যাওয়াতে ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতা সকলেই অসুবিধায় পড়ছেন। সেই সমস্যা এখনও চলছে।”
বাঁকুড়ার চকবাজারের ব্যবসায়ী কাশীনাথ কুণ্ডুর তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি জানান, বাজারে সেই সময় নতুন ৫০০ টাকার নোট বিশেষ আসেনি। এ দিকে নতুন ২০০০ টাকার নোট সবার হাতে হাতে। অল্প টাকার কিছু জিনিস কিনে ক্রেতারা ২০০০ টাকার নোট ধরানোয় ফাঁপড়ে পড়ে গিয়েছেন তাঁদের মতো ব্যবসায়ীরা।
বাসিন্দাদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন নোটবন্দি করে তিনি দেশের কালো টাকা উদ্ধার করবেন। তাই অসুবিধায় পড়লেও প্রথমে অনেকেই তা সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু আরবিআই-এর রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, লাভ বিশেষ কিছুই হয়নি। তাঁদের আশঙ্কা, ফের না দেশে এমন বিপর্যয় আসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy