Advertisement
E-Paper

চকলেট শুনেই হাজির পুলিশ

আগেই বাজারে বাজারে হানা গিয়ে, সতর্ক করে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বেচাকেনায় লাগাম টানার চেষ্টা করেছিল পুলিশ। এ বার কালীপুজোর রাতে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে পথে নেমে শব্দদৈত্যকে অনেকটাই জব্দ করল পুলিশ। নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে বাঁকুড়া শহরে গ্রেফতার করা হল তিন যুবককে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:২৫
বাঁকুড়ার আকাশে কালীপুজোর রাতে এমনই আলোর নাচন দেখা গেল।

বাঁকুড়ার আকাশে কালীপুজোর রাতে এমনই আলোর নাচন দেখা গেল।

আগেই বাজারে বাজারে হানা গিয়ে, সতর্ক করে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বেচাকেনায় লাগাম টানার চেষ্টা করেছিল পুলিশ। এ বার কালীপুজোর রাতে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে পথে নেমে শব্দদৈত্যকে অনেকটাই জব্দ করল পুলিশ। নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে বাঁকুড়া শহরে গ্রেফতার করা হল তিন যুবককে। পথে পথেও রাতভর মোটরবাইকে, গাড়িতে টহল দিল পুলিশ। পুলিশের এই সক্রিয়তায় বাহবা দিচ্ছেন আমজনতা। তবে রবিবার দেওয়ালির রাতটা কেমন কাটে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গিয়েছে অনেকের মনে।

বস্তুত এতদিন কালীপুজোর রাত হোক, বা মনসাপুজোর রাত— পুলিশকে ফোন করে শব্দবাজি বা সাউন্ডবক্সের দাপাদাপি বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েও বিশেষ কাজ হতো না। এমনই অভিজ্ঞতা অনেকের। কিন্তু এ বার সেই ছবিটা কিছুটা হলেও বদলে গেল বাঁকুড়ায়। শনিবার রাতে ফোনে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ পেয়ে তল্লাশি চালাতে যায় পুলিশ। নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর অভিযোগে বাঁকুড়া শহরের শিখরিয়া পাড়া ও কেওট পাড়া এলাকা থেকে তিন যুবককে গ্রেফতার করে আনে পুলিশ। পরে অবশ্য তাদের ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশের ওই ধরপাকড়েই ওই এলাকায় আর শব্দবাজি বিশেষ ফাটেনি। এমনিতেও জেলার সদর শহরের পথে পথে এ বার পুলিশের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

জেলা পুলিশ সুপার সখেন্দু হীরার কথায়, “শব্দবাজি রুখতে জেলার প্রতিটি থানাই এ বার বিশেষ ভাবে সক্রিয় ছিল। এ নিয়ে জেলা জুড়ে আমরা প্রচার চালিয়ে ছিলাম। মানুষও সচেতন হয়েছেন অনেকটাই।”

বস্তুত, ‘মা কাঁদলেও ছাড়ব না, বাবা কাঁদলেও রেহাই নেই। নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটালে শাস্তি পেতেই হবে’— কালীপুজোর আগের দিন শুক্রবার দিনভর বিষ্ণুপুর শহরের রাজপথ থেকে অলিগলিতে একটি টোটোয় চেপে এ ভাবেই মাইকে সতর্ক করেছিলেন খোদ এসডিপিও লাল্টু হালদার। কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপট এ বার অনেক কম হওয়ার পিছনে ওই হুঁশিয়ারীই কাজ করেছে বলে মনে করছেন অনেকে।

কালীপুজোকে সামনে রেখে চাঁদা শিকারিরা বিষ্ণুপুরের রাস্তায় নেমে দাপাদাপি করছে অভিযোগ পেয়ে পথে নেমেছিল পুলিশ। তাতে কাজ দিয়েছিল। তারপরে পুলিশের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ছিল, কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপাদাপি আটকানো। সে জন্য শনিবার সন্ধ্যা থেকেই বিষ্ণুপুর শহরের বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়। মোটরবাইক নিয়ে দল বেঁধে টহল দিতে দেখা গিয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। পুলিশের মোবাইল ভ্যানও রাতভর সমানে চক্কর কেটেছে।

যদিও শব্দবাজি যে একেবারেই ফাটেনি, এমনটা নয়। কোনও কোনও এলাকায় ছাদ থেকে বা অন্ধকার গলি থেকে ছিটকে এসে সশব্দে ফেটেছে চকলেট, আলুবোম। তবে তা অন্যবারের মতো কান ঝালাপালা করার পর্যায়ে পৌঁছয়নি। মূলত মাঝরাতেই শব্দবাজির আওয়াজে বেশি সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা। এবার যা কার্যত ছিল না বলেই জানাচ্ছেন শহরবাসী।

এ বার নিষিদ্ধ শব্দবাজি যেমন বিক্রিবাটা হতে কম দেখা গিয়েছে, তেমন বেশি বিক্রি হয়েছে তুবড়ি, চড়কি, রংমশাল, ফুলঝুড়ি প্রভৃতি। কোথাও পাড়ার মোড়ে মোড়ে, কোথাও আবার পুজো মণ্ডপের সামনে ওই সব আলোর বাজি নিয়েই ছোট-বড়দের মেতে থাকতে দেখা গিয়েছে। যার ফলে কালীপুজোর রাতেও নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পেরেছেন মানুষজন।

শহরের কৃষ্ণগঞ্জ পোদ্দারপাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রাক্তন সরকারি কর্মী নয়নতারা দে-র কথায়, “কালীপুজো মানেই শব্দবাজির দাপটে রাতের ঘুম সাবাড় হওয়াই নিয়ম ছিল। তবে এ বার অনেক শান্তি পেয়েছি। শব্দবাজি খুব একটা ফাটেনি।’’

একই কথা গোপেশ্বরপল্লির বাসিন্দা তথা বিষ্ণুপুরের জুজুড় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, “এই শহরের কালীপুজোর রাত যে কার্যত এমন নিঃশব্দে কাটবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি।” শহরের স্টেশনরোড এলাকার প্রাক্তন শিক্ষক হরিপ্রসন্ন মিশ্রেরও প্রতিক্রিয়া— শব্দবাজির দাপটে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি হয় কালীপুজোয়। এ বার তাঁরা অনেক শান্তি পেয়েছেন।

বাঁকুড়া শহরেও এ বার শব্দদানবের দাপাদাপি ছিল অন্যবারের তুলনায় অনেক কম। লখ্যাতড়া শ্মশান, পলাশতলা শ্মশানের মতো বড় বড় পুজো কমিটিগুলির পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছিল পুলিশ পিকেট। সাদা পোশাকেও পুলিশ ঘুরেছে শহরে।

শহরের প্রতাপবাগান এলাকার বাসিন্দা তথা বাঁকুড়া মগরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুকেশ পাত্রের কথায়, “কালীপুজোয় শব্দবাজির দাপটে রাতে ঘুমনো দূরের কথা, এলাকায় কান পাতা যায় না। এ বারও শব্দবাজি ফেটেছে। তবে কম। অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছি এ বার।” পাঠকপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়েরও প্রতিক্রিয়া, “শব্দবাজি ও কালীপুজো কার্যত সমার্থক হয়ে গিয়েছিল। এ বার উল্টো ছবি দেখলাম। যারা রাতভর শব্দবাজি ফাটাত, এ বার তাদের অনেককেই রাস্তায় দেখা যায়নি।’’


নিষিদ্ধ শব্দবাজি রুখতে বিষ্ণুপুরের রাস্তায় রাতভর চলল পুলিশের নজরদারি।

এলাকায় নিয়মিত টহল দিয়ে ও প্রচার চালিয়ে শব্দবাজির দাপাদাপি রুখতে পুলিশ এ বার অনেকটাই সফল বলে অভিমত বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপারও। তবে একই ভাবে মাইক ও সাউন্ড বক্সে রাশ টানতেও পুলিশের কড়া মনোভাবের দাবি তুলেছেন তিনি। তবে শহরে মাইক বাজানো নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি বলেই জানাচ্ছেন পুলিশ সুপার।

তাঁর কথায়, “পুজো কমিটিগুলিকে মাইক বাজানো নিয়ে আগেই সতর্ক করা হয়েছে। এর পরেও কোনও এলাকায় জোরে মাইক বাজানো হলে বাসিন্দারা কন্ট্রোলরুমে ফোন করে জানাতে পারেন।” অভিযোগ পেলেই পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলেই আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দৌরাত্ম্যে রাশ টানতে পারলেও বিষ্ণুপুর পুলিশের পরীক্ষা যে একেবারেই শেষ তা নয়। এই শহরে কালী ভাসানের শোভাযাত্রায় ব্যাপক পরিমাণে শব্দবাজি ফাটানোর রীতি রয়েছে। শহরের মানুষের একাংশের কথায়, “কালীপুজোর প্রথমার্ধে পুলিশ বাজিমাৎ করতে পারলেও এখনও দ্বিতীয়ার্ধের মূল খেলাটাই বাকি রয়েছে।”

বিষ্ণুপুরের এসডিপিও-র আশ্বাস, “শহরের মানুষের ঘরে ঘরে ঢুকে আমরা এ বার শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছে। তাঁরা সচেতন হয়েছেন বলেই কালীপুজোর রাতে শব্দবাজি রোখা সম্ভব হয়েছে। ভাসানের দিন পর্যন্ত আমরা সমানে সক্রিয় থাকব। শহরে পুলিশের
টহলও চলবে।”

—নিজস্ব চিত্র

Police Patrolling Sound Pollution Bankura Sound Pollution Reduced
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy