E-Paper

তীর্থের পুণ্য দিতে বাড়িতেই জগদ্ধাত্রী পুজো

ফেলুমণি বহুকাল আগেই গত হয়েছেন। বেঁচে নেই তাঁর পাঁচ সন্তান বৈদ্যনাথ, সতীশচন্দ্র, বংশীধারী, উমাপতি ও আশুতোষ মুখোপাধ্যায়রাও।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৪০
বালিজুড়ি গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবারের জগদ্ধাত্রী।

বালিজুড়ি গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবারের জগদ্ধাত্রী। নিজস্ব চিত্র।

বয়স অনেক হয়েছে। শরীরে আর তেমন শক্তি নেই। কিন্তু, বৃদ্ধা ফেলুমণি মুখোপাধ্যায়ের ইচ্ছে, তীর্থ করে পুণ্য সঞ্চয়ের তিনি জগন্নাথধামে যাবেন। এবং সেটা হেঁটেই। মায়ের এমন ইচ্ছের কথা শুনে মাথায় হাত পাঁচ পুত্রের। তাঁরা কিছুতেই এই বয়সে এত দূরে মা-কে তীর্থে যেতে দিতে রাজি নন। কিন্তু, নাছোড় বৃদ্ধা। বিকল্প উপায় খুঁজতে কূল পুরোহিতের কাছে ছোটেন পরিবারের সদস্যরা। উপায় বের হয়, তীর্থের পুণ্য দিতে বাড়িতেই জগদ্ধাত্রী পুজো করতে হবে।

ফেলুমণি বহুকাল আগেই গত হয়েছেন। বেঁচে নেই তাঁর পাঁচ সন্তান বৈদ্যনাথ, সতীশচন্দ্র, বংশীধারী, উমাপতি ও আশুতোষ মুখোপাধ্যায়রাও। মারা গিয়েছেন নাতি-নাতনিদের অনেকেই। কিন্তু, বাংলা ১৩৪১ সাল (মতান্তরে ১৩৩৮) থেকে শুরু হওয়া সেই জগদ্ধাত্রী পুজো আজও হয়ে চলছে দুবরাজপুরের বালিজুড়ি গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবারে।

মঙ্গলবার পুজো মণ্ডপে বসে এমন পারিবারিক ইতিহাস শোনালেন পরিবারের অন্যতম প্রবীণ সদস্য এবং ফেলুমণির প্রপৌত্র দীপকমণি মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, ধুমধামের সঙ্গে ফেলুমণির পাঁচ সন্তানের বংশধরেরাই বয়ে নিয়ে চলেছেন পারিবারিক ঐতিহ্যকে। নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হয়। এ বার পুজোর দায়িত্বে ফেলুমণির প্রয়াত নাতি অতীন্দ্র মুখোপাধ্যায়দের বংশধরেরা। কিন্তু, অতীন্দ্রের ছেলের পরিবারে আশৌচ থাকায় পুজোর দায়িত্বে ছিলেন মেয়ে অর্পিতা, জামাই রাহুল চক্রবর্তীরা। দীপকমণির কথায়, ‘‘পালা করে এক এক দাদুর বংশধরেরা দায়িত্বে থাকলেও এই কটা দিন পুজো উপলক্ষে সকলেই হাজির হন গ্রামে।’’ একই কথা জানালেন আর এক প্রপৌত্র সৌগত মুখোপাধ্যায়। যিনি কুলটি থেকে গ্রামে এসেছেন।

বালিজুড়ি গ্রামে চট্টোপাধ্যায়দের দুর্গা মন্দির রয়েছে। জগদ্ধাত্রী পুজো হয় সেই মন্দিরেই। কারণ, শতাব্দী প্রাচীন এই দুর্গাপুজোর শরিকদের মধ্যে রয়েছেন মুখোপাধ্যায়রাও। শুধু ইতিহাসে নয়, ‘বাল অর্ক’ অর্থাৎ নবীন সূর্যের লাল রঙের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দেবী জগদ্ধাত্রীর গায়ের লাল রং হওয়ার কথা। এ বার অবশ্য রং কিছুটা হলুদ হয়েছে। সিংহ বাহিনী দেবীর দু’দিকে দুই মুনি। নারদ ও বশিষ্ট।

পরিবারের সদস্যেরা জানান, চার দিন ধরে নয়, এক দিনেই সম্পন্ন হয় দেবীর সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী পুজো। মঙ্গলবার ছিল নবমী তিথি। দশমীর দিন সকালে দেবী বরণ, বিকালে প্রতিমা নিরঞ্জন। নবপত্রিকা আনা, সপ্তমী অষ্টমী থেকে নবমী পুজো, কুমারী পুজো— এ সব করতেই সকাল থেকে রাত গড়িয়ে যায়। এ দিন সেই ব্যস্ততা দেখা গেল। এক দিকে পুজো, যজ্ঞ, চণ্ডীপাঠ চলছে। অন্য দিকে মন্দিরের দাওয়ায় এবং বাড়িতে ভোগের আয়োজনে ব্যস্ত পরিবারের মহিলারা। তাঁরা জানালেন, গ্রামের যমুনা পুকুর থেকে বারি নিয়ে আসার পরে একে একে তিনটি পুজো, রাতে আরতি এবং পর দিন বিসর্জন। এক সঙ্গে ভোগ খাওয়া। সব মিলিয়ে দু’টো দিন কী ভাবে কেটে যায়, কেউ বুঝতেই পারেন না। সকলের সঙ্গে দেখাও হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

dubrajpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy