Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Kurmi Community

কুড়মিরা ঝুঁকে কি ঘাসফুলে, ফলে চর্চা

পুরুলিয়ায় দু’টি পঞ্চায়েত দখলের পাশাপাশি কুড়মি সমাজ সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা দু’শোর বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন, দাবি সমাজের।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রশান্ত পাল 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৩ ০৯:০৭
Share: Save:

জেলার জঙ্গলমহলের যে পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে তাদের প্রার্থীরা নির্ণায়কের ভূমিকায় রয়েছেন, সেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে গ্রামে গ্রামে বৈঠক করবে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। সোমবার এ কথা জানান আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো। এ ছাড়া, আগামী দিনে জাতিসত্তার আন্দোলনে রূপরেখা ঠিক করতে ২৩ জুলাই ঝাড়গ্রামে বৈঠকে বসছে কুড়মিদের বিভিন্ন সংগঠন। সেপ্টেম্বরে তিন রাজ্যে রেল অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে। তবে পুরুলিয়ায় ভোটে তেমন সাফল্য না মেলায় আগামী দিনে কুড়মি সমাজের আন্দোলন কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। কুড়মি-ভোটের সিংহভাগ কি ঘাসফুলের দিকে ঝুঁকল, ভোটের ফলে চলছে চর্চাও।

পুরুলিয়ায় দু’টি পঞ্চায়েত দখলের পাশাপাশি কুড়মি সমাজ সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা দু’শোর বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন, দাবি সমাজের। ১২টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনেও তাঁদের প্রার্থীরা জিতেছেন। অজিত বলেন, “যা ছবি দেখা যাচ্ছে, তাতে বেশ কিছু পঞ্চায়েতে আমরাই নির্ণায়ক শক্তি। ওই পঞ্চায়েতগুলিতে আমরা কী অবস্থান নেব, তার উপরে বোর্ড গঠন নির্ভর করছে।”

উদাহরণ হিসেবে উঠে আসছে পুরুলিয়া ২ ব্লকের আগয়া-নড়রা পঞ্চায়েত। ১৬ আসনের ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূল ৬টি, কুড়মি সমাজ সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ৬টি ও বিজেপি ২টি আসনে জয়ী হয়েছে। আড়শার শিরকাবাদ পঞ্চায়েতেও নির্ণায়কের ভূমিকায় রয়েছে কুড়মি সমাজ সমর্থিত নির্দল। অজিত বলেন, “যে দু’টি পঞ্চায়েত আমাদের দখলে এসেছে, সেখানে এলাকার মানুষের কল্যাণে পঞ্চায়েত কাজ করবে। অন্যত্র আমরা বৈঠক ডাকব। সেখানে ‘নেগাচারী’ সংস্কৃতি সমর্থনকারী মানুষজন যেমন থাকবেন, রাজনৈতিক দলগুলির নেতা বা কর্মী-সমর্থকদেরও আহ্বান জানাব। সকলের সঙ্গে কথা বলে সমর্থনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, ভোটের আগে তৃণমূল-বিজেপি কেউই তাঁদের দাবি নিয়ে কোনও কথা বলেনি। গ্রামের বৈঠকে ‘নেগাচারী’ সংস্কৃতি সমর্থনকারী অন্য দলের মতাদর্শের মানুষজনের কাছে প্রশ্ন থাকবে, জাতিসত্তার দাবিতে তাঁরা কেন কুড়মি সমাজের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকছেন।

সামগ্রিক বিচারে তবে জেলায় ভোটে কুড়মি সমাজের ফল আশানুরূপ হয়নি, পর্যবেক্ষণ রাজনৈতিক শিবিরের। সংগঠনের দাবি, জেলায় তাঁদের জনসংখ্যা ৩০ শতাংশের উপরে। অথচ জয় মিলেছে দু’শোর কিছু বেশি পঞ্চায়েত আসনে। অজিতের ব্যাখ্যা, “আমরা ভোটে না লড়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে বেশ কিছু ব্লকে নেগাচারী সংস্কৃতি সমর্থনকারী নির্দলদের সমর্থন করি। ভোট ঘোষণা থেকে মনোনয়ন জমা, সব কিছু এত দ্রুত ঘটেছিল যে আমরা সাড়ে চারশোর কিছু বেশি আসনে নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করেছিলাম। তার মধ্যে ২১৩টি আসনে জয় মিলেছে। এর মধ্যে সংরক্ষিত আসনও রয়েছে। তবে এই সাফল্য যথেষ্ট।”

কুড়মি ভোটের কত শতাংশ তবে তাদের প্রার্থীরা পেয়েছেন, প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতের তিন স্তরেই কুড়মি সম্প্রদায়ের অনেক প্রার্থী তৃণমূলের হয়ে লড়ে জিতেছেন। অনেক ক্ষেত্রে কুড়মি সমাজ সমর্থিত নির্দলকে হারিয়েছেন তৃণমূলের কুড়মি প্রার্থী। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “পুরুলিয়ার জন্ম হয়েছে ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। জেলার বঙ্গভুক্তির দাবিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। এই ফল প্রমাণ করেছে জাতিভেদের রাজনীতিতে পুরুলিয়ার আস্থা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kurmi Community purulia TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE