Advertisement
০২ মে ২০২৪
Stubble Burning

নাড়া পোড়ানোয় ক্ষতি জমির, জানাতে উদ্যোগ

জেলা কৃষিকর্তাদের একাংশ জানান, বাঁকুড়া জেলা জুড়ে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধান তুলে নেওয়ার পরে নাড়া পোড়ানোর ঘটনা নজরে এসেছে।

বিষ্ণুুপুরের রাধানগর গ্রামে নাড়া পোড়ানো।

বিষ্ণুুপুরের রাধানগর গ্রামে নাড়া পোড়ানো। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১০:০৪
Share: Save:

বাতাসে উড়ছে পোড়া খড়। এলাকা ঢেকে যাচ্ছে ধোঁয়ায়। কুয়াশার সঙ্গে সেই ধোঁয়া মিশে তৈরি করছে ধোঁয়াশা। এ ভাবে জমিতে নাড়া পোড়ানোয় ভয়ঙ্কর দূষণ ছড়াচ্ছে। তা নিয়ে চাষিদের সতর্ক করতে ও নাড়া পোড়া রুখতে শিবির করে ও ট্যাবলোয় প্রচারের মাধ্যমে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য কৃষি দফতর।

জেলা কৃষিকর্তাদের একাংশ জানান, বাঁকুড়া জেলা জুড়ে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধান তুলে নেওয়ার পরে নাড়া পোড়ানোর ঘটনা নজরে এসেছে। পরিবেশ দূষণ রুখতে তা বন্ধের দাবি অনেক দিন ধরেই তবে উঠছে। ধান তোলার পরে দ্রুত জমি পরিষ্কার করতে থেকে যাওয়া গাছের গোড়া (নাড়া) আগুনে পুড়িয়ে দেন চাষিদের একাংশ। জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমার ছ’টি ব্লক ও ওন্দা ব্লকে নাড়া পোড়ানোর প্রবণতা সব চেয়ে বেশি জানিয়ে এক কৃষিকর্তা বলেন, “ধান উঠে যাওয়ার পরে ওই ব্লকগুলিতে আলু চাষ শুরু করেন চাষিরা। তা ছাড়া, নাড়া পোড়ালে জমি উর্বর হয় বলে চাষিদের অনেকের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণাও কাজ করে।”

তবে জমি উর্বর হওয়া তো দূরে থাক, নাড়া পোড়ানোর ফলে উল্টে জমির ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয় বলে জানাচ্ছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানান, এতে জমিতে থাকা কৃষি সহায়ক জীবাণু পুড়ে নষ্ট হয়। তখন রাসায়নিক সারও কোনও কাজে লাগে না। নাড়া পোড়ানোর বদলে ধান গাছের গোড়া কেটে জমিতে ছড়িয়ে দেওয়া বা তা পচিয়ে জৈব সার তৈরি করলে সুফল পাবেন চাষিরা।

চাষের জমির ক্ষতির সঙ্গে নাড়া পোড়ানোয় পরিবেশও মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত হয়। পরিবেশবিদেরা জানান, এর ফলে ব্যাপক পরিমাণে কার্বন-ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড তৈরি হয়। তৈরি হয় মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্যাসও, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের ভূগোলের শিক্ষক সুব্রত পানের কথায়, “হরিয়ানার মতো কয়েকটি রাজ্যে কৃষিজমিতে নাড়া পোড়ানোর ফলে লাগোয়া দিল্লির বিভিন্ন এলাকা কার্যত গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। শীতে এমনিতেই বাতাস ভারী হওয়ায় বাতাসে দূষক কণা ঘুরতে থাকে। কুয়াশার সঙ্গে পোড়ানো নাড়ার ধোঁয়া এক হয়ে জমাট বেঁধে বাতাসে ঘুরতে থাকে। ইতিমধ্যে দেশ জুড়ে দূষণ মাত্রা ছাড়িয়েছে। অবিলম্বে নাড়া পোড়ানো বন্ধ না করলে আরও বড় ক্ষতি হবে।”

বাঁকুড়ার উপকৃষি অধিকর্তা নারায়ণচন্দ্র মণ্ডলের দাবি, “জেলায় নাড়া পোড়ানোর ঘটনা ধাপে ধাপে কমছে। আমরা এর বিরুদ্ধে চাষিদের সচেতন করতে নানা পদক্ষেপ করছি। সর্বস্তরের চাষিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।” কৃষকসভার জেলা সম্পাদক যদুনাথ রায়ও জানান, “সংগঠনের তরফে নাড়া পোড়ানো বন্ধে চাষিদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। সচেতনতাই এই ঘটনা রুখতে পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bankura Agriculture Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE