Advertisement
E-Paper

আলো, শব্দে জীব-রহস্য জীবন্ত হচ্ছে

মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেমন ভাবে কাজ করছে, দেহে রক্ত সঞ্চালন কী পদ্ধতিতে চলে— নানা খুঁটিনাটি বিষয়ের কৌতূহল মিটে যাচ্ছে এখানে।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০২:০২
কৌতূহল: পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রে। ছবি: সুজিত মাহাতো

কৌতূহল: পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রে। ছবি: সুজিত মাহাতো

উষ্ণতা কমিয়ে কবে ঠান্ডা হল পৃথিবী? কী ভাবেই বা প্রাণের উৎপত্তি হল? বিবর্তনের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে কী ভাবে আধুনিক মানুষ এল? এমনই নানা প্রশ্নের জবাব আকর্ষণীয় ভাবে ছাত্রছাত্রীদের কাছে তুলে ধরতে জীবন বিজ্ঞানের গ্যালারি সাজিয়ে তুলেছে পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্র। মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেমন ভাবে কাজ করছে, দেহে রক্ত সঞ্চালন কী পদ্ধতিতে চলে— নানা খুঁটিনাটি বিষয়ের কৌতূহল মিটে যাচ্ছে এখানে।

বিভিন্ন মডেলের বোতাম ছুঁলেই চোখের সামনে ভেসে উঠছে জীব বিজ্ঞানের নানা রহস্য। শুধু পড়ুয়ারাই নয়, বিজ্ঞান নিয়ে উৎসাহী সাধারণ মানুষজনও এই গ্যালারি ঘুরে অনেক প্রশ্নের জবাব পাবেন বলে দাবি করেছেন জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রের আধিকারিক ঋতব্রত বিশ্বাস।

১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর পুরুলিয়ায় সাহেববাঁধের পাড়ে এই জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্র চালু হয়। তারপরে ধাপে ধাপে ছাত্রছাত্রীদের উপযোগী করে বিজ্ঞান কেন্দ্র সাজিয়ে তোলা হয়। জীবন বিজ্ঞান গ্যালারি ছাড়াও জনপ্রিয় বিজ্ঞান গ্যালারি, পুরুলিয়ার সম্পদ গ্যালারি, শিশুদের গ্যালারিও রয়েছে। এ ছাড়া তারামণ্ডল, সায়েন্স-শো হয় নিয়মিত।

তারই মধ্যে এ বার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে জীবন বিজ্ঞানের গ্যালারি। আলো ও শব্দের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘হিউম্যান ইভ্যালুশন’ গ্যালারি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, দু’লক্ষ আশি হাজার বছর আগের হোমো অ্যাবিলিস থেকে উত্তরণের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে আধুনিক মানুষ কী ভাবে এসেছে।

বিজ্ঞান কেন্দ্রের শিক্ষা সহায়ক কৌশিক ধরের কথায়, ‘‘কয়েক লক্ষ বছর আগে পৃথিবী উত্তপ্ত ছিল। তারপরে ঠান্ডা হয়ে পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার হয়। পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সময়কাল জীব বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে ভাগ করে গঠিত ভূতাত্ত্বিক সময় সারণী ধরে ধরে এই গ্যালারি সাজানো হয়েছে।’’ তিনি জানান, প্রথমে আনুবীক্ষণিক জীবের জন্ম হয়। বিবর্তনের ফলে তা থেকে বড় আকারের জীবের জন্ম হয়েছিল। বারবার বিবর্তনের ফলে এসেছে বর্তমানের মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু। মাঝে প্রকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে কিছু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই সময়টাকেই বলা হয় মেসোজোয়িক সময় সারণী। দেখানো হয়েছে জুরাসিক সময় সারণীর সময়কালও।

কৌশিকবাবুর কথায়, ‘‘ছ’লক্ষ বছর আগে হোমো হাইডেলবারগেনসিস থেকে দু’লক্ষ বছর আগের হোমোইরেক্টাস প্রজাতি থেকে ৩০ হাজার বছর আগের হোমো লিয়ানডারলেনসিস প্রজাতির জয়যাত্রার সময় সারণীটিও উল্লেখযোগ্য। কারণ এই সময়কালে মানুষের বিবর্তনের সভ্যতায় বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। প্রস্তর যুগের কুঁজো হয়ে চলা মানুষ সোজা হয়ে হাঁটতে শিখল, মস্তিষ্কের গঠন বড় হল, শিখল সমাজবদ্ধ হয় চলাফেরা করা।’’

এ ছাড়া দেহের নানা অংশ কী ভাবে কাজ করে তা মডেলের বোতাম টিপে হাতে কলমে পরখ করতে পারবে পড়ুয়ারা। শরীরে রক্ত চলাচলই বা কেমন করে হয়? কী ভাবে কাজ করে নার্ভাস সিস্টেম? সেল টু ডিএনএ মডেলে মানব কোষের মধ্যে অভিনব ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পড়ুয়ারা সঞ্চয় করতে পারবে।

ইতিমধ্যেই কিছু পড়ুয়া এই গ্যালারি ঘুরে দেখেছে। সম্প্রতি আড়শার বোড়াম হাইস্কুল থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা এসেছিল। তাদের মধ্যে আজিজ আনসারি, প্রদীপ গোস্বামী, অবন মাহাতো, সঞ্চিতা মাহাতো, লাবণি মাহাতো বলে, ‘‘জীবন বিজ্ঞান বইয়ের পড়া বিষয় এখানে মডেলের মাধ্যমে দেখতে পেয়ে বেশ ভাল লাগল। জটিল বিষয়ও অনেক সহজ হয়ে উঠেছে।’’

সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সুব্রত রাহা সম্প্রতি ওই গ্যালারি ঘুরে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জীবন বিজ্ঞান নিয়ে যাঁরা পড়ছেন তাঁদের জন্য তো বটেই, যাঁরা বিজ্ঞান ভালবাসেন তাঁদেরও অনেক কৌতুহল মেটাবে এই গ্যালারি।’’

পুরুলিয়ার সাংসদ তথা চিকিৎসক মৃগাঙ্ক মাহাতো বলেন, ‘‘এই গ্যালারি ঘুরে গেলে পড়ুয়াদের কাছে জীবন বিজ্ঞান অনেক সহজ হয়ে যাবে।’’

Human Body Science Gallery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy