Advertisement
E-Paper

জলে টান, সিউড়ি পুরভোট তবু ডুবে সেই জলেই

সিউড়ির সব রাস্তায় পথবাতি জ্বলে? পথে কি মেয়েরা সুরক্ষিত, সব রাস্তাই সাফসুতরো? বৃষ্টি হলে নোংরা জলে ছেয়ে যায় না রাস্তা? সদরে জবরদখল, নাগরিক পরিষেবা? সিউড়ির পুরভোটে এসব নিয়ে কোনও শিবিরেই হল্লা নেই। জেলা সদর শহরে পুরভোটের প্রচারে ইস্যু এবার একটাই। জল!

অরুণ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৭

সিউড়ির সব রাস্তায় পথবাতি জ্বলে? পথে কি মেয়েরা সুরক্ষিত, সব রাস্তাই সাফসুতরো? বৃষ্টি হলে নোংরা জলে ছেয়ে যায় না রাস্তা? সদরে জবরদখল, নাগরিক পরিষেবা? সিউড়ির পুরভোটে এসব নিয়ে কোনও শিবিরেই হল্লা নেই। জেলা সদর শহরে পুরভোটের প্রচারে ইস্যু এবার একটাই। জল!

অভিযোগ, এই জলেই ডুবে আছে সিউড়ির পুরসভা। সম্প্রতি সে নিয়ে তুলকালাম বাধিয়েছেন সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। তাঁর দাবি, জল প্রকল্প এবং বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদানের প্রায় ১০ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা সিউড়ি পুরসভা থেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে সে সব জানিয়ে চিঠি লেখার আগে দলীয় স্তরে কেলেঙ্কারির কথা জানিয়েও যে বিশেষ লাভ হয়নি, তা নিয়েও ক্ষোভ চেপে রাখেননি বিধায়ক। তাঁর অভিযোগের আঙুল তাঁরই দলের পুরবোর্ডে বিরুদ্ধে। সুযোগ বুঝে বিজেপিও জল-খেলেছে। বিরোধীদের সওয়াল জবাব দিতে জল নিয়ে পথে-প্রচারে মেতেছে শাসক দলও।

ঘটনা হল, সিউড়ির প্রায় সব ওয়ার্ডে কম বেশি পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। ফলে পাড়ায় পাড়ায় জল সংগ্রহের জন্য কাজিয়া লেগেই রয়েছে হররোজ। এই ভোট বাজারে তেমন সমস্যার কথাই বলছিলেন সিউড়ির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সীতা বাউড়ি। ‘‘ভোট চাইতে এসে সকলেই ঘুরে ফিরে জলের কথা বলছেন। আসলে, খরার দিন তো সামনেই। জলের সমস্যায় গোটা শহর নাকাল হবে এবারও।’’

একই কথা শোনালেন ৭ ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলপনা ভাণ্ডারী। ‘‘জলের জন্য সকাল থেকে লাইন দিতে হয় অন্য ওয়ার্ডে। ভোট যায়, ভোট আসে। কিন্তু সিউড়ির জল সমস্যার কোনও সমাধান নেই।’’ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের এ বারের নির্দল প্রার্থী ইয়াসিন আখতারও জানালেন, জল সমস্যা রয়েছে। নানা সমস্যায় এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ালেও, জল সমস্যার কোনও সুরাহা করতে পারেননি। জল নিয়ে কমবেশি এমন ক্ষোভের আঁচ মিলল সিউড়ির প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই। সিপিএমের জেলা সম্পাদক রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘স্বপন ঘোষের অভিযোগ সমর্থন করি। তবে, এসবই ওদের নাটক। কারণ, স্বপন ঘোষের পক্ষে দলীয় প্রার্থীদের জেতানোর কোনও ইস্যু নেই। তাই তিনি জলের প্রসঙ্গ তুলে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।’’

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা সেটা বুঝেই এবার দেওয়াল লিখনে পানীয় জলকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। পথে-প্রচারে বেরিয়েও বলছেন সে কথা। জল সমস্যা জায়গা করেছে লিফলেট-ব্যানার-পোস্টারে। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলি, পুরসভার জল-কেলেঙ্কারিকে নানা ভাবে সামনে আনছেন।

বিজেপি যেমন একটি দেওয়াল লিখনে লিখেছে, ‘‘জলের কল নাই, ভোট চাইতে লজ্জা লাগে না!’’ বিজেপির সিউড়ির শহর সম্পাদক উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জল ছাড়া মানুষের চলবে কি করে? শতাব্দী রায় থেকে স্বপনকান্তি জল নিয়ে সকলেই বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে সিউড়িতে জল সমস্যা সেই তিমিরেই। আমরা এককভাবে ক্ষমতায় এলে দ্রুত এ সমস্যা মেটাব।’’

শহরে কংগ্রেসের একটি দেওয়াল লিখনেও রয়েছে জল প্রকল্পের অর্থ নয়ছয়ের ইঙ্গিত। ‘‘জল প্রকল্পে দশ কোটি টাকা কার পকেটে গেল!’’ প্রায় একই ধরনের দেওয়াল লিখন রয়েছে সিপিএমেরও। শাসক দল তৃণমূলের জল নিয়ে কোনও দেওয়াল লিখন না থাকলেও, দল ইস্তেহারে প্রকাশ করেছে জল সমস্যার কথা। তৃণমূল ইস্তেহারে জানিয়েছে, শহরে পানীয় জলের যোগান পর্যাপ্ত নয়। সে জন্য আরও একটি জলপ্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে। কংগ্রেসের সিউড়ি শহর সভাপতি চঞ্চল চট্টোপাধ্যায়, ‘‘পুরবোর্ড পানীয় জলের প্রকল্পের টাকা নয় ছয় করেছে। মানুষ জলের অভাবে হাহাকার করছেন। তৃণমূলকে বয়কট করা উচিত। প্রচারে সে কথাই বলছি।’’

বীরভূমের জেলা সভাধিপতি ও সিউড়ি পুরভোটের দায়িত্ব প্রাপ্ত তৃণমূল নেতা বিকাশ রায় চৌধুরী বলেন, ‘‘এতদিন মিলিজুলি বোর্ড হয়েছে। একক ভাবে বোর্ড গঠন করলে, বোলপুরের মতোই সাজানো পুর এলাকা তৈরি হবে সিউড়িতে। এবং আরও একটি জল প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। সেই পরিকল্পনার কথা জানাতেই পুরভোটের প্রচারে জল প্রকল্পের কথা বার বার বলা হচ্ছে।’’

suri water scam suri drinking water suri municipality election 2015 suri water crisis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy