Advertisement
E-Paper

হোমের বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটল সুমন

ওদের এক এক জনের পিছনে এক একটি মন খারাপ করে দেওয়া ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে। কেউ একেবারে সহায় সম্বলহীন, কেউ আবার জানে না তার মা-বাবার পরিচয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০৩:৪৫
বিষ্ণুপুরের হোমে রবিবার জন্মদিনে কেক কাটছে সুমন।—নিজস্ব চিত্র

বিষ্ণুপুরের হোমে রবিবার জন্মদিনে কেক কাটছে সুমন।—নিজস্ব চিত্র

ওদের এক এক জনের পিছনে এক একটি মন খারাপ করে দেওয়া ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে। কেউ একেবারে সহায় সম্বলহীন, কেউ আবার জানে না তার মা-বাবার পরিচয়। কেউ খুব ছেলেবেলায় বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে আর ফিরতে পারেনি আপনজনের কাছে। বিষ্ণুপুরের সুমঙ্গলম হোমে রবিবার এমনই শিশুদের নিয়ে ঘর থেকেও ‘ঘরছাড়া’ সুমন জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মেতে উঠল।

এ দিন সকাল থেকেই সুমঙ্গলম হোমে ছিল সাজো সাজো রব। প্রায় ৭০ জন খুদে আবাসিক থাকে এই হোমে। এ দিন সকাল থেকে সকলেই ব্যস্ত ছিল সুমনের (নাম পরিবর্তিত) জন্মদিনের অনুষ্ঠান নিয়ে। বেলুন সাজানো থেকে দেওয়ালে রঙিন পেপার সাঁটানো— সবই করেছে ওরা। তাদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছিল সুমনও।

জেলা শিশু কল্যাণ কমিটির সদস্য অপূর্ব মণ্ডল বলেই ফেললেন, “দিন দশেক এসেই হোমের অন্য আবাসিকদের কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছে সুমন। ওর জন্মদিনের এই অনুষ্ঠান হোমের অন্য আবাসিকদের মুখেও হাসি ফোটাল। চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে সত্যিই অভিভূত হয়ে গেলাম।”

এ দিন হোমে এসেছিলে সুমনের বাবা, ঠাকুমা, ঠাকুরদা-সহ আরও অনেক পরিজনেরা। তবে আসেননি সুমনের মা। বাবার দেওয়া নতুন জামা পড়ে সুমন বাবার হাত ধরেই কেক কাটে। হোমের সব বন্ধুদের হাতেও তুলে দেয় সে। কেউ পেন্সিল বক্স, কেউ টেডিবিয়ার উপহার দেয় সুমনকে। সব উপহার বাবার হাতে তুলে দিয়ে যত্ন করে রাখতে বলেছে সে। নতুন স্কুলে ভর্তি হলে ওই সব উপহার সে স্কুলে নিয়ে যেতে চায়। তাই সযত্নে রাখতে হবে বলে বাবাকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে সে।

সুমনের বাবা বলেন, “ওর জন্মদিনে প্রতিবছর বাড়িতে অনুষ্ঠান করি। অনেক বন্ধুবান্ধব আসে। কিন্তু এ বারের অনুষ্ঠান ছিল আলাদা। হোমের আবাসিকদের সঙ্গে নিজের ছেলের জন্মদিন পালন করে অন্যরকম অনুভুতি হল।” শিশু কল্যাণ কমিটি নির্দেশ দিয়েছে, বুধবারের মধ্যেই সুমনকে দুর্গাপুরের ভাল বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করতে হবে।

এই খবর জানার পরে তার হোমের বন্ধুদের অনেকেই হতাশ। হোমে সুমনের এক রুমমেট বলে, “এই কিছুদিন আমরা একসঙ্গে থেকে খুব ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। ও চলে যাবে ভেবে তাই মন খারাপ লাগছে। তবে ও ভাল স্কুলে ভর্তি হচ্ছে জেনে ভালও লাগছে।” এমনই মিশ্র প্রতিক্রিয়া অনেকের মুখেই শোনা গিয়েছে। যা শুনে শিশুকল্যাণ কমিটির সদস্য অপূর্ববাবু বলছেন, “বড়দের মনমালিন্যের জের ছোটদের উপর কতটা নির্মম হয়ে ওঠে তার নজির এই ছেলেটি। বাবা-মায়ের সম্পর্ক ঠিক থাকলে সুমনকে এই হোমে আসতে হতো না। বোর্ডিং স্কুলেও যেতে হতো না।”

জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীলের কথায়, “সুমনকে বেশ কয়েকদিন ধরেই দেখে আসছি। অনেক দিন পরে ওকে এ দিন হাসতে দেখলাম। ছেলেটা মানসিক দিক দিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছিল। ভাল স্কুলে ভর্তি হতে পারবে জেনে ওর মনের অবস্থাটা অনেকটা বদলেছে।”

বাবা-মায়ের বনিবনা হত না বলে মায়ের সঙ্গে সুমনকে বড়জোড়ার বাড়ি থেকে চলে যেতে হয়েছিল মামারবাড়ি হুগলির হরিপালে। বড়জোড়ার ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল ছাড়তে হয়েছিল তাকে। মামারবাড়ি থেকে দেওঘরের একটি অনাথ আশ্রমের স্কুলে তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই ছেলেকে ফিরে পেতে চাইল্ড লাইনের দ্বারস্থ হন সুমনের বাবা। শেষে শনিবার বাঁকুড়া জেলা শিশু কল্যাণ কমিটি সুমনকে বোর্ডিং স্কুলে রেখে পড়াশোনা করানোর নির্দেশ দেয়।

হোম থেকে এ বার সুমনের যাওয়ার পালা। তাকে কবে স্কুলে পাঠানো হবে এ দিন বাবার কাছে, চাইল্ড লাইনের কাকুদের কাছে বারবার জানতে চেয়েছে সুমন। সে পাইলট হতে চায়। মা-বাবার দাম্পত্য ঝামেলার মাঝে পড়ে খেই হারিয়ে ফেলা এক রত্তি শিশু সুমনের মেঘলা আকাশে আলো ফোটে কি না সেই প্রশ্ন এ দিনও ঘুরে বেড়িয়েছে হোমের চার দেওয়ালের মধ্যে।

District Child Welfare Committee orphan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy