সোনামুখীর পুরপ্রধান নিয়ে জট কেটে গিয়েছে আগেই। খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাই কলকাতায় ওই পুরসভার পুরপ্রধান হিসেবে সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেছিলেন। শনিবার জেলায় এসে বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করে গেলেন দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু জট কাটল না বাঁকুড়া পুরসভা নিয়ে। তাই বৈঠক শেষেও উদ্বেগ নিয়েই বাড়ি ফিরলেন বাঁকুড়ার তৃণমূল কাউন্সিলররা।
এ দিন দুপুরে বিষ্ণুপুরের ট্যুরিস্ট লজে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী পুরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শুভেন্দু। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পরিষদীয় সচিব তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরূপ খাঁ, বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি তথা জেলা কোর কমিটির সদস্য অরূপ চক্রবর্তী-সহ অনেকে। তিনটি পুরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে আলাদা করে বৈঠক করেন শুভেন্দু। বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান নিয়ে চমকের অবশ্য কিছু ছিল না। প্রতিবারের মতো এ বারও যে শ্যামবাবু-বুদ্ধবাবু জুটিই পুরসভার শীর্ষে থাকবেন তা কার্যত নিশ্চিত ছিল। হলও তাই। এ নিয়ে পরপর ছ’বার এই পুরসভার পুরপ্রধান হতে যাচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। একই ভাবে বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায় হচ্ছেন ছ’বারের উপপুরপ্রধান। বিষ্ণুপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিক্ষুব্ধ নির্দল কাউন্সিলর রাজীব কান্তি রায় (বাপ্পা) কে দলে ফেরার জন্য আবেদন করতে বলেন শুভেন্দু।
সোনামুখীর পুরপ্রধানের নাম আগেই ঘোষণা করা হলেও এ দিনও উপপুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করতে পারেনি তৃণমূল। দল সূত্রে খবর, বিষয়টি শুভেন্দু সোনামুখীর বিধায়ক দীপালি সাহা ও শ্যামবাবুর উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। পুরপ্রধান সুরজিতের সঙ্গে আলোচনা করে দীপালিদেবী ও শ্যামবাবুকে উপপুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করতে বলেছেন।
এ দিনের বৈঠকে বাঁকুড়া পুরসভার পুরপ্রধানের নাম চূড়ান্ত হবে বলে আশা করেছিলেন কাউন্সিলররা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার এই পুরসভায় পুরপ্রধান হওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক চরমে উঠেছে। এই পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান শম্পা দরিপা ও তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে এ নিয়ে চোরাস্রোত বইছে। দল সূত্রের খবর, পুরসভার বেশির ভাগ তৃণমূল কাউন্সিলর-সহ জেলা নেতাদের একাংশ শম্পাদেবীকে ঠেকাতে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিলীপ অগ্রবালকে পুরপ্রধান করতে চাইছেন। এই পরিস্থিতিতে শম্পাদেবীর আস্থা বলতে রাজ্য নেতৃত্ব।
বৈঠকে উপস্থিত কাউন্সিলর ও তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, এ দিনের বৈঠকে শুভেন্দু বাঁকুড়ার তৃণমূল কাউন্সিলরদের কাছে পুরপ্রধানের নাম প্রস্তাব করতে বলেন। কেউই অবশ্য কারও নাম প্রস্তাব করেননি। বরং শম্পাদেবীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত এই পুরসভার বিদায়ী উপপুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদার-সহ কয়েক জন কাউন্সিলর দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে জানান। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, কারও নাম প্রস্তাবিত না হওয়ায় শুভেন্দু জানান, খাম বন্দি হয়ে রাজ্য থেকে বাঁকুড়ার পুরপ্রধানের নাম জেলায় পাঠানো হবে। আগামী বুধবার এই পুরসভায় বোর্ড গঠন হওয়ার কথা। সেই দিন সকালে খাম খুলে পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে। সবাই যাতে সেই নাম সমর্থন করেন সে বিষয়ে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন শুভেন্দু। বস্তুত কয়েক সপ্তাহ আগে কলকাতায় বৈঠক ডেকে আগেই এ ব্যাপারে বাঁকুড়ার তৃণমূল কাউন্সিলরদের কাছ থেকে কার্যত মুচলেকা নিয়ে রেখেছে দল।
এ দিন বৈঠক শেষে দিলীপ অগ্রবাল, শম্পাদেবীদের আলাদা করে ডেকে কথাও বলেন শুভেন্দু। পর্যবেক্ষক কী বললেন তা নিয়ে অবশ্য কেউই বাইরে কিছু বলতে চাননি। বৈঠক শেষে বেড়িয়ে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের শুভেন্দু বলেন, “বিষ্ণুপুরে শ্যামবাবু পুরপ্রধান ও বুদ্ধবাবু উপপুরপ্রধান হিসেবে শপথ নেবেন। সোনামুখীতে সুরজিৎ পুরপ্রধানের শপথ নেবেন। তবে কে উপপুরপ্রধান হবে সোনামুখীতে তা সিদ্ধান্ত নেবেন জেলা নেতৃত্ব।” বাঁকুড়া পুরসভার বিষয়ে তিনি বলেন, “বাঁকুড়ার কাউন্সিলররা পুরপ্রধান নিয়ে কারও নাম প্রস্তাব করেননি। আমি দলনেত্রীকে বিষয়টি জানাব। তিনিই বাঁকুড়ার পুরপ্রধান ঠিক করবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy