Advertisement
E-Paper

আসতে চলেছে ১১২ কোটি, সিনার্জিতে জানালেন অধিকর্তা

ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে পুরুলিয়া জেলায় ১১২ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনায় শেষ হল দু’দিনের শিল্প সম্মেলন (সিনার্জি)। শনিবার রবীন্দ্রভবনে সিনার্জির শেষে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের অধিকর্তা বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘এই সম্মেলন চলাকালীন আমাদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী কথা বলে গিয়েছেন।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৭
শিল্পদ্যোগীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর-পর্ব।—সুজিত মাহাতো

শিল্পদ্যোগীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর-পর্ব।—সুজিত মাহাতো

ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে পুরুলিয়া জেলায় ১১২ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনায় শেষ হল দু’দিনের শিল্প সম্মেলন (সিনার্জি)।

শনিবার রবীন্দ্রভবনে সিনার্জির শেষে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের অধিকর্তা বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘এই সম্মেলন চলাকালীন আমাদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী কথা বলে গিয়েছেন। এই জেলায় ৩৬টি শিল্পে তাঁরা ১১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। এই বিনিয়োগের ফলে জেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ২০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’’ জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, খাদ্য-নির্ভর, রাসায়নিক, ধাতব শিল্প-সহ ও অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগ আসছে।

জেলা শিল্প দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরি, ছাইয়ের ইট, বোতলবন্দি পানীয় জল, পানীয় জলের বোতল তৈরি, মেডিক্যাল অক্সিজেন, চুনাপাথর গুঁড়ো, ময়দা, গ্র্যানাইট কাটিং এবং পালিশ, রাইস মিল, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পোল্ট্রি ফিড, স্টোনচিপস-সহ মোট ৩৬ ধরনের শিল্প জেলায় আসার প্রস্তাব এসেছে। জেলা শিল্প দফতরের প্রবন্ধক প্রণবকুমার নস্কর বলেন, ‘‘মেডিক্যাল অক্সিজেন তৈরি, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরি-সহ ফুড সেক্টরে কয়েকটি নতুন শিল্প আসতে চলেছে। এটা অবশ্যই সিনার্জির প্রাপ্তি। সরকারও বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকবে। বিভিন্ন ধরনের সুবিধা তাঁদের দেওয়া হবে।’’

রঘুনাথপুরের নিতুড়িয়ায় এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাজে প্রায় সাড়ে ছ’কোটি বিনিয়োগ করতে চলেছেন সমীর মুরারকা। সমীরবাবু বলেন, ‘‘দফতরের কাছ থেকে সহায়তা মিলছে। তা ছাড়া এলাকায় শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই আমরা এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির প্রকল্পে এখানে বিনিয়োগ করছি।’’ রঘুনাথপুর ১ ব্লকে চালকলে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী কিষাণকুমার সারাওগি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এখন বিনিয়োগের পক্ষে। রাজ্য সরকারও সহায়তা করার আশ্বাস দিচ্ছে। তাই আমরা এই শিল্পে উদ্যোগী হয়েছি।’’

তবে শিল্প স্থাপন করতে গিয়ে তাঁদের যে পদ-পদে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আধিকারিকদের সামনে পেয়ে তা তুলে ধরেন শিল্পদ্যোগীরা। সম্মেলনের শেষ দিনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সমস্যা শুনে কিছু ক্ষেত্রে সমাধানের উপায়ও বাতলে দেন আধিকারিকরা। যেমন জেলায় ফ্লাই অ্যাশ থেকে ইট তৈরির প্রকল্পে বিনিয়োগে ইচ্ছুক ভৈরব মল অভিযোগ করেন, ‘‘এই ধরনের ইটে এখনও প্রথম শ্রেণির কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা করে শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। এই শংসাপত্র দেওয়া হলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। না হলে এই শিল্প কোনও ভাবেই লাভজনক হবে না।’’ তাঁর সঙ্গে একমত হন জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীও। মাইক্রোফোন হাতে তিনি জানান, সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রয়েছে। এ ছাড়া ডিভিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায় যখন পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে, তখন প্রচুর পরিমাণে ছাই জমবে। সেই ছাইকে অন্য শিল্পে ব্যবহার করা জরুরি। সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পে ক্লাসঘর তৈরির কাজে ছাই-ইট ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘তবে এখানে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরির প্রয়োজন। পরীক্ষার পর যাতে এই ইটের শংসাপত্র দেওয়ার যায়, তা দেখা হবে।’’ দফতরের অধিকর্তাও আশ্বাস দিয়েছেন, ল্যাবরেটরি খোলার ব্যাপারে তিনি চেষ্টা করবেন।

সরকারি নির্মাণের ক্ষেত্রে পুরুলিয়ার স্টোনচিপসকে বীরভূমের পাঁচামি ও রামপুরহাটের চিপসের সঙ্গে এক সারিতে দেখা হয় না বলে অভিযোগ ছিলই। সেই প্রসঙ্গ তুলে সঞ্জয় কাটারুকা-সহ আরও কয়েকজন প্রস্তাব দেন, পরীক্ষা করে দেখা হোক, পুরুলিয়ার চিপস পাঁচামি-রামপুরহাটের সমতুল কি না। সমতুল হলে সরকারি কাজে ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া হোক। সিমেন্ট প্রস্ততকারকদের পক্ষ থেকে আবার দাবি তোলা হয়, জেলার সিমেন্ট শিল্পগুলির কাছে আইএসআই-এর তকমা রয়েছে। তারপরেও সরকারি কাজে কেন জেলার সিমেন্ট কোম্পানি গুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে না, সে নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন।

এক শিল্পদ্যোগী বলেন, কারখানা গড়তে অনেকটা পরিমাণ তাঁকে জমি কিনতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সরকারি স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ অনেক খরচ হচ্ছে। নতুন বিনিয়োগকারীদের এ ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। জেলাশাসক সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীকে আশ্বাস দেন, এরকম আবেদন এলে প্রশাসন বিবেচনা করবে। শিল্পদ্যোগী উৎসাহ দিতে দফতরের অধিকর্তা প্রস্তাব দেন, ‘‘কোনও বিনিয়োগকারী ২০ একর বা তার বেশি জমিতে শিল্প গড়লে সরকার সেখানে পরিকাঠামো গড়ে দেবে। ওই বিনিয়োগকারীকে দু’কোটি টাকা পুঁজি সহায়তাও করা হবে। এই শিল্প পিপিপি মডেলেও হতে পারে।’’

সম্মেলন শেষে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগী ফেডারেশনের জেলা সম্পাদক মনোজ ফোগলার প্রতিক্রিয়া, ‘‘দু’দিনের এই সিনার্জি আমাদের কাছে অবশ্যই একাধিক সদর্থক বার্তা দিয়েছে। বেশ কিছু আশ্বাস মিলেছে। আমাদের কিছু সমস্যার বিষয় আমরা দফতরের নজরে আনতে পেরেছি। ২০ একরের ইন্ডাস্ট্রি পার্ক একটা পাওনা। প্রশাসনের এই বার্তা বাইরে থাকা আমার পরিচিত শিল্পদ্যোগীদেরও জানাব।’’ পুরুলিয়া চেম্বার অব ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি গোবিন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই সম্মেলন থেকে আশার আলোই দেখছি। যে সমস্ত বিষয় আলোচনা হল তা যদি ফলপ্রসূ হয় তাহলে ভালই হবে।’’

Synergy investment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy