Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শিল্পের আশা জাগিয়ে শুরু ‘সিনার্জি’, খুশি বণিকসভা

একগুচ্ছ ছোট ও মাঝারি শিল্পের সম্ভাবনা দেখিয়ে শুরু হল পুরুলিয়া জেলায় প্রথম শিল্প সম্মেলন (যার পোশাকি নাম ‘সিনার্জি’)। শুক্রবার রবীন্দ্রভবনে ওই সম্মেলনে জেলার শিল্পদ্যোগী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের সামনে পেয়ে রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের অধিকর্তা বিজয় ভারতী জানালেন, এই জেলায় বিভিন্ন ধরনের শিল্পের প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৫
Share: Save:

একগুচ্ছ ছোট ও মাঝারি শিল্পের সম্ভাবনা দেখিয়ে শুরু হল পুরুলিয়া জেলায় প্রথম শিল্প সম্মেলন (যার পোশাকি নাম ‘সিনার্জি’)। শুক্রবার রবীন্দ্রভবনে ওই সম্মেলনে জেলার শিল্পদ্যোগী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের সামনে পেয়ে রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের অধিকর্তা বিজয় ভারতী জানালেন, এই জেলায় বিভিন্ন ধরনের শিল্পের প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁরা উদ্যোগী হলে সরকারকে পাশে পাবেন। যদিও বড় শিল্পপতিদের জন্য সরকার যতটা দরাজ, ছোটদের ক্ষেত্রে তেমনটা নয় কেন, এই অনুযোগ তুলেছেন জেলার শিল্পদ্যোগীরা।

বস্তুত রাজ্যের এই প্রান্তিক জেলায় শিল্পের অগ্রগতির জন্য বামফ্রন্ট সরকার উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারেনি। তৃণমূল সরকারও চেষ্টা চালাচ্ছে বলে বারবার মন্ত্রীরা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ছোট, ক্ষুদ্ধ ও মাঝারি শিল্পদ্যোগীদের এ ভাবে একছাতার তলায় এনে, প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে দেওয়ার এই উদ্যোগ জেলায় এই প্রথম। তাই শিল্পদ্যোগীরা যথেষ্টই উৎসাহী। এ দিন রবীন্দ্রভবনে সম্মেলনে আসা প্রতিনিধিদের চোখেমুখে সে ছবিই দেখা গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ জনের মতো শিল্পদ্যোগী ও তাঁদের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর লোকজনও। কারণ জেলার অনেক গোষ্ঠীই ছোটখাটো ভাবে নজরকাড়া কাজ করছে। তাঁরা এই সম্মেলন থেকে শিল্পস্থাপনের নতুন পথ পেতে পারেন ভেবে, ডাক পেয়েছেন।

সম্মেলনের প্রথম দিনেই দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই জেলায় বিনিয়োগ করলে কী ধরনের সহায়তা সরকার দেবে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীরা পুরুলিয়ায় এলে শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে যে সমস্ত দফতরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়, তা এক জানালা প্রথায় করা হবে বলেও জানানো হয়। সিনার্জির মঞ্চ থেকেই দফতরের অধিকর্তা পুরুলিয়ায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ার কথাও বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছেন। পুরুলিয়া শহর থেকে কিছুটা দূরে রঘুনাথপুর-আসানসোল রাস্তায় ছড়রায় এই পার্ক গড়ে তোলা হবে।

ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে পুরুলিয়ায় কী ধরনের শিল্প গড়ে উঠতে পারে তার একটা রূপরেখা দিয়েছেন বিজয়বাবু। তিনি জানান, পুরুলিয়ায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিশেষত কৃষি নির্ভর খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে উঠতে পারে। এই শিল্পের সঙ্গে স্বনির্ভর দলগুলিকেও যুক্ত করা যেতে পারে। স্কুল পড়ুয়াদের ইউনিফর্ম, রেডিমেড পোশাকেরও ভাল চাহিদা রয়েছে। কলকাতার লাগোয়া বজবজে প্রচুর মানুষ এই শিল্পে যুক্ত। পুরুলিয়াতেও সেলাই শিল্পকে ঘিরে হাব গড়ে তোলা যেতে পারে। জেলা শিল্পকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, সেলাইকে ঘিরে একটি প্রকল্প তাঁরা ইতিমধ্যেই রাজ্যের কাছে পাঠিয়েছে। পুরুলিয়া জেলা শিল্পকেন্দ্রের প্রবন্ধক প্রণবকুমার নস্কর বলেন, ‘‘এই জেলায় অনেক মানুষ সেলাইয়ের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের বাজার চলতি পোশাকের চাহিদার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি প্রকল্প আমরা রাজ্যের কাছে পাঠিয়েছি।’’ অধিকর্তা সবলা প্রকল্পে কিশোরী মেয়েদের প্যাকেটবন্দি পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার কাজ করেও রোজগারের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী তাঁকে জানিয়েছেই, ইতিমধ্যেই জেলার ১১টি ব্লকে ওই কাজ শুরু হয়েছে।

চাকরি জীবনের প্রথম কিছুদিন পুরুলিয়ায় কাটিয়ে যাওয়া বিজয়বাবু বাবুই ঘাসকে ঘিরেও সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন। জমির প্রসঙ্গ তুলতেই জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর দিকে দৃষ্টি বিনিময় করে অধিকর্তা বলেন, ‘‘যেখানে যাই সেখানেই জমির সমস্যার কথা শুনি। কিন্তু জমির সমস্যা এখানে নেই। এখানে ২০ একর জমিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়া হবে।’’ এই জেলার ছেলেমেয়েদের যাতে কর্মসংস্থান হয়, সেই লক্ষ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন অধিকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘জেলাস্তরে উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটা সোসাইটি গড়া হোক।’’ তিনি জেলা শিল্পকেন্দ্রের প্রবন্ধককে সরকারি ভাবে শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের সুযোগ রয়েছে তা সবাইকে জানানোর জন্য প্রতিটি ব্লকে বিজ্ঞাপন দিতে নির্দেশ দেন।

তবে জেলা বণিকসভা-সহ ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পদ্যোগী ফেডারেশন রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে সমর্থন করলেও অনুযোগের সুর শোনা গিয়েছে তাঁদের প্রতিনিধিদের গলায়। পুরুলিয়া চেম্বার অফ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি গোবিন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা যাতে পুরুলিয়ায় আসেন, সে জন্য অন্য রাজ্যে যে সমস্ত সুবিধা দেওয়া হয় তা এখানেও দিতে হবে। এক জায়গা থেকেই যাতে সমস্ত অনুমতি নেওয়ার পদ্ধতিগত কাজ করা যায় সেই ব্যবস্থাও চালু করা দরকার। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র পেতে আসানসোলে যেতে হয়, দমকল দফতরের ছাড়পত্র পেতে দুর্গাপুরে ছুটতে হয়, এই হয়রানি বন্ধ করা দরকার।’’ ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পদ্যোগী ফেডারেশনের জেলা সম্পাদক মনোজ ফোগলা বলেন, ‘‘বড় শিল্প প্রসারণের ক্ষেত্রে সরকার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর পাশে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু ক্ষুদ্র, ছোট বা মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডের তুলনায় এ রাজ্যে বিদ্যুতের মাসুল বেশি। এই বিষয়গুলি সরকারকে দেখতে হবে।’’

বিজয়বাবু বলেন, ‘‘প্রস্তাবগুলি শুনেছি। এ নিয়ে আমরা আলোচনা করব।’’ সম্মেলনে উপস্থিত পুরুলিয়ার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতোর আশ্বাস, সমস্যাগুলি সমাধানের কথা তাঁরা ভাববেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অফিসাররা যাতে মাসে অন্তত একদিন জেলায় আসেন সে চেষ্টা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

medium industry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE